ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৩ ডিগি

১৩ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিপর্যস্ত জনজীবন

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

১৩ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিপর্যস্ত জনজীবন

কুড়িগ্রামে তীব্র শীত ও কুয়াশায় কাহিল মানুষ

ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ নেই। এরপরও ঠান্ডায় জমে যাওয়ার অবস্থা। শুক্রবার ছিল ছুটির দিন। কিন্তু সূর্য বুঁজে থাকা দিনে ঘর থেকে বের হয়নি অধিকাংশ নাগরিক। গত তিন দিনে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১২ ডিগ্রি কমেছে। ব্যবধান কমেছে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রার মধ্যেও। এর সঙ্গে হিমেল হাওয়া ও কুয়াশা প্রকৃতিকে মুড়ে দিয়েছে। রাজধানী ঢাকার শীতের প্রকোপ কমে স্বাভাবিক হতে অন্তত আরও সাত দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

কিন্তু রাজধানীর তাপমাত্রা যা তার থেকে ঢের বেশি শীত উত্তরাঞ্চলে। গরম কিংবা ঠান্ডায় রেকর্ড করা জেলা চুয়াডাঙ্গা ও আশপাশের এলাকার মানুষও নাজেহাল। এর সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট বিভাগের ১৩ জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, তাপমাত্রা বেড়ে আগামী কয়েক দিনে শীতের অনুভূতি কমে আসবে। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, কয়েক দিন শীতের অনুভূতি খানিকটা কম থাকতে পারে। শুক্রবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। ঢাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সব মিলে শীতের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনপদ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জনকণ্ঠকে জানান, রাজধানীর তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবারে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝড়ের মতো হিমেল বাতাসের উপস্থিতিও খানিকটা কম। এর পরও শীতের অনুভূতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেনি। কারণ গত তিন দিনে ঢাকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১২ ডিগ্রি কমেছে। এটি একদিনে ঠিক হবে না। ধীরে ধীরে তাপমাত্রার পারদ উঠতে থাকবে। আশা করা যাচ্ছে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে এই শীতের প্রকোপ কমে আসবে।

এই আবহাওয়াবিদ শীতের প্রকোপ ও কুয়াশার উপস্থিতি কমার পর দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কুয়াশা কেটে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। এর আওতায় থাকতে পারে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ। এ সময় বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সম্ভাবনাও রয়েছে।
সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর এ তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ হলে তা মাঝারি, তাপমাত্রা ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তা তীব্র আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ^বিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান,  শুক্রবার বিকেলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপর থেকে কুয়াশা দূর হয়নি। সন্ধ্যার পর থেকে এই সকল জেলার ওপরে কুয়াশার পরিমাণ আরও ঘন হতে থাকবে। শনিবারও ঢাকা, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলার আকাশ ঘন থেকে খুবই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

