
শূন্যে লাফিয়ে গোল উদ্যাপন বার্সেলোনার দুই তারকা লামিনে ইয়ামাল ও রাফিনহার (ডানে)
‘যত গর্জে তত বর্ষে না’ বুঝি একেই বলে। অতি-আক্রমণাত্মক স্টাইলের জন্য বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে ডাকা হয় ‘জার্মান ফুটবলের খেকশিয়াল’। অনেকেই বলছিলেন বার্সার ডিফেন্সকে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হবে। হয়েছে উল্টো। ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ডর্টমুন্ডকে ৪-০ গোলে বিধস্ত করে সেমির পথে অনেটাই এগিয়ে গেছে হ্যান্সি ফ্লিকের দল।
বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন বার্সার পোলিশ তারকা রবার্ট লেভানডোস্কি। আক্রমণভাগের অপর দুই তারকা রাফিনহা ও লামিনে ইয়ামালও একবার করে প্রতিপক্ষের জাল কাঁপিয়েছেন। অবশ্য সতীর্থ পাউ কুবার্সির নিশ্চিত গোলটি কেড়ে নিয়ে সমালোচনার মুখে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন রাফিনহা। ওদিকে পিএসজির আঙিনায় অ্যাস্টন ভিলার পোস্টে ত্রাতা হতে পারেননি বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
ভিলাকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ফরাসি লিগ চ্যাম্পিয়নরা। পিএসজির হয়ে একে একে জালের দেখা পেয়েছেন দিজিরে দুয়ে, খবিচা কাভারাৎস্খেলিয়া ও নুনো মেন্ডেজ।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে ছিল বার্সা। প্রথম সাত মিনিটে তিনটি দারুণ সুযোগ তৈরি করে তারা। শেষ পর্যন্ত ২৫তম মিনিটে কুবার্সির শট থেকে বল পেয়ে কাতালানদের এগিয়ে দেন রাফিনহা। চলতি আসরে ব্রাজিলিয়ান তারকার ১২তম গোল এটি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে বার্সেলোনা। ইয়ামালের ক্রসে রাফিনহার হেড থেকে বল পেয়ে জালে পাঠিয়ে দেন লেভানডস্কি। ৬৬তম মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে ব্যবধান বাড়ান পোলিশ স্ট্রাইকার।
বার্সার আরেকটি উড়ন্ত জয়ে ৭৭তম মিনিটে শেষ গোলটি করেন লোকাল হিরো ইয়ামাল। ২০১৯ সালের পর প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠার দ্বারপ্রান্তে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। এ নিয়ে তারা অপরাজিত থাকল ২৩ ম্যাচ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা শেষবার ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল ২০১৫ সালে। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে তারাই একমাত্র দল, যারা কোনো ম্যাচ হারেনি ২০২৫ সালে।
বড় জয়ের পরও আত্মবিশ্বাসে ভুগতে চান না বস হ্যান্সি ফ্লিক,‘আমরা অবশ্যই এখনো সেমিতে পৌঁছাইনি! কেউ জানে না কী হতে পারে... ফুটবল খুব পাগলাটে খেলা। সেমিতে উঠতে হলে ডর্টমুন্ডে গিয়েও এভাবেই খেলতে হবে, ভুল করা যাবে না। আমরা আজকে খুব ভালো খেলেছি এবং এ রকম খেললে গোল হবেই, যেমনটি হয়েছে এখানে।’
অন্য ম্যাচে বলের নিয়ন্ত্রণে আধিপাত্য ছিল পিএসজির। গোলপোস্টে একের পর এক আক্রমণ ঠেকাচ্ছিলেন মার্টিনেজ। এ কারণেই গোল পাচ্ছিল না পিএসজি। উল্টো ৩৫তম মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে এগিয়ে যায় ভিলা। ইউরি তিলেমানাসের আড়াআড়ি ক্রস থেকে বল জালে পাঠান মরগ্যান রজার্স। পিএসজি দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়।
দেসির দুয়ে, খভিচা ও নুনো মেন্দেসের গোলে সদ্য লিগ ওয়ানে চ্যাম্পিয়ন হওয়া দল প্রত্যাশিত জয় পায়। আর সব প্রতিযোগিতায় টানা সাত ম্যাচের জয়যাত্রা থেমে যায় ভিলার। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে মার্টিনেসের বীরত্বে ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। পিএসজি-অ্যাস্টন ভিলা ম্যাচের আগে আলোচনার অনেকটা জুড়ে ছিল লুসাইলের সেই গল্প।
মার্টিনেজ সেখানে ফরাসিদের জন্য ছিলেন ‘শত্রু।’ পিএসজি সমর্থকদের কাছেও এ রাতে তিনি ছিলেন তাই। সেবার তিনি জয়ী, এবার পরাজিত। অষ্টম মিনিটে উসমান ডেম্বেলের বুলেট গতির শট ফিস্ট করে প্রথম পরীক্ষায় উতরে যান তিনি। আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে চুল রাঙিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মার্টিনেজ। অবশ্য যে উদ্দেশ্যে এই আয়োজন, তিনি তা পূরণ করতে পারেননি। পারেননি বীর হয়ে উঠতে, আর্জেন্টিনার মতো ভিলাকে জেতাতে।