
আজ দুপুরে আর্থিক অনিয়মের অনুসন্ধানে বিসিবিতে দুদক কর্মকর্তাদের হানা
গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা সরকারের সাথে সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি) একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে বসে থাকা নাজমুল হাসান পাপনের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের বিদায় ঘটে।
এক যুগ ধরে বিসিবির প্রেসিডেন্ট হিসেবে একক ক্ষমতাধর পাপনের স্থলাভিষিক্ত হন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। তারপর থেকেই গত এক যুগ ধরে বিসিবিতে হওয়া নানা আর্থিক অনিয়ম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিছুদিন আগে পাপনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও হয়েছে।
অবশেষে আজ দুপুরে হঠাৎ করেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিনিধিরা মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে হানা দেন অনুসন্ধানে।
বিসিবির আয়োজনে মুজিব শতবর্ষ উদযাপনে খরচের হিসাব, তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) টিকিট বিক্রির হিসাব এবং তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ফি’র অনিয়মসংক্রান্ত তথ্যাদি চেয়েছে দুদক। এই তিন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই দুদকের এই অনুসন্ধান, এবং প্রাথমিক তদন্তে প্রায় ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের আলামত পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।
আজ দুপুর ১২টার দিকে বিসিবি কার্যালয়ে আসেন দুদকের কর্মকর্তারা। বিসিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে নিজেদের তদন্তসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চান তারা। এরপর গণমাধ্যমকে দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন বলেন, ‘‘মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রায় ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ৭ কোটি টাকার খরচের হিসাব দেওয়া হয়েছে। বাকি প্রায় ১৯ কোটি টাকার কোনো হিসাব দেওয়া হয়নি।’’ এ বিষয়ে বিসিবির ফাইন্যান্স বিভাগের কাছে তথ্যাদি চেয়েছেন তাঁরা।
এ ছাড়া টিকিট বিক্রি থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলেও জেনেছে দুদক, যারও কোনো হিসাব দেখানো হয়নি। সব মিলিয়ে তাই ২১ কোটি টাকার বেশি গরমিল থাকতে পারে। বিপিএল টিকিট বিক্রির অর্থেও অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। তাঁদের দাবি, বিপিএলের ১১তম আসরেই যেখানে রেকর্ড ১৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেখানে তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত ৮ মৌসুমে টিকিট বিক্রি থেকে মোট আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা।
সাবেক বিসিবি সভাপতি পাপন দায়িত্বে থাকার সময় তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ফি ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাফে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। গত কয়েক বছরে এ প্রতিযোগিতায় ২/৩ বা ৪টি করে দল অংশ নিয়েছে। এবার এন্ট্রি ফি কমিয়ে ১ লাখ টাকা করায় ৬০টি দল অংশ নিতে পেরেছে। আর্থিক অনিয়ম এবং অসঙ্গতির ব্যাপারে এখানেও দুদকের অনুসন্ধান চলছে।
এসব নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘তাঁরা কিছু বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত চেয়েছেন। আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে বলেছি তাঁদের সহযোগিতা করার জন্য।’
মামুন/আশিক