ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

শেষ সেশনে ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের দিন

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

শেষ সেশনে ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের দিন

সোমবার চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে ৫ উইকেট পাওয়া স্পিনার তাইজুল ইসলামকে ঘিরে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের উল্লাস

সিলেট চারদিনেই হতাশার হারের টেস্টে প্রতিটি দিনে, প্রতিটি সেশনেই নাজমুল হোসেন শান্তর দল ছিল ব্যর্থ। সিরিজ বাঁচাতে জিততেই হবে, চট্টগ্রামে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ভর করে অজানা সংশয়। সোমবার সকালে টস জিতে ব্যাটিং নিতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি ক্রেইগ আরভিনকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানান, তিনিও ব্যাটিংই নিতেন। যেখানে টেস্টে প্রথম ইনিংসে রানের গড় প্রায় পৌনে চারশ’; এক পর্যায়ে ২ উইকেটে ১৭৬ রান তুলে চোখ রাঙাচ্ছিল সফরকারীরা।

এরপরই তাইজুল-ম্যাজিক। শেষ সেশনে ৭ উইকেট, ৫১ রানের মধ্যে আরও ৫ উইকেট তুলে নিয়ে আরভিনদের উড়তে দেননি তিনি। ২২৭ রান তুলতেই ৯ উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া অভিজ্ঞ এ বাঁহাতি স্পিনারের দুরন্ত বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত আশার ভেলা ভাসিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষ করেছে টাইগাররা। ক্যারিয়ারে ১৬তম বারের মতো ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। লোকাল বয় নাঈম হাসানের শিকার ২, আর অভিষিক্ত পেসার তানজিম হাসান সাকিব ১।
তিন পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। বাদ পড়েন ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। অনেকদিন পর টেস্ট দলে ফেরেন এনামুল হক বিজয়। পেসার খালেদ আহমেদও জায়গা হারান। অভিষেক হয় তানজিম হাসান সাকিবের। পেস আক্রমণে জুটি বাঁধেন হাসান মাহমুদের সঙ্গে। তৃতীয় স্পিনার হিসেবে মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুলের সঙ্গী হন নাঈম। চট্টগ্রামের চিরায়ত ব্যাটিং সহায়ক কন্ডিশনে ভালো শুরু পায় জিম্বাবুয়ে। সফরকারীদের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ৪১ রান।

দারুণ এক ডেলিভারিতে ২১ রান করা ব্রায়ান বেনেটকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে অভিষেক ম্যাচে প্রথম উইকেটের স্বাদ পান তানজিম। ঠিক ২১ রান করা বেন কারেনকে বোল্ড করেন তাইজুল। ৭২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় সফরকারীরা। নিক ওয়েলচ ও অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামসের জোড়া ফিফটিতে শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ে। একপর্যায়ে ৪ উইকেটে তাদের রান ছিল ২০০। সকালের সেশনে দুই উইকেট তুলে নেওয়ার পর শন উইলিয়ামসকে সঙ্গে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে বড় সংগ্রহের পথে তিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন ওয়েলচ।

বাংলাদেশের ফিল্ডার আর বোলারদের ব্যর্থতায় তাদের ফেরানোটা মনে হচ্ছিল বেশ দুরূহ কাজ। কিন্তু  চা-বিরতির পর ব্যথা আর সহ্য করতে না পেরে ৫৪ রানে রিটায়ার্ট হার্ট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ওয়েলচ। স্বাগতিক বোলারদের হতাশ করে চমৎকারভাবে এগিয়ে যেতে থাকা সফরকারীদের জন্য সেটা ছিল বড় একটা ধাক্কা।
ওয়েলচের পর উইকেটে আসা অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনই (৫) প্রথম শিকার হন নাঈমের। এরপরের উইকেটটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। ৬৭ রান করে ফেলা শন উইলিয়ামসের দুর্দান্ত ক্যাচটি নিয়ে এই উইকেটের বড় কৃতিত্বটা পাওনা তানজিম হাসানের। উইকেটের মাঝপথে পড়ে গিয়েও সাদমান ইসলাম ও জাকের আলীর দুর্বল থ্রোয়ে বেঁচে যাওয়া এই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের জন্য বড় বিপদই হয়ে উঠছিলেন। বাংলাদেশের হয়ে পরের গল্পটা শুধুই তাইজুলের। চট্টগ্রামে টানা দ্বিতীয় ফাইফার পুরনের পথে জিম্বাবুয়েকে বলতে গেলে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন।

শুরুটা করেছিলন ওপেনার কারানকে ফিরিয়ে। নাঈমের জোড়া উইকেটের পর ওয়েসলি মাধেভেরে তার বলেই ক্যাচ দিয়ে দেন উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো জাকের আলীর হাতে। নতুন বল নেওয়ার পর আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন তাইজুল। ৮০তম ওভারে বোলিংয়ে এসে তৃতীয় বলেই ছক্কা খেয়েছিলেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজার হাতে। তাকে এলবিডব্লিউ করার পরের বলে রিচার্ড এনগারাভাকে আউট করে জাগিয়ে তুলেছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। হ্যাটট্রিকটা তাইজুল করতে পারেননি। তবে আরও দুটি উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের শেষ ডেকে আনেন তিনিই।

তাইজুলের নেওয়া শেষ উইকেটটির কথা আলাদা করে বলতে হবে। দলের বিপদ দেখে রিটায়ার্ড হার্ট ওয়েলস আবার ফিরে আসেন। তাকে আর একটি রানও যোগ করতে দেননি বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার। ৫৪ রানেই পরিষ্কার বোল্ড করে ফিরিয়ে দিয়েছেন সাজঘরে। ২৭ ওভারে ৬ মেডেন, ৬০ রান দিয়ে তাইজুল নিয়েছেন ৫ উইকেট। ৫৩তম টেস্টে অভিজ্ঞ এ বাঁতি স্পিনারের নামের পাশে এখন ২২৪ উইকেট।    
স্কোর ॥ জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস ২২৭/৯ (৯০ ওভার; বেনেট ২১, কারান ২১, ওয়েলচ ৫৪, উইলিয়ামস ৬৭, আরভিন ৫, মাধভেরে ১৫, সিগা ১৮*, ওয়েলিংটন ৬, এনগারাভা ০, মাসেকেসা ৮, মুজারাবানি ২*; তানজিম ১/৪৯, তাইজুল ৫/৬০, নাঈম ২/৪২)।
* প্রথম দিন শেষে

×