
সোহান, নাঈম ও বিজয়
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) আলো ঝলমলে ব্যাটিং উপহার দিয়ে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের দাবি জোড়ালো করে তুলেছেন এনামুল হক বিজয়, মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও নুরুল হাসান সোহান। ৮ ম্যাচ শেষে ৫৩০ রান নিয়ে সবার ওপরে বিজয়। গড় ৮৮.৩৩। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে সেঞ্চুরি ২ ও হাফ সেঞ্চুরি ৩টি অভিজ্ঞ এ ওপেনারের। আর প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের জার্সিতে নাঈমের ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফ। রান ৪৯১।
গড় ৭০ এর ওপরে। ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফ সেঞ্চুরিতে সোহান করেছেন ৪০১ রান। ব্রাদার্স ইউনিয়ন বোলারদের কচুকাটা করে নাঈম খেলেছেন ১৭৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। সঙ্গে সতীর্থদের কার্যকর অবদানে সেদিন চারশ’ ছাড়িয়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল প্রাইম ব্যাংক। যা ঢাকা ক্লাব ক্রিকেটের ইতিহাসে এতদিন কোনো দলই করতে পারেনি। যার ব্যাট ধরে এই ইতিহাস সে অবশ্য তা জানত না। শুধু নয় এনসিএল টি২০, বিপিএলের পর এখন ডিপিএল। নাঈমের রান উৎসব যেন থামছেই না। রীতিমতো উড়ছেন বাঁ হাতি ওপেনার।
‘গত দুই বছরের রানের অমন কোনো রহস্য নেই। উইকেট আন্দাজ করে, নিজের খেলা বুঝে ধারাবাহিক রান করার চেষ্টা করছি। আগের ভুলগুলো যেন আর না করি। বেশি করে শিক্ষা নিয়ে যেন ইনিংস লম্বা করতে পারি। ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি ৪০-৫০-৭০ রানে অনেক আউট হয়েছি। এখন যেদিন সেট হই, সেদিন আর মিস করি না। ভালো শুরু পেলে ইনিংস আরও লম্বা করার চেষ্টা করি।
যত লম্বা করা যায়... ১৩০-১৪০... ওয়ানডেতে কোনো সীমা নেই।’ বলছিলেন নাঈম। ওপেনিংয়ে অবস্থাটা বেশ কিছুদিন ধরেই নাজুক বাংলাদেশের, বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে। তানজিদ হাসান তামিম, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, এনামুল হক বিজয় কিংবা অন্য যারাই খেলুক বেশিরভাগই প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফর্মের তুঙ্গে থাকা নাঈম শেখ ওপেনিংয়ে আরও একটি সুযোগ তাই পেতেই পারেন। তাতে বদলে যাওয়া নাঈমের আন্তর্জাতিক মঞ্চের পরীক্ষাটাও হয়ে যাবে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বশেষ ৩ টুর্নামেন্টেই ব্যাট হাতে আলো ছড়াচ্ছেন নাঈম শেখ। এনসিএল টি২০র পর বিপিএলেও সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ছিলেন নাঈম। চলমান ওয়ানডে ফরম্যাটের ডিপিএলেও অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটছেন তিনি। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত গতিতে রান তুলেছেন নাঈম, খেলছেন বড়সড় সব ইনিংস। ম্যাচের পর ম্যাচ জেতাচ্ছেন দলকে। এমন নাঈমকে তো আগে দেখা যায়নি সেভাবে! এনসিএল টি২০ ঢাকা মেট্রোর হয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ ৩১৬ রান করেন এই বাঁ হাতি ওপেনার। একই ফরম্যাটের বিপিএলেও ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন নাঈম।
খুলনা টাইগার্সের জার্সিতে আসরের সর্বোচ্চ ৫১১ রান এসেছে নাঈমের ব্যাট থেকে, ৩ ফিফটির সঙ্গে হাঁকিয়েছেন ১ সেঞ্চুরি। স্ট্রাইকরেটও দারুণ নজরকাড়া, প্রায় ১৪৪! এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও উড়ন্ত ফর্মে ছিলেন নাঈম শেখ। মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ছেড়ে দেওয়া খালি জায়গায় সাদা বলে আবারও জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা আছে সোহানের। ২০২২ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচ শেষ করে মাঠ ছাড়েন সোহান।
এর আগে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেও চাপের সময় ৪৫ রানের ইনিংসে দলের জয় নিশ্চিত করেন কিপার-ব্যাটসম্যান। সাত ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ার পাঁচবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে সোহানের সংগ্রহ ৯৪.৮২ স্ট্রাইক রেটে ১৬৫ রান। তিনবার অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়ায় গড় অবিশ্বাস্য, ৮২.৫০। এই সাতটি ম্যাচ খেলতে তার লেগেছে সাত বছর! প্রায় দেড় বছর ধরে থমকে থাকা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আবার সুযোগ পেলে রেখে আসা ওই জায়গা থেকেই শুরু করার ইচ্ছা সোহানের,‘জাতীয় দলে খেলা একটা গর্বের ব্যাপার।
সবসময় চাই নিজের সেরাটা দেওয়ার। অবশ্যই সুযোগ এলে নিজের সেরাটা দেব। ওয়ানডেতে ভালো করেছিলাম। তবে যেখানে শেষ করেছিলাম, আমার মনে হয় ওই জায়গা থেকে যেন আবার শুরু করতে পারি, যদি সুযোগ আসে তাহলে ওইটাই চেষ্টা থাকবে।’