ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

কোন পথে সম্ভাবনার হকি?

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

কোন পথে সম্ভাবনার হকি?

ইন্দোনেশিয়ায় এএইচএফ কাপে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ হকি দল

এএইচএফ কাপ হকিতে সেমিফাইনালে হারের মাধ্যমে বাংলাদেশের জাতীয় দল ৪৩ বছর পর এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা হারিয়েছে। হকিপ্রেমীদের মতে, এ ব্যর্থতার মূল দায় বাংলাদেশের হকি ফেডারেশনের (বাহফে) অব্যবস্থাপনা ও ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর বর্তায়। বিশেষ করে জাতীয় দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রাসেল মাহমুদ জিমিকে স্কোয়াডে না রাখার সিদ্ধান্তকে বড় ধরনের কৌশলগত ভুল বলে মনে করা হচ্ছে।
‘জাতীয় হকি দলে অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ন ও সিদ্ধান্তের অদূরদর্শিতাই এশিয়া কাপের স্বপ্নভঙ্গের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ ‘জাতীয় দলে অভিজ্ঞতার অভাব মাঠের খেলায় স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে। জিমির মতো খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’ ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতি জাতীয় দলের স্বপ্ন নষ্ট করেছে। ফেডারেশনকে এখনই নিজের ঘর গোছাতে হবে!’ ‘অভিজ্ঞতা কোনোদিন বাতিল করা যায় না।

জিমির মতো প্লেয়ার মাঠে থাকলে দৃশ্যপট ভিন্ন হতে পারত।’ ‘টিভির পর্দায় যখন হারের শেষ বাঁশি বাজল, মনে হলো আমাদের আশা শেষ হয়ে গেল। স্বপ্নটা আবার ভেঙে গেল। কতদিন আর কষ্ট সহ্য করব? এতদিন পরও আমরা শিখলাম না!’
এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন হকিপ্রেমী, সাবেক খেলোয়াড়, কোচদের আবেগী স্ট্যাটাস। তাদের এই মন্তব্যগুলোতেই বোঝা যাচ্ছে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের হকি। জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের এক সদস্য (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ‘কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে দলে না রাখার সিদ্ধান্ত ছিল বড় ঝুঁকি। চাপের ম্যাচে তাদের অভাব তীব্রভাবে টের পেয়েছি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জাতীয় খেলোয়াড় বলেন, ‘মাঠে একজন অভিজ্ঞ নেতা দরকার ছিল, যিনি ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ঠা-া মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন।’
কেন বাহফে দায়ী? ৫টি কারণ আছে। এগুলো হচ্ছে : পরিকল্পনার অভাব, ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি-গ্রুপিং, সভাপতি ও কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে খেলার পরিবেশ নষ্ট, টুর্নামেন্ট ও ঘরোয়া লিগের স্বল্পতা, আর্থিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা এবং আধুনিক হকির সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থতা।
এ ছাড়া জাতীয় দলের কোচ বারবার পরিবর্তন হয়েছে। কখনো দেশী কোচ, কখনো বিদেশী কোচ, কিন্তু তারা খুব অল্প সময় পেয়েছেন। ঠিকমতো ট্রেনিং ক্যাম্পও হয়নি। একটি টুর্নামেন্ট শেষ হলেই কোচ পরিবর্তন হয়েছে, ফলে টিম বিল্ডিং হয়নি। এ ছাড়া ইনডোর হকির ব্যর্থ আয়োজনও আছে।

ফান্ডিং ইস্যু ও প্রাইভেট স্পন্সর কমে যাওয়াও হকির অধঃপতনের বড় কারণ। এজন্য বাংলাদেশের হকির বিশ্ব র?্যাঙ্কিং অনেক নিচে নেমে গেছে। ১৯৮৫-১৯৯৫ সময়কালে বাংলাদেশ এশিয়ান কাপ ও ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টে অন্তত মাঝারি মানের পারফর্ম করত। এখন গ্রুপ পর্বেই বারবার হারছে দুর্বল দলের কাছে!
জিমির উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল? জিমি বাংলাদেশ হকির সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের একজন, প্রায় দেড় দশক ধরে জাতীয় দলের নেতা। তার লিডারশিপ, অভিজ্ঞতা ও চাপ সামলানোর দক্ষতা দলে বিশাল ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে সেমিফাইনাল বা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা পার্থক্য গড়ে দেয়।

তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য মাঠে একজন ‘গাইড’ থাকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা জিমির অনুপস্থিতিতে হারিয়ে যায়। জিমির উপস্থিতি মানে পেনাল্টি কর্নার, ডিফেন্স, পজিশনিং ও আক্রমণের সময় বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তের বাড়তি সুবিধা। মোটকথা জিমির মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া ছিল এক বড় কৌশলগত ভুল।
এজন্য বাহফে কতটা দায়ী? খুবই দায়ী। কারণ তারা ছিল চরম অপেশাদার। দল ব্যবস্থাপনায় তারা স্বেচ্ছাচারিতা করেছে। বয়সের অজুহাতে তারা জিমকে দলে নেয়নি। অথচ এই বয়সেও জিমি ছিলেন ‘সুপার ফিট’! দলের ভারসাম্যও নষ্ট করেছে বাহফে। অভিজ্ঞতা আর যুবশক্তির সমন্বয় ছাড়া দল তৈরি করলে ফলাফল নষ্ট হয়। ফেডারেশন ও সিলেকশন কমিটি সেটা বুঝতে পারেনি বা ইচ্ছে করেও মানেনি।
সেমিফাইনালে হারের মূল কারণ ছিল চাপের মুহূর্তে পরিকল্পনার অভাব ও নেতৃত্ব সংকট। ফলে ৪৩ বছর পর এশিয়া কাপের কোয়ালিফাইং হাতছাড়া হলো, যা বাংলাদেশের হকির ইতিহাসের অন্যতম বড় ব্যর্থতা। বাহফে তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, স্বার্থ ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করেছে, যেখানে অভিজ্ঞতার গুরুত্ব তারা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে।
যদি জিমি দলে থাকতেন তাহলে কি হতো? দল অভিজ্ঞ নেতৃত্ব পেত। সেমিফাইনালের মতো চাপের মুহূর্তে, তরুণরা যখন নার্ভাস হয়ে পড়ে, তখন জিমি মাঠে ঠান্ডা মাথায় খেলোয়াড়দের সংগঠিত রাখতে পারতেন। খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ত, ভুল কম হতো। বিশেষ করে গোল খাওয়ার পর টিমের মনোবল ধরে রাখতে একজন নেতার ভূমিকা জরুরি ছিল, যেটা জিমি পারতেন।
জিমির পজিশন সেন্স এবং মাঠের ভিশন খুবই উন্নত। তিনি গোলের সামনে বিপজ্জনক মুভমেন্ট তৈরি করতে পারতেন। তীব্র আক্রমণ বা গোল খাওয়ার সম্ভাবনা এলে কৌশল পরিবর্তন করে ডিফেন্স সামলে দিতে পারতেন। সময়ের প্রয়োজনে ম্যাচ স্লো বা ফাস্ট করা- এগুলো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছাড়া সম্ভব নয়।
জিমি থাকলে অন্তত এক-দুটি গোলের সম্ভাবনা বাড়ত।
খেলোয়াড়রা অনেক সময় মাঠের বাইরে সিনিয়রদের পরামর্শে মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকে। সেমির মতো ম্যাচে দলের অভ্যন্তরে স্থিরতা আনার কাজ করতেন জিমি। তরুণরা আরও ফোকাসড থাকত। ট্যাকটিক্যাল পরিবর্তন ও শেষ মুহূর্তে ম্যাচ সামাল দেওয়ার ক্ষমতা ছিল জিমির। সেমিতে বাংলাদেশ যখন পিছিয়ে পড়ছিল, তখন অভিজ্ঞ কাউকে দরকার ছিল যিনি খেলায় ‘মোমেন্টাম শিফট’ করতে পারেন।

জিমি থাকলে ফেডারেশন বা কোচ মাঠের মধ্যেই বিকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারতেন। সেমিতে খেলার ধরন আরও গোছানো থাকত। গোলের সুযোগ কাজে লাগানোর হার বাড়ত। গোল খাওয়ার পর দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা থাকত। অন্তত টাইট ম্যাচ হলে টাইব্রেকার পর্যন্ত যেত, যেখানে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকত। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ হয়তো ফাইনালে উঠত অথবা অন্তত রানার্সআপ হয়েও এশিয়া কাপের টিকিট নিশ্চিত করতে পারত।
জিমির অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব ছাড়া মাঠে বাংলাদেশ দল ছিল একটা ‘সেনাবিহীন সেনাবাহিনী’র মতো। ভালো সৈনিক ছিল, কিন্তু দিশা ছিল না! আর সেই ভুল সিদ্ধান্তের দায় বাহফেকেই নিতে হবে।
বাংলাদেশ হকির এই ব্যর্থতা শুধু একটি ম্যাচের হার নয়, বরং দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্বের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ।

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার