
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের পেজে এমন ছবি পোস্ট করে নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা
অবরুদ্ধ গাজাজুড়ে চলছে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর নারকীয় তা-ব। বর্বর ইহুদি সেনারা একের পর এক আবাসিক ভবন, অস্থায়ী তাঁবু, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গোটা ফিলিস্তিন আজ মৃত্যুপুরী। মুসলিম ভূখ-টিতে এরই মধ্যে নিহতের সংখ্যা সাড়ে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিধ্বস্ত ভবনগুলো থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ।
দিগি¦দিক ছোটাছুটি করছে মানুষ, চারিদিকে বাঁচার আকুতি। এমনি মানবিক বিপর্যয়ে বিশ্ববাসীর কাছে প্রতিবাদের আহ্বান জানানো হয়। সোমবার বাংলাদেশেও বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ। শহর থেকে গ্রামÑ রাস্তায় নেমে এসেছিল গোটা দেশ। ক্রিকেট থেকে ফুটবল, বর্তমান থেকে সাবেক, ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই ইসরাইলের এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সেই তালিকায় যেমন আছেন জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূইয়া, আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, তাসকিন আহমেদ, মেহেদি হাসান মিরাজের মতো তারকা ক্রিকেটার। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, দিচ্ছেন সহমর্মিতার বার্তা।
ফিলিস্তিন ফুটবল দলের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচের একটি মুহূর্তের ছবি পোস্ট করে জামাল ভূইয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন,‘সবসময়ই তোমরা আমাদের মনে ও হৃদয়ে আছো। ভালো সময়ের জন্য দোয়া করছি।’ অসহায় ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে কাঁদছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও। নিজের ফেসবুক পেজে ফিলিস্তিনের পতাকার ছবি পোস্ট করে মুশফিকুর রহিম প্রার্থনা করেছেন নির্যাতিতদের জন্য।
ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘ওহ আল্লাহ, নির্যাতিতদের সব জায়গায় সাহায্য করুন। ওহ আল্লাহ, আপনি তাদের রক্ষাকর্তা, সাহায্যকারী ও শক্তিদাতা হিসেবে কাজ করুন।’ মাহমুদুল্লাহর পোস্টেও ফুটে উঠেছে গভীর আবেগ, ‘হে আল্লাহ, দয়া করে সাহায্য করুন। হে রাহমানুর রাহিম, দয়া করে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রক্ষাকর্তা। দয়া করে তাদের রক্ষা করুন ও বিজয়ী বানিয়ে দিন। আমিন। হে রব, এটা সহ্য করা যাচ্ছে না। আপনি আল-আহাদ, আপনি আস-সামাদ।
হে আল্লাহ, দয়া করে রক্ষা করুন।’ গাজার ধ্বংসযজ্ঞ দেখে আবেগ সামলাতে পারেননি মেহেদি হাসান মিরাজও। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ছবি পোস্ট করে এ অলরাউন্ডার লিখেছেন, ‘গাজার আকাশ আজও বারুদের গন্ধে ভারি। গাজার আকাশ আজ অন্ধকার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ঘরবাড়ি। নিস্তব্ধ শিশুরা কাঁদছে নিঃশব্দে। প্রতিটি কান্না প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আমাদের হৃদয়ে। আসুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ মিলাই, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াই, আর গাজার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ, নির্যাতিতদের ধৈর্য দিন, গাজাকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিন।’
পবিত্র কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে পেসার শরিফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘যে ব্যক্তি একটি নির্দোষ মানুষকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করলো।’ – (সূরা মায়েদা: ৩২)। ফিলিস্তিনে প্রতিদিন নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরছে। ওরা আমাদের ভাই, ওরা আমাদের আত্মীয়। দোয়া করুন, গর্জে উঠুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে থাকুন।’ কেবল জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাই নন, গাজার জন্য কষ্ট প্রকাশ করেছেন যুবাদের নায়ক আকবর আলীও।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘গাজা শুধু একটি ভৌগোলিক নাম নয়, এটি যেন আজ নির্যাতিত মানুষের প্রতীক! দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। পুরো বিশ্ব এই গণহত্যার জন্য দায়ী থাকবে। বিশেষ করে আরবসহ প্রতিটি মুসলিম দেশ, যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এর প্রতিবাদ করেনি। হে আল্লাহ, গাজাসহ বিশ্বের প্রত্যেকটা মুসলমানকে আপনি কুদরতি শক্তি দ্বারা হেফাজত করুন।’
যখন গাজায় একের পর এক বোমা বিস্ফোরণে শিশুর কান্না আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়ে যাচ্ছে মানবতা, তখন স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের এক ফুটবল স্টেডিয়ামে বারবার গর্জে উঠছে এক অন্যরকম প্রতিবাদÑ সেই ক্লাবটির নাম সেল্টিক। ক্লাবটির সমর্থকরা বারবার দেখিয়ে দিচ্ছেন, ফুটবল শুধু খেলা নয়-এটা একটা ন্যায়ের কণ্ঠস্বর।
উয়েফা জরিমানা আরোপ করার পরেও সমর্থকরা থেমে থাকেনি। তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেনÑফিলিস্তিনের পাশে তাদের অবস্থান কখনোই বদলাবে না। ১৮৮৮ সালে দরিদ্র আইরিশ অভিবাসীদের সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় সেল্টিক ক্লাব। সেই মানবিক চেতনাই ফুটে উঠেছে সমর্থকদের মাধ্যমে।
ক্লাব কর্তৃপক্ষ যখন রাজনৈতিক বার্তা না দেওয়ার আহ্বান জানায়, তখন ক্লাবের সমর্থক গোষ্ঠী গ্রিন ব্রিগেড জানিয়ে দিয়েছে- ‘অন্যায়ের সামনে নিরপেক্ষ থাকা মানে হচ্ছে, অত্যাচারীর পাশে দাঁড়ানো।’ তারা মনে করিয়ে দেনÑএই ক্লাবের ইতিহাসই হলো নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানোর ইতিহাস।
জীবদ্দশায় কিংবদন্তি ম্যারাডোনা বলেছিলেন,‘আমার হৃদয়ে আমি ফিলিস্তিনি’। ক্রীড়াঙ্গনের মানবিক আহ্বান আরও একবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, খেলার ময়দান ছাড়িয়ে মানবতার লড়াইয়েও তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আছেন। আছেন বর্বরাত আর জুলুমের বিরুদ্ধে।