
জিম্বাবুয়ের ৮০ ইঞ্চি উচ্চতার পেসার ব্লেসিং মুজারাবানির আগুন বোলিংয়ের কাছেই মূলত মাথা নত করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ
সিরিজের প্রথম টেস্টেই জিম্বাবুয়ের কাছে পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের চতুর্থ দিনই তারা ৩ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশকে। বুধবার দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৫৫ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। মাত্র ১৭৩ রানের টার্গেট নিয়ে নেমে চতুর্থ দিন শেষ হওয়ার বেশ আগেই ৭ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় সফরকারীরা।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫ শিকারে মেহেদি হাসান মিরাজ তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট ছুঁয়েছেন। তবে মিরাজের এই কীর্তি ম্লান হয়ে গেছে। ১০ টেস্ট পর জিম্বাবুয়ের গৌরবময় জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন প্রথম ইনিংসে ৩টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টি উইকেট নিয়ে পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি। ১১তম টেস্টে নেমে ৫০ উইকেট ছুঁয়েছেন তিনি এবং হয়েছেন প্রথমবার ম্যাচসেরা। সিলেট যেন স্বাগতিক বাংলাদেশের জন্য বধ্যভূমি! এখানে ৪ টেস্ট খেলে তিনটিতেই হেরেছে তারা। ২ টেস্টের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ে।
২০২১ সালের মার্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবুধাবীতে সর্বশেষ টেস্ট জিতেছে জিম্বাবুয়ে। ম্যাচটি ১০ উইকেটে জেতার পর মাঝে ১০ টেস্টে আর জয়ের মুখ দেখেনি তারা। ৮টি হেরেছে আর দুটি করেছে ড্র। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৪তম টেস্ট জয় এটি জিম্বাবুয়ের। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৯ টেস্ট খেলে তারা জিতল ৮ বার। বাংলাদেশও তাদের বিপক্ষে জিতেছে ৮ টেস্ট। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিলেটেই ২০১৮ সালের নভেম্বরে জয় পায় জিম্বাবুয়ে ১৫১ রানে। তারপর দুই দলের মধ্যে হওয়া ৩ টেস্টেই জিতেছে বাংলাদেশ।
এবার সিলেট টেস্টের প্রথম দিন থেকেই নিয়ন্ত্রণটা ছিল জিম্বাবুয়ের। বৃষ্টি বিঘিœত তৃতীয় দিন বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৯৪ রান তুলে শেষ করে। ৪৭ রানে ফিরে যান মুমিনুল। আর ৬০ রানে অপরাজিত শান্ত চতুর্থ দিন সকালে ২ বল খেলেই বিদায় নিয়েছেন। ফলে লড়াইটা সেখানেই শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মূল সর্বনাশটা করেছেন দীর্ঘকায় পেসার মুজারাবানি শর্ট অব লেন্থ বলের সদ্ব্যবহার করে।
মুজারাবানি টপঅর্ডার থেকে মিডলঅর্ডার পর্যন্ত ধসিয়ে দিয়েছেন একাই। সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, শান্ত, মুশফিকুর রহিম শিকার হয়েছেন আগেই। পরবর্তীতে তিনি মিরাজকেও (১১) দ্রুত ফিরিয়ে দিয়েছেন। জাকের আলী অনিক বেশ লড়াই করেছেন, তবে তিনি আর সঙ্গী পাননি। ক্যারিয়ারের চতুর্র্থ ফিফটি হাঁকিয়ে সেই জাকেরও সাজঘরে ফিরেছেন মুজারাবানির পেসে। ১১১ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৫৮ রানে। ২৫৫ রানে দ্বিতীয় ইনিংস সমাপ্ত। মুজারাবানি ২০.২ ওভারে ৫ মেডেনে ৭২ রান দিয়ে ৬ উইকেট শিকার করেন।
এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয়বার ৫ উইকেট শিকার। ওয়েলিংটন মাসাকাদজা নেন ২ উইকেট। মাত্র ১৭৪ রানের টার্গেট পায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশী বোলারদের আলগা বোলিংয়ের সুবাদে জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারান ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করে ৯৫ রানের জুটি গড়েন। এতেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় সফরকারীরা। মিরাজের স্পিনে কারান ৭৫ বলে ৭ চারে ৪৪ রানে সাজঘরে ফেরেন। এরপর মিরাজের ঘূর্ণিতে বেসামাল হয় জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং অর্ডার। শন উইলিয়ামস ৯, নিয়াশা মায়াভো ১ ও মাসাকাদজা ১২ রানে তার শিকার হন।
টানা দুই অর্ধশতকে বেনেট ৮১ বলে ৭ চার, ১ ছয়ে ৫৪ রানে সাজঘরে ফেরেন মিরাজের স্পিনেই। এতে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১২তম ৫ উইকেট শিকার হয়ে গেছে মিরাজের। সেই সঙ্গে সাকিব আল হাসান (২৪৭) ও তাইজুল ইসলামের (২১৭) পর তিনিও বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেট স্পর্শ করলেন। তাইজুল ৪৮ টেস্ট ও ৮৬ ইনিংস এবং সাকিব ৫৪ টেস্ট ও ৯১ ইনিংসে ২০০ উইকেট ছুঁয়েছেন। আর মিরাজের লেগেছে ৫২ টেস্ট, ৯৫ ইনিংস। তাইজুলও এদিন ২ উইকেট নিয়েছেন।
তবে জিম্বাবুয়ে মাত্র ৫০.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে জিতে গেছে। প্রথম ইনিংসে ৫০ রানে ৩টি, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬টিসহ ম্যাচে ১২২ রানে ৯ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করা মুজারাবানি হয়েছেন প্রথমবার ম্যাচ সেরা। নিজেদের মাঠেই যেন ভিনদেশী হয়ে গেছে বাংলাদেশ। কারণ সিলেটে এ নিয়ে ৪ টেস্ট খেলে তিনটিতেই হারল তারা।