প্রায় সারাদিন বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশিভাগ জেলার ওপরে সূর্যের আলো দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ঢাকা বিভাগের দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের জেলাগুলোর ওপরেও সূর্যের আলো দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ কারণে ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-বরিশাল, ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কগুলোর ওপরে ঘন থেকে খুবই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। ফলে আজ রাতে ওই সকল সড়ক ও মহাসড়কে বাস, ট্রাক, মাইক্রো, মোটরসাইকেল চলাচল করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া নৌপথে চলাচলের জন্য কুয়াশা সতর্কতার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানুয়ারির পূর্বাভাসে বলেছে, এ মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে। আবার এ মাসে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে বঙ্গোপসাগরে। দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুয়েকটি মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। দেশের অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৯টার থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, এ সময় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরিণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এ ছাড়া সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি এবং দিনের তাপমাত্রা দেশের পশ্চিমাংশে (১-৩) ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এ ছাড়া দেশের অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনের বেলা শীতের অনুভূতি বিরাজ করতে পারে। শনিবার সকাল ৯টার থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনেরবেলা শীতের অনুভূতি বিরাজ করতে পারে। রবিবার সকাল ৯টার থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরিণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এ সময় সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশের কোথাও কোথাও দিনেরবেলা শীতের অনুভূতি বিরাজ করতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ায় অবস্থা বলা হয়, এ সময়ের শুরুর দিকে দেশের উত্তরাংশে হালকা বৃষ্টিবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
বাগেরহাট ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, পৌষের শীতে কাঁপছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মানুষ। তীব্র শীতে জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। শুক্রবার দুপুরেও সূর্যের দেখা মেলেনি এই জেলায়। তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ বছরের শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন। এই পরিস্থিতি আরও দু-একদিন থাকতে পারে ধারণা আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তীব্র শীতে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন বোরো চাষি, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। অতিরিক্ত শীতে ধানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ধারণা কৃষকদের। তবে শীতে খেজুরের রসের মান ভালো হচ্ছে। মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মো. হারুন অর রশিদ জানান, শুক্রবার বাগেরহাটের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি আনুমানিক দুই থেকে তিন দিন ধরে থাকবে।
বরিশাল ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, উত্তরের কনকনে হাওয়ায় বরিশালের জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার চাঁদরে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দিনভরই সূর্যের দেখা মেলেনি। দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে নেমে যায়। ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ ছিল চরমে। দিনভর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। আবহাওয়ার এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে রাখতে ও থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই বরিশালে ঠান্ডার দাপট বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতির অস্বাভাবিক অবনতি ঘটে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার থেকে পরবর্তী পাঁচদিনে তাপমাত্রার পারদ আরও হ্রাস পেতে পারে। 
কুড়িগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুয়াশায় জবুথবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনপদ। জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শীত জনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে ডায়রিয়ায় বেশ কিছু শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বহির্বিভাগে প্রায় তিন থেকে ৪শ’ রোগী শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুগুলোও শীতের মধ্যে কষ্ট পাচ্ছে। শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে।

দুদিন থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে হিমালয়ের বরফ ছোঁয়া কনকনে বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সূর্যের উত্তাপ না থাকায় হিমেল বাতাসে কমতে থাকে তাপমাত্রার পারদ। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত তীব্র শীত অনুভূত হতে থাকে। ইতোমধ্যে শীত নিবারণে জেলার ৯ উপজেলায় ৪৯ লাখ টাকা ও ১২ হাজার কম্বল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন, তা বিতরণ চলছে।
নোয়াখালী ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, পৌষের কনকনে শীতে যবুথবু নোয়াখালীর বিশ লক্ষাধিক মানুষ। বৃহত্তর নোয়াখালীর কোনো কোনো অঞ্চলে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। যেখানে তাপমাত্রার হিসাবে শৈত্যপ্রবাহ নেই, সেখানেও শীতের প্রকোপ কম নয়। শুক্রবার কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে বঙ্গপসাগরের বুকে জেগে উঠা বিশাল চরাঞ্চল বেষ্টিত এ জেলা। দেখা মেলেনি সূর্যের। শীতের দাপটে জবুথবু জনজীবন। খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের শেষ নেই। হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। বুধবার থেকে বইছে ঠান্ডা বাতাস। কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। শুক্রবার থেকে পদ্মাপারের এই শহরে শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ফলে শীতে কাঁপছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। এ অবস্থায় সরকারিভাবে শীতার্তদের জন্য যে কম্বল বরাদ্দ এসেছে তা খুব অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বৃহস্পতিবার দিনের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বর মাসের শুরুতে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রিতে নেমেছিল। তখন হিমেল হাওয়া ছিল না। এখন আবার কয়েকদিন থেকে কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। এ কারণে তাপমাত্রা বেশি নিচে না নামলেও শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহে নি¤œআয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে।
খড়কুটো জ্বালিয়ে সকাল-সন্ধ্যা শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। জেলার ৯ উপজেলা ও ১৪টি পৌরসভায় কম্বল বরাদ্দ হয়েছে শীতার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য। তবে বেশিরভাগ এলাকায় কম্বল বিতরণ শুরু হয়নি। ফলে শীতে কাঁপছেন মানুষ।
জেলার চারঘাট উপজেলান নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। এবার তাদের জন্য ৩০০ পিস কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। এখনো কম্বল আসেনি। তিনি বলেন, ‘৩০০ পিস কম্বল কার কাছে কীভাবে বিতরণ করব। প্রতিদিনই ৩০০ জনের বেশি মানুষ আসে কম্বলের দাবি নিয়ে। উপজেলায় সরকারিভাবে ২ হাজার ৬০০ কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা পৌঁছায়নি হতদরিদ্র শীতার্তদের মাঝে।

