
মঙ্গলবার লাহোরে প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান ‘এ’ দলকে রীতিমতো বিধ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল
অনেকেই হয়তো জানেন না ক্রিকেটে মেয়েদের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল ছেলেদেরও দুই বছর আগে, ১৯৭৩ সালে, ইংল্যান্ডে। ২০২২ সালে ১২তম আসরে এসে প্রথম সুযোগ পায় বাংলাদেশ নারী দল। ডুনেডিনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক ম্যাচে মাঠে নামার আগে আবেগে ভাসছিলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।
আট দলের আসরে সাতে থেকে মিশন শেষ করলেও পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছিল বাংলার টাইগ্রেসরা। চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিতে মেয়েদের সেবার ২০২১ সালে জিম্বাবুইয়েতে বাছাইপর্ব খেলতে যেতে হয়েছিল। কিন্তু তিন ম্যাচ খেলার পর করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে বাছাইপর্ব বাতিল ঘোষণা করে আইসিসি। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকার সুবাদে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ।
কিন্তু এবার আর সেই সুযোগ নেই। লাহোরে আজ থেকে ছয় দল নিয়ে শুরু হচ্ছে ২০২৫ বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব। যেখানে শীর্ষ দুইয়ে থেকেই ভারতের টিকিট কাটতে হবে। পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো পরাশক্তি থাকায় কাজটা ভীষণ কঠিন। কঠিন সেই চ্যালেঞ্জটাই নিতে প্রস্তুত জ্যোতির দল।
আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি উইমেন’স ওয়ানডে বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসর। এরই মধ্যে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে স্বাগতিক ভারতসহ ২০২২-২৫ আইসিসি নারী চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রের শীর্ষ ছয় দল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ড। বাকি দুই দল আসবে লাহোরের বাছাইপর্ব পেরিয়ে। তিন বছরব্যাপী আইসিসি উইমেন’স চ্যাম্পিয়নশিপে সপ্তম হয়ে একটুর জন্য সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
নিগারের দলকে তাই খেলতে হচ্ছে বাছাই পর্ব,‘গতবারও আমাদের কোয়ালিফাই খেলেই ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলতে হয়েছে। এবারও একই ব্যাপার। সুযোগ ছিল আমাদের সামনে (সরাসরি খেলার), তবে আমরা পূরণ করতে পারিনি। তার পরও, বাছাইয়ে যদি ভালো খেলতে পারি, দলের জন্য ভালো। সবার প্রত্যাশাও সেরকম যে, আমরা যেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে পারি।’ দেশ ছাড়ার আগে বলছিলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক।
জ্যোতি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের জন্য, আমাদের ক্যারিয়ারের জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার। কারণ সবশেষবার আমরা যখন ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছি এবং এফটিপিতে জায়গা পেয়েছি, তখন কিন্তু আমাদের ক্রিকেটের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। সম্মানের দিক থেকে বলুন, আর্থিক দিক থেকে, আমরা ক্রিকেটাররা অনেক বেশি লাভবান হয়েছি। আমাদের মেয়েদের ক্রিকেটের জন্য বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করাটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটিকে সামনে রেখে আমাদের যা যা করণীয় ছিল... যদিও রোজা ছিল, অনেক কঠিন ছিল... তার পরও আমরা করেছি, কৃত্রিম আলোয় করেছি, যেহেতু দুটি ম্যাচ আমাদের সেখানে আছে (দিন-রাতের)... প্রতিটি পয়েন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ, সবাই অনেক সিরিয়াস। সব মিলিয়ে ভালো প্রস্তুতি বলতে পারেন। ওখানে গিয়েও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলব। এরপর মূল টুর্নামেন্টের আগে আমার মনে হয়, দল পুরোপুরি প্রস্তুত থাকবে।’
আজ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছয় দল নিয়ে পাকিস্তানে হবে বাছাইয়ের লড়াই। লাহোরের দুই ভেন্যু গাদ্দাফি স্টেডিয়াম ও লাহোর সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এলসিসিএ) গ্রাউন্ডে হবে মোট ১৫টি ম্যাচ। খেলবে স্বাগতিক পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও থাইল্যান্ড। এখান থেকে শীর্ষ দুই দল পেয়ে যাবে ভারতের টিকিট, খেলবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে।
বাছাইয়ে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে ছয় দলের সবাই সবার সঙ্গে একবার করে মুখোমুখি হবে। সেই হিসেবে একেকটি দল খেলবে পাঁচটি করে ম্যাচ। বাছাইয়ের পাঁচ প্রতিপক্ষের চারটিই এই মুহূর্তে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের পেছনে। থাইল্যান্ড ৯, পাকিস্তান ১০, আয়ারল্যান্ড ১১ ও স্কটল্যান্ড ১২ নম্বরে আছে। বাংলাদেশ আছে সাতে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছয়ে। গত জানুয়ারিতে নারী চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এই ক্যারিবীয় মেয়েদের কাছে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরেই সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের।