
বাংলাদেশের পতাকা গায়ে জড়িয়ে রাশেদ আলীর উচ্ছ্বাস
বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের জন্য গর্ব করার উপলক্ষ এনে দিয়েছেন মোহাম্মদ রাশেদ আলী। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মার্শাল আটের প্রতিযোগিতা অ্যামেচার মুই থাই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক অর্জন করেছেন তিনি, যা অনুষ্ঠিত হয় ১৮–২০ এপ্রিল পর্যন্ত। ভেন্যু ছিল শ্রীলঙ্কার কলম্বোর এমএস এ্যারেনা। ৭১ কেজি ওজন শ্রেণিতে প্রতিযোগিতা করে রাশেদ পরপর দুই শ্রীলঙ্কার শীর্ষস্থানীয় অ্যামেচার চ্যাম্পিয়নকে হারান।
প্রথম প্রতিপক্ষকে তিনি নকআউট করেন এবং দ্বিতীয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ের পর তৃতীয় রাউন্ডে গিয়ে বিচারকদের সিদ্ধান্তে জয় ছিনিয়ে নেন। ফাইনাল ম্যাচে কাঁধে আঘাত পেয়েও সাহসিকতার সঙ্গে তিন রাউন্ড পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান রাশেদ। পরে বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে হাসেন বিজয়ের হাসি। ফলে স্বর্ণপদক তার হয়ে ধরা দেয়, আর বাংলাদেশের নাম উঠে আসে দক্ষিণ এশিয়ার মুই থাই মানচিত্রে।
তার এই পারফরম্যান্স ছিল সাহস, কৌশল, ধৈর্য আর এক যোদ্ধার প্রকৃত রূপের প্রতিফলন। তবে এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ সংগ্রামের গল্প। রাশেদ এক অভিজ্ঞ মুই থাই প্রশিক্ষক ও ফাইটার, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে এই খেলাটির চর্চা করে আসছেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ফাইটারদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ছোটবেলা থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিলেও, তার পথচলা সহজ ছিল না।
বারবার ভিসা প্রত্যাখ্যান, ফাইট বাতিল হওয়া, অজ্ঞাত কারণে উপেক্ষিত হওয়া-এসব তার জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবুও তিনি কখনো থেমে যাননি। ‘এই স্বর্ণপদক শুধু আমার একার না, এটা বাংলাদেশের। এটা তাদের জন্য যারা বহুবার হার মেনেছে, অবহেলার শিকার হয়েছে, কিন্তু আশা ছাড়েনি। আমি তাদের সবার প্রতিনিধি হয়ে এই জয় এনে দিয়েছি।’ বলেন ৩৩ বছর বয়সী রাশেদ। এই জয় শুধু একটি ট্রফি নয়Ñএটি বাংলাদেশের মুই থাই অঙ্গনে এক নতুন সূচনা। এটি প্রমাণ করে যে, আমাদের দেশেও রয়েছে এমন লড়াকু যোদ্ধারা, যারা দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠদের হারিয়ে চূড়ায় পৌঁছাতে পারে।
রাশেদের এই ঐতিহাসিক অর্জনে বড় অবদান রয়েছে ডব্লিউবিসি মুই থাই বাংলাদেশ এবং এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের। তারা শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করেছে-চূড়ান্ত প্রস্তুতি, যোগাযোগ, লজিস্টিক সাপোর্ট থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে পাশে থেকেছে। যার ফলে এই স্বর্ণপদক দেশে আনা সম্ভব হয়েছে। এই বিজয় শুধুমাত্র রাশেদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। রাশেদের সাফল্য দেশের অন্যান্য তরুণ ক্রীড়াবিদদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।