ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

আর কত মাথা নত?

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৫২, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

আর কত মাথা নত?

চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে মাথা নত করে সাজঘরে ফিরছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত

বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘বিপদের বন্ধু’ জিম্বাবুয়ে। হারতে হারতে করুণ অবস্থা? আত্মবিশ্বাস ফেরাতে হবে? জিম্বাবুয়েকে আমন্ত্রণ জানাও, জয় তুলে নাও আর বড় গলায় বল, ‘সব ঠিক আছে!’ বৈশিক কোনো টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুতি দরকার? ভুখানাঙা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেল আর ‘ফেক’ আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হও! আফ্রিকান লিলিপুটদের সঙ্গে টাইগার ক্রিকেটের সম্পর্কটা তো এমনই!

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভরাডুবির পর এবারও এফটিপির বাইরে গিয়ে এই সিরিজ খেলার কারণ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন সার্কেলের আগে ‘আত্মবিশ্বাস’ ফেরানো। পাশার দান যে এবার উল্টে গেল! টানা ১০ টেস্টে জয়হীন থাকা জিম্বাবুয়েই বরং চার দিনে সিলেট টেস্ট জিতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল! নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতায় নাজমুল হোসেন শান্তদের এই হারের আসলে কোনো ব্যাখ্যা নেই, থাকতে পারে না। জিম্বাবুয়ে এর আগে সবশেষ টেস্ট জিতেছিল ২০২১ সালের মার্চে, আবুধাবীতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এরপর চার বছরে টানা ১০ টেস্টে জয় নেই, হার ৮টিতে, বাকি দুটি ড্র।

এমনকি ঘরের  মাঠে টেস্টের কনিষ্ঠ সদস্য আয়ারল্যান্ডের কাছেও নাস্তানাবুদ হয়েছিল। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে এসেছে জিম্বাবুয়ে। এর আগে ২০০১, ২০০৫, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশে টেস্ট খেলেছে তারা। সব মিলিয়ে আগের ১০ টেস্টে আফ্রিকার দলটির জয় ছিল মাত্র দুটি। একবার নিউজ হয়েছিল, পয়সা না থাকায় পুরনো জুতা সেলাই করে প্র্যাকটিস করছেন দেশটির ক্রিকেটাররা। দুর্নীতি, আর্থিক অসঙ্গতি ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে এক সময় পাঁচ বছরের জন্য টেস্ট ক্রিকেট থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিল জিম্বাবুয়ে।

সেই তাদের কাছে এই হার মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন। আর সেটা হয়েছে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে। সিলেটে টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানে গুটিয়ে গেছে শান্তর দল। মুমিনুল হক (৫৬) ও শান্ত (৪০) ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পানেনি। ৮২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসেও আশা জাগিয়েছিলেন দুজনে। আউট হয়েছেন ৪৭ ও ৬০ রানে। তবে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, মুমিনুলসহ টপঅর্ডার ব্যাটারদের আউট হওয়ার ধরন ছিল যাচ্ছেতাই। প্রশ্ন উঠেছে তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে। 
অনেকে বলবেন, গত বছরের শেষভাগে পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ, তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে তাদেরই মাটিতে। তবে সেই সাফল্য দিয়ে এই ব্যর্থতার দায় এড়ানো সম্ভব নয়। কারণ নিজ আঙিনায় প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। তাছাড়া ওই দুটি সাফল্যের পর ভারত সফরে এবং ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের ধরন ছিল যাচ্ছেতাই। এমনি হতাশার ব্যাটিংয়ে মোড়ানো। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে এতটাই আন্ডার রেটেড যে এই সিরিজে সম্প্রচার স্বত্ব পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেনি বিসিবি। বাধ্য হয়ে খেলা দেখাচ্ছে রাষ্ট্রীয় চ্যানেল বিটিভি।

বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ, পশ্চাৎপদ জিম্বাবুয়ের সঙ্গে এই ব্যর্থতার পর সামাজিক মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই দলকে ঢেলে সাজানোর কথা বলছেন। বাদ দিতে বলছেন মুশফিক (৪ ও ৪ রানে আউট), মাহমুদুল হাসান জয়ের (১৪ ও ৩৩ রানে আউট) মতো ব্যর্থ ব্যাটারদের। সিলেটে কেউই দায়িত্ব নিতে পারেননি।

×