
ফাইনাল ম্যাচের আগে অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছে ঢাকা আবাহনী
ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম আসর হিসেবে ধরা হয়ে থাকে ফেডারেশন কাপকে। ১৯৮০ সাল থেকে আসরটির যাত্রা শুরু। ৪৫ বছরে মোট ৩৫ বার আয়োজিত হলেও ১৯৯০, ৯২, ৯৩, ৯৬, ৯৮, ২০০৪, ০৬, ০৭ এবং ১৪ সালে মোট ৯ বার মাঠে গড়ায়নি আসরটি। এই ৩৫ বারের মধ্যে আসরটির শিরোপা জিতেছে মাত্র সাতটি ক্লাব। এরা হলো : আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা, ব্রাদার্স, শেখ জামাল, শেখ রাসেল এবং বসুন্ধরা কিংস।
তালিকার প্রথম ও সাত নম্বর দলকে নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন। কেননা ঢাকা আবাহনী লিমিটেড আজ ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ৩৬তম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংসের। ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভুইয়া স্টেডিয়ামে আজ মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৩টায় শুরু হবে ফাইনাল খেলা।
এক দল হচ্ছে এই আসরের সর্বাধিক ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন। আরেক দল হচ্ছে বর্তমান ও তিনবারের শিরোপাধারী। সাবেক ও বর্তমান চ্যাম্পিয়নের জমজমাট লড়াই উপভোগ করতে আজ ময়মনসিংহে প্রচুর দর্শক সমাগম হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
আজকের ফাইনালে যদি কিংস শিরোপা অক্ষুণœ রাখতে পারে, তাহলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি তারা মধুর প্রতিশোধও নিতে পারবে। কেননা এই আসরের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে তারা মারুফুল হকের আবাহনীর কাছে টাইব্রেকারে ৪-২ (১-১) গোলে হেরে গিয়েছিল। আর তাতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গিয়েছিল কিংসের ফাইনাল খেলা।
কিন্তু টুর্নামেন্টের নতুন নিয়মের কারণেই তারা আরেকটি কোয়ালিফাইং ম্যাচ খেলে জিতে শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠে আসতে সক্ষম হয়। এ নিয়ে সমাজাকি যোগাযোগ মাধ্যমে ‘স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনীর কিছু সমর্থক ফোড়ন কেটেছেন, ‘কিংসকে সুবিধা দিতেই এবারের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডের নিয়ম করা হয়েছে!’
শিরোপাজয়ের মতো এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার দিক থেকেও ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরার চেয়ে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে আবাহনী। তারা যেখানে এর আগে ২০ বার ফাইনাল খেলেছে, সেখানে কিংস ফাইনাল খেলেছে মাত্র ৪ বার। ২০১৮ সালের পর আবারও ফেডারেশন কাপের ফাইনালে (এ নিয়ে দ্বিতীয়বার) মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আবাহনী-কিংস। সেবারের ফাইনালে আবাহনী ৩-১ গোলে হারিয়েছিল কিংসকে। সাত বছর আগের সেই ফাইনালের তিক্ত হারের পুনরাবৃত্তি নিশ্চয়ই করতে চাইবে না ভ্যালেরি তিতার শিষ্যরা।
আবাহনী এই আসরে সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ২০২১-২২ মৌসুমে। সেবারের ফাইনালে তারা জিতেছিল ২-১ গোলে। প্রতিপক্ষ ছিল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। আজকের ম্যাচ দিয়ে এক মৌসুম পর শিরোপা পুনরুদ্ধারের সুযোগ পাচ্ছে আবাহনী। এমন সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চাইবে না ধানম-ির ঐতিহ্যবাহী এই দলটি। তাদের আছে দু’সপ্তাহ আগেই কিংসকে হারিয়ে দেওয়ার আত্মবিশ^াস।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম পর্বে শুধুমাত্র দেশীয় ফুটবলার নিয়েই লড়াই করা আকাশী-নীলরা মধ্যবর্তী দলবদলে দলে দলে এনেছে দুই বিদেশী ফুটবলার। যাদের নিয়ে এরই মধ্যে ফেডারেশন কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে দারুণ ফুটবল উপহার দিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে আবাহনী। তবে বসুন্ধরাও পিছিয়ে নেই।
এবারের আসরে আবাহনী ছিল বি-গ্রুপে। প্রথম ম্যাচে তারা ৩-০ গোলে গোলে চট্টগ্রাম আবাহনীকে হারিয়ে শুভসূচনা করে। পরের ম্যাচে ১-০ গোলে হারায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে। তৃতীয় ম্যাচে ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবকে উড়িয়ে দেয় ৩-০ গোলে। চতুর্থ ম্যাচে ২-০ গোলে হারায় রহমতগঞ্জকে। পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়ে ৫ দলের মধ্যে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় আবাহনী। এরপর প্রথম কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে কিংসকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে।
পক্ষান্তরে কিংস ছিল এ-গ্রুপে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে তারা ১-০ গোলের কষ্টার্জিত জয় কুড়িয়ে নেয় ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় ম্যাচে ফর্টিস ফুটবল ক্লাবের কাছে ২-০ গোলে হেরে হোঁচট খায়। তৃতীয় ম্যাচেও ঘাম ঘরানো জয় কুড়িয়ে নিতে হয় কিংসকে, ৩-২ গোলে জিতে। প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাব। চতুর্থ ম্যাচে অবশ্য ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবকে ৫-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেয় তারা। ৪ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিযন হয় কিংস। এরপর প্রথম কোয়ালিফায়ারে আবাহনীর কাছে হার। তৃতীয় কোয়ালিফায়ারের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচে রহমতগঞ্জকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে কিংস।