ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কীর্তিগাথা

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ২৬ মার্চ ২০২৫

স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের কীর্তিগাথা

একটি ম্যাচ খেলতে মাঠে নামছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। ডানে অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু, মাঝে কাজী সালাউদ্দিন

সবুজ মাঠ। লাল সূর্যের মাঝে হলুদ মানচিত্র। পতপতিয়ে ওড়া পতাকাটির দেশের তখনো জন্ম হয়নি। আর তা গর্বভরে উঁচিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করছেন একদল টগবগে তরুণ। এরাও মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু হাতে বন্দুক নেই। জার্সি আর শর্টস পায়ে বুট পড়ে পতাকার মান রাখতে সারা ভারত জুড়ে খেলে বেড়াচ্ছে তারা। তারাই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য। 
১৬টি প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচ খেলে মোট ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ভারতীয় রূপী আয় করে তা মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে জমা দিয়েছিল এ ই দলটি। পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধকালীন প্রথম ফুটবল দল এটি। দলে ছিলেন এক কোচ, এক ম্যানেজার এবং ৩৪ ফুটবলার। এদের অনেকেই এখন আর পৃথিবীতে নেই। আজ মহান স্বাধীনতা দিবসে এই সব কীর্তিমানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে জাতি। 
দলগঠনের আইডিয়াটা আসে শামসুল হকের মাথা থেকে। ১৯৭১ সালের জুনের সেই দূরন্ত দিনগুলোতে কলকাতায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি। সিদ্ধান্ত নেন একটি ফুটবল দল গঠনের, যারা সারা ভারতজুড়ে খেলে সমর্থন আদায় করবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য। তার সাহায্যে এগিয়ে এলেন সমিতির প্রথম সেক্রেটারি লুৎফর রহমান, কোচ আলী ইমাম ও ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের সাবেক ফুটবলার সাঈদুর রহমান প্যাটেল।
তাদের তৎপরতায় ভারতের আকাশবাণীতে একটি বিবৃতি প্রচার হলো। যাতে পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত ফুটবলারকে যোগ দিতে বলা হলো একটি বিশেষ ঠিকানায়। ঘোষণা দিতে বাকি, কদিনের মধ্যেই কোচ ননী বসাকের অধীনে ৩০ জনের মতো খেলোয়াড় ট্রায়ালে যোগ দিলেন। তাদের মধ্যে থেকে ২৫ জনকে বাছাই করা হলো। পরে অবশ্য ভারত সফরে আরো বেশ কজন খেলোয়াড় দলে যোগ দেন। 
২৪ জুলাই এলো সেই ঐতিহাসিক দিন। জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে কৃষ্ণনগর একাদশের বিপক্ষে প্রথম খেলতে নামে লাল-সবুজরা। খেলাটি ড্র হয় ২-২ গোলে। ম্যাচের আগে আয়োজকদের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মাঠে নামেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। এ নিয়ে অনেক সমস্যা হয়। পতাকা উড়ানোর অনুমতি দেওয়ায় নদীয়ার জেলা প্রশাসক সাসপেন্ড হন। আর ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বাধ্য হয় নদীয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগী পদ বাতিল করতে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ৩ হাজার টাকা থেকে তা উন্নীত করা ২০ হাজার টাকায়। তারপরও বর্তমান সময়ে এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যদের বয়সের সঙ্গেও এই অঙ্কের সম্মানী একেবারেই বেমানান। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ৩৫ জনের তালিকা থেকে বর্তমানে সংখ্যা ১৭-তে এসে দাঁড়িয়েছে। 
এছাড়া স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

×