ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

টাইব্রেকারে কিংসকে হারিয়ে ফাইনালে আবাহনী

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৫০, ৯ এপ্রিল ২০২৫

টাইব্রেকারে কিংসকে হারিয়ে ফাইনালে আবাহনী

মঙ্গলবার কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফাইনালে ওঠার আনন্দ আবাহনীর ফুটবলারদের

ম্যাচের আগেই বোঝা যাচ্ছিল প্রতিপক্ষ চোটসমস্যার কারণে দুর্বল। কাজেই তাদের বিপক্ষে জয়টাই ছিল অনুমেয়। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। কিন্তু যেমনটা মনে করা হয়েছিল, সেভাবে জয়টা আসেনি। বরং এসেছে অনেক কষ্টে এবং রোমাঞ্চকরভাবে। বলা হচ্ছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের কথা। মঙ্গলবার তারা ফেডারেশন কাপের প্রথম কোয়ালিফায়ারে প্রতিপক্ষ বসুন্ধরা কিংসকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে।

কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই ম্যাচে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষে ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ১-১। ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনীর কৃতিত্ব হলো ম্যাচের প্রায় ৭৮ মিনিট পর্যন্ত তাদের খেলতে হয়েছে ১০ জন নিয়ে এবং ২৭ মিনিট পর্যন্ত গোল হজম করে পিছিয়ে ছিল। আগামী ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালের প্রথম দল হিসেবে সবার আগে নাম লেখালো সর্বাধিক ১২ বারের চ্যাম্পিয়ন আবাহনী।

তবে মঙ্গলবারের ম্যাচে হারলেও ফাইনালে খেলার সুযোগ থাকছে তিনবারের ও বর্তসান শিরোপাধারী ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরার। কিংসকে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে খেলতে হবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার্সে জেতা রহমতগঞ্জের বিপক্ষে (আগামী ১৫ এপ্রিল, ময়মনসিংহে) যারা মঙ্গলবার কোয়ালিফায়ারের অপর ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে হারিয়েছে ২-১ গোলে (বিজয়ী দলের স্যামুয়েল ও সলোমন কিং এবং বিজিত দলের সানডে ১টি করে গোল করেন, ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়)।  
কিংস-আবাহনীর ম্যাচে ফেরা যাক। টাইব্রেকার শেষে পেনাল্টি মিস করা কিংসের রাব্বিকে কাঁদতে দেখা যায়। টাইব্রেকারের আগে কিংসের নিয়মিত গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণের পরিবর্তে নামানো হয় আনিসুর রহমান জিকোকে। জিকোকে আর্জেন্টিনার বিশ্বসেরা গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের ট্রিকস খাটাতে দেখা যায়। এই যেমন বল ধরে প্রতিপক্ষের পেনাল্টি টেকারের দিকে ছুঁড়ে দেয়া, কিঞ্চিৎ স্লেজিং করা, স্পটে বল বসানো নিয়ে আপত্তি তুলে মনোযোগ বিঘিœত করার চেষ্টা।

এতে একবার সাফল্য পেয়েছেন জিকো। কিন্তু এগুলোর কিছু না করেই জিকোর চেয়ে বেশি সফল হন জাতীয় দলে তারই প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর মিতুল মারমা। ম্যাচসেরা হন তিনিই। ফলাফল মারুফুল হকের কৌশলে ধরাশায়ী হন ভ্যালেরি তিতা। তিতার আরেকটি তিক্ত অভিজ্ঞতা!
এই ম্যাচে কিংসকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধও নিল আবাহনী। ২০২৪ আসরে সেমিতে তারা গোপালগঞ্জে কিংসের কাছে ৩-০ এবং ২০২১ সালের সেমিতে ঢাকায় ৩-১ গোলে হেরেছিল। অবশ্য চলতি মৌসুমে লিগে তারা ইতোমধ্যেই কিংসকে হারিয়েছিল। 
টাইব্রেকারে গোল করেন আবাহনীর রাফায়েল অগাস্তো, এমেকা ওগবুঘ, সবুজ হোসেন এবং মো. ইব্রাহিম। জাফর ইকবালের শট রুখে দেন জিকো। কিংসের জোনাথন ফার্নান্দেজ ও শেখ মোরসালিন লক্ষ্যভেদ করলেও রাব্বি হোসেন রাহুলের শট আটকে দেন মিতুল। আর ডেসিয়েলের শট পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। 
৫৭ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় কিংস। জোনাথনের ক্রস গিয়ে পড়ে আবাহনীর বক্সে। আবাহনীর দুই ডিফেন্ডার ইয়াসিন এবং শাকিল ও গোলরক্ষক মিতুলের সঙ্গে লেগে ছিলেন কিংসের মজিবুর রহমান জনি। মিতুলের সঙ্গে ডিফেন্ডারদের ভুল বোঝাবুঝি হয় বল কে ক্লিয়ার করবেন, তা নিয়ে। এটাকে কাজে লাগিয়ে বল জালে ঢুকিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠেন জনি (১-০)। 
৮২ মিনিটে এমেকাকে নিজেদের বক্সে ফাউল করে হলুদ কার্ড পান তপু। ফ্রি কিক পায় আবাহনী। ৮৪ মিনিটে অগাস্তোর ফ্রি কিক শ্রাবণ ফিরিয়ে দিলেও ফিরতি বলে বল বুকে রিসিভ করে বা পায়ের পাল্টা গড়ানো শটে বল জালে জড়িয়ে সমতায় ফিরে উল্লাসে ফেটে পড়েন আবাহনীর আরমান ফয়সাল আকাশ (১-১)।
৪২ মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় আবাহনী। বড় ধাক্কা খায তারা। আসাদুজ্জামান বাবলু লাল কার্ড পান। ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেয়ে মাঠ ত্যাগ করেন তিনি। ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ায় রক্ষণের শক্তি বাড়াতে মিডফিল্ডার রবিউল হাসানকে তুলে ডিফেন্ডার শাকিল হোসেনকে নামান আবাহনী কোচ মারুফুল।
অতিরিক্ত সময়ের খেলায় দুই দলই সাবধানী ফুটবল খেলে। উভয় দলই গোলের সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি। এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানে কি ঘটেছে, তা তো পাঠকরা আগেই জেনেছেন।

×