ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

অক্টোবরে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ছে

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ২০:৪২, ২ অক্টোবর ২০২৪; আপডেট: ২৩:০৯, ২ অক্টোবর ২০২৪

অক্টোবরে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ছে

ঘূর্ণিঝড়

অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ছে। ১৮৯১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫৯টি ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে। যার মধ্যে ৮টি দেশের উপক’লে আঘাত হেনেছে। বাকীগুলো মিয়ানমার ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আছড়ে পড়ে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ক্রমেই অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় প্রবণ মাস হয়ে উঠেছে। ১৮৯১-২০২৩ সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে অতিতীব্র ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ৪৩টি। যার অধিকাংশই বাংলাদেশে আঘাত করেছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী শুধুমাত্র এ মাসে ১-৩টি নিম্নচাপ তৈরি হবে। যারমধ্যে অন্তত একটি ঘূর্ণিছড়ে রুপ নেবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জনকণ্ঠকে জানান, সাগরে একমাসে অন্তত তিনটি নিম্নচাপ তৈরি হলে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নেয়। আমাদের দীর্ঘদিনের তথ্য ও অনুসন্ধান এই নির্দেশনায় দেয়। সে অনুযায়ী এই মাসে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরির প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে এটি বাংলাদেশের মাটিতে আঘাত করবে কী না তা এখনো বলা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে ১৬টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। এই সময় অতিতীব্র ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যাও ১৬টি। তবে  যদি অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর এই তিন মাসের ঝড়ের হিসাব করা যায় তবে এ সংখ্যা আরও বেশি। ১৯৭১-২০২৩ সাল পর্যন্ত এই তিন মাসে ৩৮টি ঘূর্ণিঝড় ও ৬৮টি অতিতীব্র ঘূর্ণিঝড় সাগরে তৈরি হয়েছে। এসব ঝড়ের কারণে দেশের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও বাড়ছে।

শুধু ঝড় নয় অক্টোবরে তাপমাত্রা ও বৃষ্টির হিসাবেও পরিবর্তন এসেছে। যা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবে বর্ণনা করছেন। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, অক্টোবর মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের হার ১৬০ দশমিক ৩ মি.মি.। এবার মাসে ৭-৮ দিনের বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এরফলে গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের হারের চেয়ে বৃষ্টিপাত বেশি হতে পারে। এছাড়াও অক্টোবর মাসের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবং দিন যত যাবে ততই তাপমাত্রা কমতে থাকবে। এই আবহাওয়াবিদ মনে করেন, এই মাসের শেষের দিকে প্রান্তিক পর্যায় অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলে শীতের অনুভ’তি পাওয়া যাবে। আবহাওয়ার ভাষায় সেটিকে শীত বলা না গেলেও প্রকৃত শীতের আগমনী বার্তা আসবে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, চলতি মাসে ৩০-৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা উঠানামা করবে। তবে দিনের ও তাপের তাপমাত্রা বেশি থাকবে।

এদিকে মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি এবং এরমধ্যে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এই পূর্বাভাস দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটির নিয়মিত বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. ছাদেকুল আলম।

মাসব্যাপী পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, মাসের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে বিদায় নিতে পারে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দু-চারদিন মাঝারি থেকে তীব্র বজ্রঝড় এবং সারাদেশে তিন-পাঁচদিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে; তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকবে।

বন্যার পূর্বাভাস জানিয়ে সংস্থাটি জানায়, অক্টোবর মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

এ বছর বর্ষার শুরুতে জুনের দ্বিতীয়ার্ধে দেশে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে বন্যার কবলে পড়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ঈদের উৎসবের আগে ও পরে দুই সপ্তাহ ধরে দুর্ভোগে কাটে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ আশপাশের জেলার বাসিন্দাদের। সে সময় উত্তরাঞ্চলেও পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। উজানের ঢলে জুলাইয়ের শুরুতেও দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। এর ফলে প্লাবিত হয় অনেক গ্রাম। আর অতি ভারী বৃষ্টির মধ্যে উজান থেকে নেমে আসা তীব্র ঢলের কারণে গত ২০ অগাস্ট থেকে দেশের দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বাংশের কয়েক জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে তা বিস্তৃত হয় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহেও দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তার কিছু নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

 

কাজল

×