দুই সপ্তাহ আগে কম্বলের বরাদ্দ এলেও তা উপজেলা পরিষদের গুদামেই পড়ে আছে। একই উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ বাসিন্দা পদ্মার নদীর পাড়ে বসবাস করে। একটু বাতাসেই তীব্র শীত অনুভব হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে শুনছি কম্বলের বরাদ্দ এসেছে, কিন্তু এখনো হাতে পাইনি।

রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দীন আল ওয়াদুদ জানান, ‘পুরো জেলার জন্য ১০ হাজার কম্বল পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ মিলেছে। এ টাকায় আরও প্রায় ৩৫ হাজার পিস কম্বল কেনা হয়েছে। এগুলো বিতরণের জন্য ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আরও পাঁচ হাজার কম্বল পাওয়া যাবে বলে চিঠি পেয়েছি।
তিনি বলেন, এই কম্বলও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কখনোই তো চাহিদার সবটা পাওয়া যায় না। এভাবে চালিয়ে নিতে হয়। সামনে আরও কিছু কম্বল বিতরণের জন্য আসতে পারে।
নীলফামারী ॥ চারদিন পর ঘন কুয়াশা কেটে উঁকি দিয়েছে সূর্য। শুক্রবার সকাল থেকে সূর্য মামার দেখা মেলায় খুশি শীতার্ত মানুষ। কিন্তু ছিল না রোদ্রের কোনো তাপ। এতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কমেনি শীতের প্রকোপ। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, কিছু অঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা কমলেও বেড়েছে দিনের তাপমাত্রা। উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগে এখনো রয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের অধীনে। তবে উত্তরে হিম বাতাস বইছে। 
শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ ২০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বনি¤œ ৯.৫ ও সর্বোচ্চ ১৮, রংপুরে সর্বনি¤œ ৯.৭ সর্বোচ্চ ১৬.৫, নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনি¤œ ১০ ও সর্বোচ্চ ১৭, ডিমলায় সর্বনি¤œ ১০.৫ ও সর্বোচ্চ ১৯ এবং দিনাজপুর সর্বনি¤œ ১০ ও সর্বোচ্চ ১৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। 
তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। 
বরিশাল ॥ উত্তরের কনকনে হাওয়ায় বরিশালের জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সঙ্গে হাল্কা থেকে মাঝারি কুয়াশার চাদরে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দিনভরই সূর্যের দেখা মেলেনি। দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে নেমে যায়। ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ ছিল চরমে। দিনভর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। আবহাওয়ার এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে রাখতে ও থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই বরিশালে শীতের দাপট বাড়তে শুরু করেছে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতির অস্বাভাবিক অবনতি ঘটে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, শনিবারের পরবর্তী পাঁচদিনে তাপমাত্রার পারদ আরো হ্রাস পেতে পারে। 
পঞ্চগড় ॥ টানা শীতের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছে হিমালয়ের কোল ঘেঁষা পঞ্চগড়। একদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, আরেক দিকে হিমালয় ছুঁয়ে আসা কনকনে ঠান্ডা বাতাস। দুইয়ে মিলে অসহনীয় করে তুলেছে জেলার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নতুন বছরে পৌষে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা নামল ৮ ডিগ্রির ঘরে। তাপমাত্রায় মৃদু  শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে উত্তরের হিমালয়কন্যাখ্যাত পঞ্চগড়। চারদিন পর ঘন কুয়াশা কেটে এ জেলায় সূর্য উঁকি দিলেও রোদের তেজ তেমন নেই বললেও চলে।

