ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

বাংলাদেশে রাগবির প্রতিষ্ঠাতা মৌসুম আলীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

প্রকাশিত: ২০:২০, ২৮ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ২০:৩০, ২৮ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশে রাগবির প্রতিষ্ঠাতা মৌসুম আলীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

রাগবি ফেডারেশনের নতুন সাধারণ সম্পাদকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করছেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক মৌসুম আলী (ডান থেকে চতুর্থ)

গত বছরের আগস্টে দেশের ক্ষমতার পট-পরিবর্তন হয়। প্রশাসনসহ সব কিছুতেই সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। ক্রীড়াঙ্গনেও তাই। এজন্য গঠিত হয় “সার্চ কমিটি”। এই কমিটি দেশের সব ক্রীড়া ফেডারেশন/এ্যাসোসিয়েশনগুলোর কমিটি বাতিল করে নতুন এ্যাডহক কমিটি প্রণয়ণ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশন ইউনিয়নেও রদবদল আসে। অব্যাহতি দেয়া হয় এর সাধারণ সম্পাদক মৌসুম আলীকে, যাকে বাংলাদেশে রাগবির প্রতিষ্ঠা বা জনক হিসেবে ধরা হয়।

সাধারণত দেখা যায় ক্ষমতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলে এটাকে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কিংবা দায়িত্ব হস্তান্তরে কালক্ষেপণ বা টালবাহানা করেন।  কিন্তু মৌসুম আলী এই পথে হাঁটেননি। বরং তিনি আন্তরিকভাবে ও হাসিমুখেই যথাসময়ে দায়িত্ব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাগবি ফেডারেশনের নতুন সাধারণ সম্পাদক আখতার জামানকে। মৌসুম আলীর এই বিরল-উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ক্রীড়াঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে।

একইসঙ্গে মৌসুম আলী রাগবি ফেডারেশনের নতুন এ্যাডহক কমিটির কাছেও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
গত ২২ মার্চ দায়িত্ব হস্তান্তরকালে মৌসুম আলী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে রাগবির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব হলো খেলাটিকে বাঁচিয়ে রাখা এবং যে বা যারা রাগবিকে সমর্থন করে তাদের সকলকে সমর্থন করা। পদে থাকি বা না থাকি, আমি রাগবির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাব। বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশন ইউনিয়নের নতুন নেতৃত্বের জন্য শুভকামনা।’

দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নতুন এ্যাডহক কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল জহির স্বপন, সহসভাপতি আনিস জামান ও আবু মো. সাজ্জাদ, কোষাধ্যক্ষ মালিক তালাহ ইসমাইল বারী, সদস্য মো. আশরাফ, সারোয়ার রাকিব এবং সাবেক সদস্য সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের ক্রীড়া ফেডারেশন/এ্যাসোসিয়েশনগুলোর মধ্যে যে অল্প কটি সক্রিয় বা ব্যস্ত, তাদের একটি রাগবি ফেডারেশন।
গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হয় আওয়ামী লিগ সরকারের। তারপরও দেশে চলে নানা সহিংসতা-অস্থিরতা। এর প্রভাব পড়ে দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও। ফলে নিরাপত্তার কারণেই দেশে বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের খেলাধুলা। তারপরও শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ব্যতিক্রম ছিল বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশন। থেমে ছিল না তাদের কার্যক্রম।

সারা বছর ধরেই রাগবির বিভিন্ন কার্যক্রম থাকে। করোনার সময়ও থেমে থাকেনি রাগবি ফেডারেশনের কার্যক্রম।  
ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, এটা সবাই জানে। তবে এর পরের স্থানটি কোন্ খেলার? বেশিরভাগ ক্রীড়াপ্রেমীর মতে, দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলাটি হচ্ছে রাগবি। বিশ্বের অনেক দেশই আছে, যাদের জাতীয় খেলাই হচ্ছে রাগবি। আরও অনেক দেশ আছে, যেখানে এ খেলাটি অন্য অনেক খেলার চেয়েও বেশি জনপ্রিয়। 

বাংলাদেশে রাগবির শুরুটা আসলে কিভাবে? কে বা কারা ছিলেন এর নেপথ্যে? এর উত্তর- মৌসুম আলী, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ রাগবি ফেডারেশনের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশে রাগবির আর্বিভাব ঘটে তার হাত ধরেই। ২০০৪ সাল থেকে রাগবি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। ২০০৬ সালে তাঁর চিন্তা থেকেই খন্দকার জামিলউদ্দিনকে সভাপতি করে রাগবি বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। শুরুটা ছিল দুঃখ-কষ্ট ও অন্ধকারের পথচলা। বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হয় রাগবিকে।

২০০৬ সালের অক্টেবরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে এ্যাসোসিয়েশন হিসেবে অনুমোদন লাভ করে বাংলাদেশ রাগবি ইউনিয়ন। কিন্তু দীর্ঘ সময় খেলাটি প্রসারের জন্য মাঠ সুবিধা পায়নি। নটরডেম কলেজের মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়াম, মোহামেডোন ক্লাবের মাঠে ... এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন মাঠে রাগবি খেলা চালিয়ে যেতে হলেও কখনই হতোদ্যম হননি মৌসুম। জাইকা ও জাপান দূতাবাসের দুই রাগবি প্লেয়ার পাওয়া যায় (নাম ওদামা ও সুজুকি)। তাদের মাধ্যমে সে মাসেই মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজের ১৩০ শিক্ষার্থীদের প্রথম রাগবি কোচিং করানো হয়। 
পরের বছর দেশীয় ক্রীড়া সাংবাদিকদের এ খেলাটি সম্পর্কে ধারণা দেয়ার দিতে একটি সেমিনার আয়োজন করেন মৌসুম আলী। এরপর আরামবাগ, ভিক্টোরিয়া, আজাদ ও মেরিনার্স- এ চারটি  ক্লাব নিয়ে পল্টন মাঠে ক্লাব কাপ টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়। ক্লাবগুলোকে খেলোয়াড় সরবরাহ করে রাগবি ইউনিয়নই। 

শুরুতে অনেকেই বলেছিলেন, এ খেলায় দর্শক হবে না। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হয়।  শুরুর দিকে রাগবির টুর্নামেন্ট চালাতে সামান্য একটা মাঠের জন্য মৌসুম আলীকে সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন বাধায়। এসব বাধা অতিক্রম করে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজের সহযোগিতায় তাদের মাঠকে কাজে লাগিয়ে চালিয়ে যেতে থাকেন একটার পর একটা টুর্নামেন্ট।

রাগবি যাত্রার শুরু থেকে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল মাঠের ভূমিকা ছিল আসাধারণ। এখানেই রাগবির জাজ, রেফারি, কোচের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের নিয়েই শুরু হয় এগিয়ে চলার কাজ। বিভিন্ন স্কুলে-কলেজে ট্রেনিং দিয়ে শুরু হয় টুর্নামেন্ট। মৌসুম আলীর সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ রাগবি ইউনিয়ন কাজ করে যায় দ্রুতগতিতে। তবে সমস্যা ছিল শুধু মাঠের, যেটা এখনও আছে। নতুন এ্যাডহক কমিটিকে এই সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জে কতটা সফল হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। 

 

রুমেল খান /রাজু

×