
ছবি: সংগৃহীত।
সন্ধ্যায় সবে বৃষ্টি সেরেছে। রাস্তায় সীমাহীন যানজট। কোথাও জমে আছে হাটু পানি। কিন্তু এরপরও আকাশ গুঢ় গুঢ়। একটু পর পর মেঘের গর্জন নাগরিক মনোযোগ কাড়ছে। প্রকৃতির ভাবখানা এমন যেন এটি শ্রাবণ বর্ষার দিন। বিরতিহীন বৃষ্টি আর হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতিও সেজেছে অমলিন। তবে পঞ্জিকা অনুযায়ী এটি মধ্য এপ্রিল। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাগরে কোন লঘুচাপ নেই, নেই কোন ঘূর্ণি বায়ু। এরপরও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের অধিকাংশ স্থানেই বিরতিহীন বৃষ্টি ঝরেছে।
মঙ্গলবার দুপুর পর শুধুমাত্র রাজধানীতে তিন ঘণ্টায় ৩১ মি.মি. বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সারাদেশের বৃষ্টির পরিসংখ্যান আবহাওয়া অধিদপ্তরের টেবিলে জমা না হওয়ায় জেলার তথ্য সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তারা জানাতে পারেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, বৃষ্টির এই ধারা সহসাই পুরো বন্ধ হচ্ছে না। আগামী ৪-৫ দিন চলবে। তবে এক নাগারে নয়, থেমে থেমে। যা শস্য ও ফসলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে।
রাজধানীতে সময় কিংবা অসময়, বৃষ্টি মানেই নাগরিক জীবনের স্বস্তির সঙ্গে ব্যপক বিভ্রাট। নগরে প্রতি মাসে কোটি টাকা খরচে সড়ক, ফুটপাট, বিভিন্ন সোয়ারেজ লাইন ঠিক করা হয়। কিন্তু বৃষ্টির দিনে সব কিছুই নাগরিকদের মনে অর্থহীন মনে হয়। মঙ্গলবার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চিত্র দেখে এমনটিই মনে হয়েছে। এতে স্বস্তির বৃষ্টি ক্রমেই দুর্র্ভোগে রুপ নেয়।
মিরপুর টেকনিক্যাল মোড়। সময় বিকাল ৪টা। মুষলধারে বৃষ্টি। সড়কে গাড়ির চাপ তেমন নেই বললেই চলে। এরপরও সিগন্যালে জটলা। কারণ বৃষ্টির পানি সড়কের একটি অংশ অনেকটা ডুবিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের রোড ডিভাইডার ও রাস্তা খুড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের মেরামত শেষ হয় না। একটু এগিয়ে যেতেই তাই বিড়ম্বনা চোখে পড়ে। পথচারীরা জানান, মিরপুর সড়কে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের জন্য বিশাল জায়গাজুড়ে গর্ত করা হয়েছে। কল্যানপুরের স্পেশালাইজড হাসপাতালের সামনে থেকে এটি প্রায় টেকনিক্যাল মোড়ে এসে ঠেকেছে। এরফলে সড়কের এক তৃতীয়াংশ দখলে। এরপর সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন দূরপাল্লার গণপরিবহনের স্টান্ডে যত্রতত্র বাসের কারণে রাস্তার বড় একটি অংশ থাকে বেদখল। যার প্রভাবে রাত পর্যন্ত এই সড়কটিতে যানজট লেগে থাকতে পারে। পরে বিকালে শ্যামলী এলাকায় ব্যাপক জলজট দেখা যায়। সড়কে পানির কারণে সাবধানে চলাচল করে যানবহন। একই অবস্থা ছিল শিশুমেলার সামনে। এদিকে সন্ধ্যার পর রাজধানীর বাংলামোটর, কাওরানবাজার, মগবাজার এলাকায় ব্যপক যানজট দেখা গেছে। তীব্র গাড়ির শব্দ ও হর্ণে নাকাল হয়ে পড়ে নগরবাসী।
আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৭ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বুধবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুকের দেওয়া রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার দিবাগত রাত ১টার মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নৌবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া, বজ্র বিদ্যুৎ, ও কোথাও কোথাও শিলা বৃষ্টি পড়তে পারে। যা আগামী ৫ দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
সায়মা ইসলাম