
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হামজা চৌধুরী
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত নাম হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ইংলিশ ফুটবলের আলোচিত এই সুপারস্টারের কিছুদিন আগে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলা নিশ্চিত হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইয়ের ম্যাচে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচেই লাল-সবুজের জার্সি গায়ে অভিষেক হবে ২৭ বছর বয়সী হামজার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লেস্টার সিটি থেকে এখন তিনি ধারে খেলছেন চ্যাম্পিয়নশিপের ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডে।
ভারত ম্যাচের আগে সপরিবারে বাংলাদেশে আসছেন হামজা চৌধুরী। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডারের বাংলাদেশে আগমণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সব ঠিক থাকলে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপে শেফিল্ড ওয়েডনেসডের বিরুদ্ধে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে ম্যাচ খেলেই সিলেটের বিমান ধরবেন হামজা। ম্যাচটি মাঠে গড়াবে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে। তার মানে খেলা শেষ হবে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে। ম্যাচটি শেষে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বিমানে চড়বেন বাংলার আকাক্সিক্ষত তারকা। সময়ের হিসেবে হামজার সিলেট পৌঁছানোর কথা আছে সোমবার সকালে।
এর আগেও বাংলাদেশে এসেছেন হামজা। তবে এবারের আসাটা বিশেষ কিছু। এই প্রথমবার তিনি বাংলাদেশের ফুটবলার হিসেবে লাল-সবুজের দেশে পা রাখছেন। যে কারণে হামজা তথা বাংলাদেশের মানুষ সবার কাছেই মুহূর্তটি স্মরণীয়। হামজার সঙ্গে আসছেন তার মা, স্ত্রী, তিন সন্তান ও দুই ভাই। বাবা আগেই চলে এসেছেন। তিনি এখন হবিগঞ্জের বাহুবলের স্নানঘাটের গ্রামের বাড়িতে সবকিছু তদারকিতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। ইংল্যান্ড থেকে আসা পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সিলেট থেকেও কয়েকজন সঙ্গী হতে পারেন। হামজার ইচ্ছা, বাংলাদেশের জার্সিতে তার অভিষেক মাচটা যেন পরিবারের সবাই মাঠে বসে দেখেন। জানা গেছে, সিলেটে নেমে সরাসরি হবিগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা হামজা চৌধুরীর।
সোমবার সিলেট পৌঁছে সেদিন রাতটা হামজা তার নিজের গ্রামের বাড়িতে কাটাবেন। এরপর মঙ্গলবারও সেখানে থাকতে পারেন, আবার দিনের শেষ ফ্লাইট ধরে ঢাকায়ও চলে আসতে পারেন। বিষয়টা এখনো নিশ্চিত নয়। বুধবার দুপুরে টিম হোটেলে বাংলাদেশ দলের অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা আছে। সেখানে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ, অধিনায়ক ও হামজা কথা বলবেন। এর আগে সকালে হবে দলীয় ফটোসেশন। বিকেল বা সন্ধ্যায় অনুশীলনে নামার কথা পুরো দলের। ভারত ম্যাচের অন্তত পাঁচদিন আগে শিলংয়ে যেতে চান বাংলাদেশ কোচ জ্যাভিয়ের কাবরেরা। তার ইচ্ছাই পূরণ করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বৃহস্পতিবার সকালে ফ্লাইটে কলকাতা হয়ে শিলংয়ে যাবে বাংলাদেশ দল। যাওয়ার আগে হাতে সময় কম। তাই হামজার জন্য আপাতত বলার মতো কোনো সংবর্ধনা হচ্ছে না বলে বাফুফে সূত্রে জানা গেছে।
হামজার আগমণকে কেন্দ্র করে হবিগঞ্জের গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দ-শিহরণ বিরাজ করছে। সেখানে পথে পথে সড়কে তোরণ স্থাপন করা হয়েছে। সাধারণত দেখা যায়, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এলাকায় গেলে তাকে ঘিরে পথে পথে তোরণ স্থাপন করা হয়। কিন্তু একজন ফুটবলারের আগমন উপলক্ষে যেভাবে পথে পথে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে তা বিস্ময়কর। বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে এমন দৃশ্য আগে দেখা যায়নি। সিলেট মহাসড়ক থেকে হামজার গ্রাম স্নানঘাট পর্যন্ত পথে পথে তোরণের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। ওখানকার মানুষ এতদিন মেসি- রোনাল্ডো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এখন সেই মুখে হামজা চৌধুরীর নাম। স্নানঘাটের সাধারণ মানুষের মনে এখন অন্য রকম আনন্দ। হামজার লন্ডন প্রবাসী বাবা দেওয়ান মোরশেদ ছেলের আগমন উপলক্ষে পুরো বাড়ি নিরাপত্তা দিয়ে ঘিরে রাখার ব্যবস্থা করছেন। হামজার পরিবারের আগমণে যেভাবে গ্রামের মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন তাতে সাধারণ জীবন যাপন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন দেওয়ান মোরশেদ। তবে তিনি সাধারণ মানুষের তার ছেলের প্রতি ভালবাসায় মুগ্ধ হয়েছেন। তার বিশ্বাস, হামজা আসার পর মানুষের ভালবাসার সীমা ছাড়িয়ে যাবে।
হামজার দুই ছেলে এক মেয়ে। লন্ডনের বাড়িতে প্রতি সপ্তাহে মিলাদ পড়েন তারা। দেওয়ান মোরশেদ জানান হামজা লন্ডনে কুরআন শিখেছেন। রোজা রাখেন, কিন্তু ম্যাচের দিন রোজা থাকেন না। স্ত্রী অলিভিয়া হামজার সঙ্গে বিয়ের আগেই মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তিনিও কুরআন পাঠ করেন। এখন অনলাইনে সন্তানদের ইসলামের শিক্ষা দিচ্ছেন।