
মঙ্গলবার চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি করার পর টাইগার ওপেনার সাদমান ইসলামের উদ্যাপন
চার বছর আগে ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। সেই একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের সেরা ইনিংস উপহার দিয়েছেন সাদমান ইসলাম অনিক। সেবার ছিল হারারেতে আর এবার চট্টগ্রামে। বাংলাদেশের কোনো ওপেনারই টেস্টে শতক হাঁকিয়েছেন ২৮ মাস ১২ দিন পর। সাদমানের ১২০ রানে ভর দিয়েই চট্টগ্রাম টেস্টে দ্বিতীয় দিনশেষে জিম্বাবুয়ের চেয়ে ৬৪ রানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
৩২ ইনিংস পর বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে শতরানের জুটি হয়েছে। প্রায় ৩ বছর পর ফেরা এনামুল হক বিজয় আর সাদমান ১১৮ রানের জুটি গড়েছেন। শেষ বিকেলে হঠাৎ বেসামাল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট না হারিয়ে ফেললে আরও স্বস্তিদায়ক অবস্থানে থাকতে পারত স্বাগতিকরা। জিম্বাবুয়ের অভিষিক্ত লেগস্পিনার ভিনসেন্ট মাসাকেসার ঘূর্ণিতেই এলোমেলো হয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
তবু মঙ্গলবার ম্যাচের দিনশেষে ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে প্রথম ইনিংসে এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেঞ্চুরিয়ান সাদমান অতিরিক্ত ৩টি উইকেট হারিয়েছেন বলে আক্ষেপ জানিয়েছেন।
৯ উইকেটে ২২৭ রান নিয়ে সেখানেই মঙ্গলবার সাগরিকায় থেমেছে জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংস। প্রথম বলেই উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। তিনি ৬০ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন। এরপর বিজয়-সাদমান জুটি দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বিনা উইকেটে বাংলাদেশকে লাঞ্চ বিরতিতে নিয়ে গেছেন ১০৫ রানে। সাধারণত ধীরস্থির প্রকৃতির হলেও সাদমান বেশ স্বচ্ছন্দে এবং কিছুটা দ্রুত রান করেছেন। মাত্র ৭৮ বলেই ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি হাঁকিয়ে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন সাদমান।
এর মাধ্যমে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১ হাজার রানের মাইলফলকও পেরিয়ে যান ২২তম টেস্ট খেলতে নামা এ বাঁহাতি ওপেনার। লাঞ্চ বিরতির পর বিজয় ক্যারিয়ারসেরা ৩৯ রানে সাজঘরে ফিরে গেলে ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি ভেঙে যায়। ৩২ ইনিংস পর আবার ওপেনিং জুটিতে শতরান পায় বাংলাদেশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে চট্টগ্রামেই ১২৪ রানের ওপেনিং জুটি হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসানের।
এরপর মুমিনুল হকের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৭৬ রানের জুটি গড়ার পথে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে যান সাদমান। ২০২১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই অপরাজিত ১১৫ রান করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের কোনো ওপেনার টেস্টে ৮৬৪ দিন পর সেঞ্চুরি হাঁকালেন। ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বরের পর এবারই প্রথম কোনো বাংলাদেশী ওপেনার টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে এই ভেন্যুতেই বাংলাদেশের সর্বশেষ ওপেনার হিসেবে টেস্টে শতক হাঁকিয়েছিলেন জাকির হাসান।
গত দুই বছর বাংলাদেশের আর কোনো টেস্ট ওপেনার সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারেননি। ওপেনারদের ব্যর্থতার জন্যই মূলত সর্বশেষ ১২ ইনিংসে কোনো ৫০ রানের উদ্বোধনী জুটি হয়নি, ৩২ ইনিংসে হয়নি শতরানের জুটি। সাদমান শেষ পর্যন্ত ১৮১ বলে ১৬ চার, ১ ছক্কায় ১২০ রানে বিদায় নেন। মুমিনুলও ৩৩ রানে ফিরে গেছেন। তবু ৩ উইকেটে ২০৫ রান নিয়েই চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
বিরতির কিছুক্ষণ পরই লিড পেয়েছে টাইগাররা অধিনায়ক শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের দারুণ ব্যাটিংয়ে। দুজন চতুর্থ উইকেটে ৬৫ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে আরও ওপরের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু মাসেকেসার লেগস্পিনে শান্ত ২৩, জাকের আলী ৫ ও নাঈম ৩ রানে সাজঘরে ফেরেন এবং মুশফিক ৫৯ বলে ৪ চার, ১ ছয়ে ৪০ করে রান আউট হন। এতে মাত্র ২০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে মেহেদি হাসান মিরাজ (১৬) ও তাইজুল (৫) বাকি সময় পার করে দেওয়াতে ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দিন পার হয়েছে টাইগারদের। কিন্তু দিনশেষে লিড ৬৪ রানের হলেও পূর্ণ সন্তুষ্টি নেই স্বাগতিকদের তাঁবুতে। এ বিষয়ে দিনশেষে সংবাদ সম্মেলনে সাদমান বলেছেন, ‘আমরা ভালো অবস্থায় ছিলাম। আমার কাছে মনে হয়, ৩টা উইকেট বেশি হয়ে গেছে। আমরা যদি ওই উইকেটগুলো না হারাতাম, ১০০ এর বেশি লিডে থাকতাম। আমরা একটা ভালো অবস্থানে ছিলাম, কিন্তু ওখান থেকে হয়তো আমরা একটু পিছিয়ে আছি।’
সাদমান অবশ্য টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের সেরা খেলাটাই খেলেছেন। এর আগে ব্যক্তিগত কোনো ইনিংসেই এত বেশি বাউন্ডারি হাঁকাননি তিনি। এমনকি ৫০+ কোনো ইনিংসই এত দ্রুতগতির ছিল না। এদিন তিনি ৬৬.২৯ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন। নিজের এত ভালো ব্যাটিংয়ের পেছনে বিজয়ের ভূমিকাও দেখছেন তিনি, ‘অবশ্যই সুযোগ এলে বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করি। কখন কীভাবে খেলতে হয়, মাঠে বল যে রকম আসে মেরিট অনুযায়ী খেলি। উনি অনেক অভিজ্ঞ, সিনিয়র খেলোয়াড়।
আমরা তো দেখেছি উনি সব সময়ই রান করে থাকেন। আজকে যে রকম শুরু করেছিলেন, খুব ভালো অবস্থায় ছিলেন, ভালো করছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আউট হয়ে গেছেন।’ এই ইনিংসে আরও ১০০ রান যোগ করার লক্ষ্য বাংলাদেশের। সাদমানের বিশ^াস মিরাজ ক্রিজে থাকার কারণে সেটি সম্ভব। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মিরাজ আর তাইজুল ভাই আছে, অবশ্যই যদি ওরা ভালো একটা জুটি গড়ে, আরও ১০০ এর বেশি রান আসে, আমাদের জন্য ভালো। আশা করি, ভালো জুটি হলে আমরা খুব এগিয়ে থাকব।’