সর্বশেষ শুক্রবার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন এটি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ২ জানুয়ারি সকাল ৯টায় রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। ১৮ ডিসেম্বর তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ছয় দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয় এ জেলায়। এ বছর আর এর নিচে তাপমাত্রা নামেনি। স্থানীয়রা জানান, তাপমাত্রা কমার চেয়েও বেশি অসুবিধা হচ্ছে উত্তরের হিমশীতল বাতাসে। এর পাশাপাশি ঘন কুয়াশা থাকায় বাতাসে তা কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে ভারি যানবাহন। ঘন কুয়াশার কারণে ফগলাইট ব্যবহার করতে হচ্ছে মোটরসাইকেল চালকদেরও।
শীতের কারণে কাজ না পেয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দিনমজুররা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাস করা মানুষজনদের। নিদারুণ কষ্টে দিনরাত কাটছে তাদের। কেউ শীতবস্ত্র আবার কেউ খাবারের কষ্ট নিয়েই জীবনযাপন করছেন। নিম্ন আয়ের মানুষেরা সামর্থ্য অনুযায়ী পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে গিয়ে রোজ ভিড় জমাচ্ছেন। টানা শীতের কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হচ্ছেন।  
তেঁতুলিয়া প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের মতে, এবার আগেভাগে শীত নামলেও জানুয়ারির শুরু থেকে আরও তীব্র আকার ধারণ করে। বর্তমানে এ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু  শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ বলেন, আজকেও ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে উত্তরের এ জেলায়। 
বাগেরহাট ॥ শীতে কাঁপছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মানুষ। তীব্র শীতে জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। শুক্রবার দুপুরেও সূর্যের দেখা মেলেনি জেলায়। তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে যা এ বছরের শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন। এই পরিস্থিতি আরও দু-একদিন থাকতে পারে ধারণা আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তীব্র শীতে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন বোরো ধান চাষি, দিন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। অতিরিক্ত শীতে ধানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ধারণা কৃষকদের। তবে শীতে খেজুরের রসের মান ভালো হচ্ছে।
কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুস ছালাম বলেন, এখনই মূলত জমি লাগানোর সময়। কিন্তু প্রচ- শীতে জমিতে নামা যাচ্ছে না। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। দুপুর পর্যন্ত সূর্য ওঠেনি। এভাবে থাকলে ধানের ক্ষতি হতে পারে। বাগেরহাট শহরের রিক্সাচালক রবিউল বলেন, পেটের টানে রিক্সা নিয়ে বের হইছি। শীতে লোকজন তেমন বাইরে বের হচ্ছে না। তাই যাত্রী কম, আয়ও কম।
খেজুর গাছ কেটে রস বের করার কাজে নিয়োজিত আবুল হোসেন বলেন, শীতে সবকিছুর সমস্যা হলেও, খেজুর গাছে রস বেড়েছে। রসের মানও ভালো।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মো. হারুন অর রশিদ জানান, আজকে বাগেরহাটের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি আনুমানিক দুই থেকে তিন দিন ধরে থাকবে।
নোয়াখালী ॥ কনকনে শীতে যবুথবু নোয়াখালীর বিশ লক্ষাধিক মানুষ। পৌষের মাঝামাঝি পেরিয়ে দেশে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। বৃহত্তর নোয়াখালীর কোনো কোনো অঞ্চলে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। যেখানে তাপমাত্রার হিসাবে শৈত্যপ্রবাহ নেই, সেখানেও শীতের প্রকোপ কম নয়।
শুক্রবার কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা বিশাল চরাঞ্চল বেষ্টিত এ জেলা। দেখা মেলেনি সূর্যের। শীতের দাপটে জবুথবু জনজীবন। খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের শেষ নেই। হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।
নোয়াখালীর জেলা জজ আদালত সড়কের পাশের ফুটপাতে নিজের এবং সন্তানদের জন্য শীতের কাপড় সংগ্রহ করতে এসেছিলেন শ্রমিক রেজাউল করিম। তীব্র শীতের প্রস্তুতি ছিল না তার। শুক্রবার সকাল থেকে কনকনে হিমেল হাওয়া বইছে। তাই কাজে না গিয়ে এসেছেন ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানে। বলেন, ‘শীতের কাফড় নাই। এবার অনো কেউ কম্বল দেয় না। হোলাহাইনের ঠান্ডা লাগের। তাই টেয়া ধার করি গরম কাফড় কিনতাম আইসি।’
কুড়িগ্রাম ॥ জেলায় কুয়াশায় কাহিল লোকজন। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুড়িগ্রামে কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বেশ কিছু শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুও শীতে কষ্ট পাচ্ছে। শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই আগুনের কু-লি জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। দুদিন থেকে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না।
মাগুরা ॥ মাগুরায়  শীতের তীব্রতা বেড়েছে । ফলে দরিদ্র মানুষেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বৃদ্ধ ও শিশুরা ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ছ্।ে হাসপাতাল ও চিকিৎসকের চেম্বারে রোগী বেড়েছে। শীতের তীব্রতা বাড়ায়  পুরাতন শীতবস্ত্রের বাজারে ক্রেতাদের  ভিড় বাড়ছে। শহরের প্রধান ডাকঘরের সামনে ও মাতৃসদন সড়কে  বসেছে পুরাতন শীতবস্ত্রের বাজার। ক্রেতারা  শীত নিবারণ করার জন্য এখান থেকে তাদের পছন্দ মতো শীতবস্ত্র ক্রয় করছেন।
খুলনা অফিস ॥ কুয়াশার সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্র হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে খুলনার জনপদ। শুক্রবার ভোর থেকে সারাদিনে দেখা মেলেনি সূর্যের। এতে চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। অতিরিক্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তবে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হচ্ছে শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষকে। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা ছিল।
শুক্রবার দুপুরে নগরীর সাত রাস্তার মোড়ে রিক্সাচালক মিলন মিয়ার সঙ্গে দেখা। তিনি বলেন, রিক্সা নিয়ে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু ভাড়া হচ্ছে না। এমনিতো বন্ধের দিন, তার ওপর তীব্র শীত-এই কারণে কেউ ঘর থেকে বের হতে চাচ্ছে না। দুই-একশ’ টাকা না হলে আজকে চলব কিভাবে। নিজেরও অনেক কষ্ট হচ্ছে তারপরও পেটের জ্বালায় রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি।
শান্তধাম মোড়ের দোকানদার রহমত আলী বলেন, সারাদিন রোদের দেখা নেই।  কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারণে আজকে কাস্টমারও  হচ্ছে না। দুপুর থেকেই মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নেমে আসবে।
ঠাকুরগাঁও ॥ জেলায় ডিসেম্বরের শেষ অবধি শীতের প্রভাব তেমন ছিল না। তাপমাত্রা কমলেও দিনের বেলায় সূর্যের উপস্থিতির কারণে শীতের দাপট দেখা যায়নি। তবে, হঠাৎ করেই ১ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমতে থাকে। কনকনে শীতে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে জেলায় বসবাসরত জনজীবন। ঘন কুয়াশার কারণে সন্ধ্যার পর থেকেই বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে অনেক বেলা অবধি সব ধরনের যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে।

সন্ধ্যার পর অথবা বেলা ১০-১১টার আগ পর্যন্ত নিতান্তই প্রয়োজন কিংবা জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষের দেখা মিলছে পথে-ঘাটে। শ্রমজীবী ও গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কাবু হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে বিপদে পড়ছেন পরিবারের সদস্যরা। শীত নিবারণে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা অনুভব করার চেষ্টা করছেন। জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, শুক্রবার সকাল ৯টায় ঠাকুরগাঁওয়ে চূড়ান্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৪ শতাংশ ।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দিনের তুলনায় ঘন কুয়াশা সেই সঙ্গে বেড়েছে হিমেল বাতাসসহ শীতের দাপট। এতে বিপাকে পড়ে খেটে খাওয়া মানুষ। সদর উপজেলার সালন্দর এলাকার আলু ক্ষেতে কর্মরত শ্রমিক সখিনা খাতুন ও জয়তুন নাহার বলেন, খালি পায়ে আলুর খেতে কোদাল মেরে কাজ করছি, তীব্র শীতের কারণে কাজ করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। শহরের চৌরাস্তায় ইজিবাইক চালক আব্দুল খালেক বলেন, শীতকে উপেক্ষা করে বাইর হয়েছি। কিন্তু ‘ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে কোনো মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন না। যার ফলে আমার আয় কমে গেছে। সংসার পরিচালনা করতে কষ্ট হচ্ছে।

×