ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

দোনারুম্মার বীরত্বে শেষ আটে পিএসজি

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৪৪, ১৩ মার্চ ২০২৫

দোনারুম্মার বীরত্বে শেষ আটে পিএসজি

পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজ দোনারুম্মা

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নতুন ফরম্যাটে এবার শুরু থেকেই উড়ছিল লিভারপুল। সর্বোচ্চ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে গ্রুপ পর্বের বাধা অতিক্রম করে আর্নে স্লটের দল। শেষ ষোলোর প্রথম লেগেও প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর মাঠ থেকে জয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল ইংলিশ জায়ান্টরা। ফলে শেষ আটের টিকিট কাটাটাকে কেবলই ‘সময়ের ব্যাপার’ হিসেবে ধরে নিয়েছিল অনেকেই। কেননা  দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটা ছিল তাদেরই মাঠে।

কিন্তু বিধিবাম, মঙ্গলবার নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডেই লিভারপুলের জয়যাত্রা থামিয়ে শেষ আটের টিকিট নিশ্চিত করে পিএসজি। এর নেপথ্য নায়ক পিএসজি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজ দোনারুম্মা। দ্বিতীয় লেগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিট শেষেও ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল পিএসজি।

ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ফলাফল দাঁড়ায় ১-১ সমতায়। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারেই বাজিমাত করেন পিএসজি গোলরক্ষক। লিভারপুলের দুই শট ঠেকিয়ে টাইব্রেকারে ৪-১ ব্যবধানে জিতে পিএসজির শেষ আটের টিকিট নিশ্চিত করেন দোন্নারুমা।
মঙ্গলবার এর আগেই অবশ্য এবারের আসরের প্রথম দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় বার্সেলোনা। প্রথম লেগে ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা কাতালান ক্লাবটি এদিন দ্বিতীয় লেগে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেয় বেনফিকাকে। সেইসঙ্গে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ ব্যবধানে জিতে শেষ আটের টিকিট কাটে হ্যান্সি ফ্লিকের দল। এই ম্যাচে জোড়া গোল করে রেকর্ড গড়েন বার্সেলোনার ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনহা।

সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল এবং অ্যাসিস্টের নজির গড়েছেন কাতালান ক্লাবটির স্প্যানিশ তরুণ লামিন ইয়ামালও। বার্সা ছাড়াও এদিন কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ এবং ইন্টার মিলান। বায়ার্ন এদিন ২-০ গোলে বায়ার লেভারকুসেনকে হারালে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-০ ব্যবধানের বড় জয়ে পরের রাউন্ডের টিকিট কাটে। অন্যদিকে, ইন্টার মিলান ২-১ ব্যবধানে ফেইনুর্ডকে হারায়। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলে জিতে পরের রাউন্ডে জায়গা করে নেয় তারা।  
তবে মঙ্গলবার ফুটবলপ্রেমীদের বাড়তি নজর ছিল অ্যানফিল্ডে। তবে নিজেদের মাঠ আর নিজেদের সমর্থকদের সামনে এদিন সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি লিভারপুল। বরং প্রথম লেগে ১ গোলে পিছিয়ে থাকা পিএসজি এদিন ম্যাচের শুরুতেই গোল করে এগিয়ে যায়। ১২ মিনিটে স্বাগতিক সমর্থকদের হতাশায় ডুবিয়ে পিএসজিকে গোল উপহার দেন উসমান ডেম্বেলে। ফলাফল দাঁড়ায় ১-১। এরপর গোলের জন্য দুইদলই সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।

কিন্তু ৯০ মিনিট এমনকি অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিটেও কেউ গোলের দেখা না পেলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। পিএসজির হয়ে শট নেন ভিতিনিয়া, গনসালো রামোস, ডেম্বেলে এবং দিসায়ার দুয়ে। চার জনের সকলেই লিভারপুলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকে হতাশ করে জালে বল জড়ান। অন্যদিকে, লিভারপুলের ডারউইন নুনেজ এবং কার্টিস জোনসের দুই শট দারুণ কৌশলগত দক্ষতায় আটকে দেন দোনারুম্মা।

এরপর পিএসজি চতুর্থ শটেও গোল পেলে লিভারপুলের আর শট নেওয়ার দরকার হয়নি। নতুন ফরম্যাটে গ্রুপপর্বে এবার একটি মাত্র ম্যাচে পরাজয় দেখেছিল লিভারপুল। নতুন কোচ আর্নে স্লটের অধীনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের মতো প্রিমিয়ার লিগেও উড়ছিল ভার্জিল-সালাহরা। কিন্তু পিএসজির কাছে টাইব্রেকারে হেরে লিভারপুরের এমন বিদায়ের কারণ খুঁজছে ফুটবলবোদ্ধারা। 
এদিকে, লিভারপুলের মতো ১ গোলের লিড নিয়ে দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বেনফিকাকে আতিথ্য দেয় বার্সেলোনা। তবে কাতালান ক্লাবটি কোন ভুল করেনি। ১১ মিনিটেই লামিন ইয়ামালের অ্যাসিস্ট থেকে গোল করে বার্সাকে এগিয়ে দেন রাফিনহা। কিন্তু দুই মিনিট পরই নিকোলাস ওটামেন্ডি গোল করলে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় বেনফিকা। কিন্তু প্রথমার্ধে আরও দুই গোল করে বার্সেলোনা। ২৭ মিনটে দ্বিতীয় গোলটি করেন কাতালানদের তরুণ জাদুকর ইয়ামাল।

এই সময়ে বেনফিকা ডিফেন্ডারদের এড়িয়ে বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে টাচলাইনে চলে যান ইয়ামাল, সেখান থেকেই ধীরে ধীরে আবার পেছনে ফিরে বক্সের মাথায় চলে আসেন। গোলমুখে তেমন কিছু হবে না ভেবে দুই দলের সবাই যখন সামনের দিকে চলে আসা শুরু করেন, তখন বাঁ পায়ে দূরের পোস্টে কোনাকুনি শট করেন ইয়ামাল। তখন ঝাঁপিয়ে পড়েও কিছু করার ছিল না বেনফিকা গোলকিপারের। এই গোলেই রেকর্ড গড়েন ইয়ামাল। 
১৭ বছর ২৪১ দিন বয়সী এই স্প্যানিশ তরুণই এখন চ্যাম্পিয়নস লিগের একই ম্যাচে  গোল এবং অ্যাসিস্ট করা সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার। তিনি ভেঙেছেন ব্রিল এমবোলোর ১৭ বছর ২৬৩ দিন বয়সে করা এক ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্টের  রেকর্ড। ৪২ মিনিটে রাফিনহা ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোল করলে বড় জয়েই পরের রাউন্ডের টিকিট নিশ্চিত করে বার্সা।

সেইসঙ্গে চ্যাম্পিয়নস লিগে এবারের আসরে সর্বোচ্চ ১১ গোলের রেকর্ডও গড়েন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে ব্রজিলের আর কেউ কোনো ক্লাবের হয়ে কোনো বছরই ১০ গোলের বেশি করতে পারেননি। এদিন হ্যারি কেনও বায়ার্নের হয়ে ১০ম গোল করেন। এক মৌসুমে যা যে কোনো ইংলিশ ফুটবলারের চেয়ে বেশি গোলের নজির।

×