
সপ্তাহে ছয়দিন প্রশিক্ষণ পায় একাডেমির ৪০ ফুটবলার
নরসিংদীর ঘোড়াশালের পলাশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (অনেকেই একে ‘ওয়াপদা’ বলে) একসময় ছিল ‘ফুটবলার তৈরির উর্বরভূমি’। আশি, নব্বই ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এই অঞ্চল থেকে প্রচুর মানসম্পন্ন ফুটবলার তৈরি হয়েছে, যারা পরবর্তীতে জাতীয় দল, প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগ, পাইওনিয়ার লিগসহ দেশের বিভিন্ন জেলা লিগে সুনাম ও দাপটের সঙ্গে খেলেছেন এবং ফুটবলামোদীদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। ওয়াপদায় যে জিনিষটির কখনই কোন অভাব ছিল না, সেটা খেলার মাঠ। কোয়ার্টারের সঙ্গে লাগোয়া অসংখ্য পার্ক, যেখানে শিশুরা প্রাণভরে খেলাধুলা করতো। সবচেয়ে বেশি চর্চা হতো ফুটবলের, যা খেলা হতো “বড় মাঠ” খ্যাত (বিউবো উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত) ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র খেলার মাঠে।
কিন্তু কালের পরিক্রমায় মোবাইল-ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়েছে নতুন প্রজন্ম। আগের মতো খেলাধুলায় তেমন আগ্রহী নয় তারা। এতে করে এ্যাথলেট-ফুটবলার-ক্রিকেটার এই অঞ্চল থেকে সেভাবে আর বেড়িয়ে আসছে না!এই ‘জেনারেশন গ্যাপ’ ঘোঁচাতে ও সঙ্কট থেকে উত্তরণের জন্য একদল ফুটবল অনুরাগী ২০১২ সালের জানুয়ারিতে একটি ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম পিডিবি (পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড) ফুটবল একাডেমি।
“ভাল ফুটবলার পেতে হলে খুব ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের ফুটবল শেখানো উচিত” ... পিডিবি ফুটবল একাডেমি তাদের আনুষ্ঠানিক পথচলার শুরু থেকেই এই ‘মন্ত্র’টি বিশ্বাস করে এসেছে। তাই একাডেমিতে ৫-১৩ বছর বয়সীদের ভর্তি করায় তারা।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে একাডেমিতে এ পর্যন্ত শিশু ফুটবল প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ৪০। একাডেমির ভর্তি ফি খুবই কম, নামমূল্যও বলা যায়, মাত্র ১০০ টাকা! মাসিক বেতনও তাই, মাত্র ২০০ টাকা করে। সপ্তাহে ছয় দিন তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। একাডেমির প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র (ঘোবিকে) খেলার মাঠে।
একাডেমির কোচ নুরুজ্জামান ভুঁইয়া এবং সংগ্রাম চন্দ। দুজনেই সাবেক ফুটবলার। নুরুজ্জামান খেলেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে। আর সংগ্রাম খেলেছেন ব্রাদার্স ইউনিয়নে। একসময় চট্টগ্রাম লিগে খেলা মাসুম মিয়া দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী কোচের। গোলরক্ষক কোচ মফিজুল ইসলাম লিটু।ফুটবলার তৈরির অপার সম্ভাবনাময় এই একাডেমির প্রধান পৃষ্ঠপোষকদের সবাই প্রবাসী ও ফুটবল অনুরাগী। তারা হলেন- মাসুদ ইকবাল (যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী), ফজলুল হক সুজন (ইংল্যান্ড প্রবাসী) এবং বাবুল মিয়া (অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী)। প্রধান উপদেষ্টা আবুল বাশার (নির্বাহী প্রকৌশলী, ঘোবিকে)। একাডেমির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম সেতু। সাধারণ সম্পাদক-নুরুজ্জামান ভুঁইয়া শফিক।
একাডেমি গড়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? দৈনিক জনকণ্ঠের এই প্রশ্নের উত্তরে একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান ভুঁইয়া শফিক বলেন,“আগামী দিনের জন্য দক্ষ-কুশলী ফুটবলার গড়ে তোলা এবং শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক বিকাশ সাধন করাই হচ্ছে পিডিবি ফুটবল একাডেমির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।”
একাডেমিতে প্রশিক্ষণার্থী ফুটবলার ভর্তি করাতে অভিভাবকদের কাছ থেকে কোন বাধা এসেছে কি? নাকি অভিভাবকদের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন-সহযোগিতা পাওয়া গেছে?
“কোন বাধা আসেনি। বরং তারা সমর্থন-সহযোগিতা দিয়েছেন।” শফিকের জবাব।
তবে একাডেমি পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতার কথা জানান শফিক, “আমাদের একাডেমির মূল সমস্যা আর্থিক। কেননা একাডেমির নিজস্ব কোন ফান্ডিং নেই। আপাতত প্রধান পৃষ্ঠপোষক, উপদেষ্টা ও কমিটির সদস্যদের অর্থেই চলছে একাডেমির কার্যক্রম। তবে ভবিষ্যতে একাডেমির নিজস্ব ফান্ডিং করার পরিকল্পনা আছে।”
রুমেল খান /রাজু