
৫ উইকেট নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন মেহেদি হাসান মিরাজ
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উইকেট বুঝতে পারছে না বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তাই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায়। পরে জিম্বাবুয়ে যেভাবে ব্যাটিং করেছে তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় তারা ভালো অবস্থানে যাবে। বিনা উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে সোমবার খেলতে নেমে তারা সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় দিন প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ২৭৩ রানে। এতে ৮২ রানের লিড পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
তবে মেহেদি হাসান মিরাজ তার অফস্পিনের ভেল্কি দেখিয়েছেন বলেই লিডটা আরও বড় হয়নি তাদের। ক্যারিয়ারে ১১তম ৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পেয়েছেন তৃতীয়বার ৫ উইকেট। এতে করে দেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেটের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন মিরাজ। তার এমন দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও জিম্বাবুয়ে পেয়েছে বেশ ভালো লিড। আর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেও তেমন ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। ১৩ রানেই প্রথম উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ দিন শেষ করেছে ভাগ্যের জোরে ১ উইকেটে ৫৭ রান নিয়ে। ফলে এখন পর্যন্ত ২৫ রানে পিছিয়েই আছে স্বাগতিকরা।
সিলেট টেস্টের প্রথম দিন শেষে মাত্র ১২৪ রানে পিছিয়ে ছিল জিম্বাবুয়ে। তাদের হাতে তখনো অক্ষত সব উইকেট। কিন্তু দ্বিতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নেমে দুই অপরাজিত ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারান বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি নাহিদ রানার পেসে। ১৪.১ ওভারে বিনা উইকেটে ৬৭ রান নিয়ে খেলতে নেমে ১৭তম ওভারেই উইকেট হারায় তারা। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে মুমিনুল হককে ক্যাচ দেন কারান ৫৫ বলে ২ চারে ১৮ রান করে।
তবে বেনেট বেশ ভালো ব্যাট করছিলেন এবং ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ইনিংসের ২১তম (দিনের সপ্তম) ওভারে তাকেও কট বিহাইন্ড করে স্বস্তি আনেন নাহিদ। আকমণাত্মক বেনেট ৬৪ বলে ১০ চারে ৫৭ রান করেন। দ্রুতই নিক ওয়েলচকে (২) বোল্ড করে দেন হাসান মাহমুদ। ফলে ৮৮ রানে ৩ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে শন উইলিয়ামসের সঙ্গে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন প্রতিরোধ গড়েন। তারা ৪১ রানের জুটি গড়ার পর আবার নাহিদ আঘাত হানেন।
এবার আরভিন ৩৯ বলে ৮ রানে কট বিহাইন্ড হন লাঞ্চের কিছু আগে। ৪ উইকেটে ১৩৩ রানে লাঞ্চ বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। দারুণ একটি সেশন কাটে বাংলাদেশের জন্য। বিরতির পর উইলিয়ামস ও ওয়েসলি মাধেভেরে দারুণ খেলছিলেন। তারা ৪৮ রানের জুটি গড়েন। ৩৩ বলে ৪ চারে ২৪ রান করা মাধেভেরেকে বোল্ড করে ব্রেক থ্রু দেন পেসার খালেদ আহমেদ। কিছুক্ষণ পরই অর্ধশতক হাঁকানো উইলিয়ামসকে শিকার করে প্রথম উইকেট তুলে নেন মিরাজ। তিনি ১০৮ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৯ রান করেন। ততোক্ষণে ২ রানের লিড পেয়ে গেছে সফরকারীরা।
এরপর মিরাজের ঘূর্ণিতে বিপর্যস্ত হয় জিম্বাবুয়ে। তাই বড় জুটি হয়নি। কিন্তু সবাই কিছুটা অবদান রাখেন। তাই লিড বড় হতে থাকে। ৬ উইকেটে ২১৩ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। চা বিরতি শেষে খেলা শুরুর কিছুক্ষণ পরই মায়ভোকে এলবিডব্লিউ করেন। তিনি ৫৪ বলে ৫ চারে ৩৫ রান করেছিলেন। ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকেও (৬) সাজঘরে ফেরান মিরাজ।
এতে ৮ উইকেটে ২২৩ রানে পৌঁছে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু এরপর আরও ৫০ রান যোগ করে রিডকে বড় করেছেন রিচার্ড এনগ্রাভা ও ব্লেসিং মুজারাবানি। স্বচ্ছন্দে ব্যাট চালিয়ে এনগ্রাভা ক্যারিয়ারসেরা ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন ৪৪ বলে ১টি করে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে। নবম উইকেটে তিনি মুজারাবানির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ৩৬ রানের জুটি গড়েন। তবে মিরাজ স্টাম্পিংয়ে ফেরত পাঠান ১৬ বলে ২ চার, ১ ছয়ে ১৭ রান করা মুজারাবানি ও ১৮ বলে ৭ রান করা ভিক্টর নিয়াউচিকে।
২৭৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ে ৮২ রানের লিড পায়। মিরাজ ২০.২ ওভারে ৫ মেডেনে ৫২ রান দিয়ে ৫টি উইকেট নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এখন ৩ বার করে ৫ উইকেট সাকিব আল হাসান ও তার। ৪ বার ৫ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম এদিন ছিলেন উইকেট শূন্য। এখন তার উইকেট ১৯৫টি। তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ২০০ উইকেটের বেশ কাছে চলে গেছেন মিরাজ।
এছাড়া নাহিদ ১৮ ওভারে ৩ মেডেনে ৭৪ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। পরে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩ রানেই হারিয়ে ফেলে সাদমান ইসলাম অনিকের (৪) উইকেট। আর এলোমেলো ব্যাটিং করে দুইবার জীবন পেয়ে মাহমুদুল হাসান জয় ৪২ বলে ৬ চারে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। তার সঙ্গে আছেন মুমিনুল ২৬ বলে ৩ চারে ১৫ রানে। ১ উইকেটে ৫৭ রানে দিন শেষ করে বাংলাদেশ এখনো ২৫ রানে পিছিয়ে।