
আবদুল্লাহ হেল বাকী, হুমায়রা অন্তরা, শোভন চৌধুরী, রুবিনা ইসলাম ও শিরিন আক্তার
‘আজি সকল ধরা মাঝে বিরাট/মানবতা মূর্তি লভিয়াছে হর্ষে/আজিকে প্রাণে প্রাণে যে ভাব জাগিয়েছে/রাখিতে হবে সারা বর্ষে/এই ঈদ হোক আজি সফল ধন্য/নিখিল-মানবের মিলন জন্য/ ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ’। ... বছরে দু’বার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মেতে ওঠেন ঈদের বিমলানন্দে।
ক্রীড়াঙ্গনের ক্রীড়াবিদরাও এর বাইরে নন। ব্যস্ত ক্রীড়াসূচির বাইরে এই ঈদের ছুট পেলেই তারা বর্তে যান। চেষ্টা করেন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাতে। দেশের পাঁচ ক্রীড়া তারকার ঈদ নিয়ে নানা ভাবনার কথা জানতে চেষ্টা করেছে দৈনিক জনকণ্ঠ।
শিরিন আক্তার (স্প্রিন্টার) ॥ এখন সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে আছেন দেশের দ্রুততম মানবী (১৬ বারের) শিরিন আক্তার। শিরিন বলেন, ‘আসলে ঈদে বাবা-মা, আত্মীয় স্বজন সবার সঙ্গে দেখা হয়, এটা অনেক আনন্দের। আলহামদুলিল্লাহ। প্রিয়মুখগুলো দেখা, মা-বাবার স্পর্শ পাওয়া ... এগুলোই আমার কাছে মুখ্য বিষয়। এটাই আমার কাছে সর্বোচ্চ উপহার।
বাবার কাছে গিয়ে একটু বসা, মায়ের শরীরের ঘ্রাণ নেওয়া, তাকে জড়িয়ে ধরা, তাদের হাসির শব্দ প্রাণভরে শোনা, এগুলো তো রিয়েলি অর্গানিক; এগুলোই বেশি উপভোগ করি। অন্য সময় তো বাড়ি আসা হয় না। একমাত্র রমজানের ঈদেই আসা হয়।’
সবসময়ই যে মা-বাবার কাছ থেকে ঈদের সালামি পেতে হবে, এমনটা মনে করেন না শিরিন। বরং বাচ্চাদের সালামি দিতেই বেশি ভালো লাগে তার। শিরিন মনে করেন ছোটবেলার ও বড়বেলার ঈদ দু’টা দু’রকম। আলাদা আলাদা সৌন্দর্য, ‘ছোটবেলায় ঈদটা অন্যভাবে উপভোগ করেছি। তখন নতুন কিছু উপহার পেতে অনেক মুখিয়ে থাকতাম। এখন অন্যদের কিছু দিয়ে ও তাদের খুশি করে আনন্দ পেতে ভালো লাগে।’
কিছুদিন আগে জনকণ্ঠকে এক সাক্ষাৎকারে শিরিন জানিয়েছিলেন খুব শীঘ্রই নিজের বিয়ে নিয়ে একটা সারপ্রাইজ জানাবেন। সেই সময় কি এখনো আসেনি? শিরিনের লাজুক উত্তর, ‘এখনো সময় হয়নি। তবে অবশ্যই জানাব।’ তাহলে কি এটা ধরে নেওয়া যাবে যে অবিবাহিত অবস্থায় এটাই আপনার শেষ ঈদ? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন শিরিন।
বলেন, ‘নিশ্বাসের নেই বিশ্বাস!’ তাহলে কি ঈদের পরেই শিরিনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দেখা যাবে? ‘হতে পারে। তবে সেটার কোন শিওরিটি নেই, আর ওভাবে বলতেও পারছি না। ফিফটি-ফিফটি চান্সও নেই। বলা খুব কঠিন। সময় লাগবে। তবে আশা করতে পারেন ২০২৫ সালের মধ্যেই বিয়েটা হবে। দেখা যাক, আল্লাহ ভরসা।’
রুবিনা ইসলাম (হ্যান্ডবলার) ॥ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াকে বলা হয় বাংলাদেশের হ্যান্ডবলের আঁতুড়ঘর। এখান থেকে বের হয়েছেন অনেক প্রতিভাবান হ্যান্ডবলার, যারা দেশে-বিদেশে হ্যান্ডবল খেলে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাদেরই একজন রুবিনা ইসলাম। ঈদের ছুটি কাটাতে এখন পঞ্চগড়ে অবস্থান করা রুবিনা তার ঈদ-ভাবনা নিয়ে জনকণ্ঠকে জানান, ‘নিজে এখনো তেমন কিছু কিনিনি। তবে অন্যদের জন্য জামা কেনাকাটা করে তাদের গিফট দিয়েছি।’
ছোটবেলায় ঈদের সালামি পেতেন। আর এখন? ‘সালামি পাওয়ার দিন শেষ। এখন বরং সালামি দিতে হয়।’ রুবিনার জবাব। সালামির বাজেট কত? কতজনকে দেবেন? ‘ওভাবে সালামির বাজেট করা হয়নি। ছোট বোন আছে, দুই-তিনটা ভাগনি আছে, আরও কয়েকজন আছে।’
ঈদের দিন বাইরে ঘোরাঘুরির কোনো পরিকল্পনা এখনো করেননি বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে খেলা রুবিনার, ‘এখনো ঘোরার কোনো প্ল্যানিং নেই। তবে রান্নাবান্নার প্ল্যানিং আছে। কারণ সব বোনেরা একসঙ্গে থাকব। রান্নাবান্না করব। জানেন তো, আমার মা নেই। তাকে খুব মিস করব।’
শৈশবের ঈদ সবসময়ই আনন্দদায়ক ছিল রুবিনার, ‘তখন তখন বাবার টাকায় মার্কেটিং করতাম। আর এখন নিজের টাকায় শপিং করতে কষ্ট লাগে! ছোটবেলায় ঈদে আনন্দ করতাম, আর এখন ঈদে ছোটদের আনন্দ দেখে আনন্দ পাই।’
শোভন চৌধুরী (শূটার) ॥ তারকা শূটার শোভন চৌধুরী সিরাজগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে আছেন। সেখানেই ঈদ করবেন। খেলার সুবাদে বেশিরভাগ সময়ই ঢাকা ও দেশের বাইরে কাটাতে হয় তাকে। গ্রামে তেমন আসতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘ঈদের সময় গ্রামে আসতে পারলে দারুণ ভালো লাগে। এখান বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই আছে। সবচেয়ে যেটা বেশি আকৃষ্ট করে, তা হলো এখানে এলে বাল্যবন্ধুদের সান্নিধ্য পাই। এটা আমার জন্য অনেক রোমাঞ্চকর।’
ঈদের দিনে সবাইকেই সমান সময় দেবেন শোভন, ‘বিয়ের আগে বন্ধুরা সিঙ্গেল অবস্থায় ঘুরতাম। এখন বিয়ে করেছি, তাই সবাই তাদের স্ত্রী নিয়ে ‘ডাবল’ হয়ে একসঙ্গে ঘুরব। আগামীতে হয়তো ‘ট্রিপল’ হয়ে ঘুরবো, হা হা হা!’
এখন আর সালামি পান না। বড় হয়ে গেছেন তো! তার ভাই-বোনরাও তাই, ‘এখন ‘চাচা’ লেভেলে চলে গেছি! ভাগ্নে-ভাতিজাÑএদেরই সালামি দিয়ে অস্থির! ছোটবেলায় ঈদের সময় নতুন জামা লুকিয়ে রাখা .. এটা ছিল দারুণ ব্যাপার। এই ফিলিংসটা আর ফিরে আসবে না। আমরা যারা নাইন্টিজ কিডস, তাদের কাছে এটা একটা এক্সাইটিং ব্যাপার। জানি না এই প্রজন্মের বাচ্চাদের ভেতর এই জিনিসটা কেমন ও কতটা আছে।’
আবদুল্লাহ হেল বাকী (শূটার) ॥ তারকা শূটার আবদুল্লাহ হেহল বাকী। ঈদের ছুটিতে গাজীপুরে গ্রামের বাড়িতে গেছেন। বললেন, ‘ঈদের দিন তেমন কোন স্পেশাল কোনো প্ল্যান নেই। নামাজ পড়ব, মায়ের হাতেই শেমাই-পায়েস খাব। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরব। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করব ... এইতো। এছাড়া আরেকটা কাজ আছে, ছোটদের সালামি দিতে হবে।
আগে ছোটবেলায় অনেক ট্রিকস করে যেভাবে বেশি পরিমাণে সালামি আদায় করতাম, এখন ছোটরাও যখন আমার কাছ থেকে একই কৌশলে বেশি পরিমাণে সালামি আদায় করে, তখন খুব মজা লাগে। শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। আমার কিন্তু ছোটবেলার চেয়ে বড়বেলার ঈদই বেশি ভালো লাগে। এখন বড় হয়ে গেছি, মুরুব্বি ভাব দেখাতে পারি, বিষয়টা বেশ উপভোগই করি, হা হা হা!’
হুমায়রা অন্তরা (কারাতেকা) ॥ এসএ গেমসের স্বর্ণপদকজয়ী তারকা কারাতেকা হুমায়রা আক্তার অন্তরা কাছে গত বছরের ঈদুল ফিতর ছিল দারুণ আনন্দদায়ক। অনেক আত্মীয়-স্বজনের বাসায় ঘুরেছি। কাজনিডেদর সঙ্গে জম্পেশ আড্ডা। এসঙ্গে সবাই মিলে সিনেমা হলে গিয়ে মুভি দেখা।’ ঈদের দিনে চিকেন আর পোলাও রাঁধেন অন্তরা। তার শাশুড়ি পায়েস-সেমাই বেশি ভালো রান্না করেন।
মজার ব্যাপার, অন্তরা এখনো সালামি পেয়ে থাকেন! ‘আমার স্বামী ও শাশুড়ির কাছ থেকে সালামি পাই (দুই বা তিন হাজার টাকা করে)। দারুণ লাগে। এর ট্র্যাজেডি হলো, বাসায় সবার বড় তো, তাই যে সালামি পাই, তারচেয়েও বেশি সালামি দিতে হয় ছোটদের! ফলে প্লাসের চেয়ে মাইনাসেই থাকি আর্থিকভাবে, পুরোই লস হা হা হা! ঠিক করেছি এখন থেকে সালামি গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেব।’
খেলার পাশাপাশি পড়াশোনা-পরীক্ষা নিয়েও ব্যস্ত অন্তরা। ফলে এবার ঈদের আনন্দ তেমন উপভোগ করা হবে না তার। সবশেষে জানান, ‘ছোটবেলায় গ্রামের (রাজবাড়ী) ঈদে অনেক মজা হতো। চুড়ি-টুড়ি কিনতাম, মেলায় ঘুরতাম। মেহেদী মাখতাম। এগুলো অনেক অনেক মিস করি।’