
ট্রফিতে আবেগী চুম্বন বড় তারকা বিরাট কোহলির। অন্যদিকে ট্রফিতে চুমো দিচ্ছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা
১৯ নভেম্বর ২০২৩- আহমেদাবাদে বিশ্বের সর্বাধিক ১ লাখ দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম কানায় কানায় পরিপূর্ণ। প্রার্থনায় শতকোটি ভারতবাসী। কিন্তু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে সেদিন ভাগ্য সঙ্গে ছিল না মেন ইন ব্লুদের। অপরাজিত থেকে দাপটের সঙ্গে ফাইনালে উঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পোড়ে রোহিত শর্মার দল।
২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপ জিতে সেই ক্ষতে সান্ত¦নার প্রলেপ দেওয়া ভারত বছর না ঘুরতেই আরও একবার বাজিমাত করল। একযুগ পর জিতল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা। বিশ্বকাপের সেই ফাইনালে হারের পরই অনেকে রোহিত-কোহলির শেষ দেখছিলেন, সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন দুই তারকা। সেই তাদের হাত ধরেই টানা আইসিসির মেজর দুটি আসরের শিরোপা পুনরুদ্ধার করল ভারত। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান বধের দিনে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। দুবাইয়ের মেগা ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষ ৭৬ রানের অনবদ্য ইনিংসে ম্যাচসেরা হয়ে ব্যাট হাতেই জবাব দিলেন ‘হিটম্যান’ রো-হিট!
আইসিসির ইভেন্টে নিজেদের শেষ ২৪ ম্যাচে একটি মাত্র হার, ২০২৩ বিশ্বকাপের সেই ফাইনালে, বাকি ১৩টিতেই জয়Ñএই ভারত কতটা অপ্রতিরোধ্য পরিসংখ্যানেই সেটি স্পষ্ট। আহমেদবাদে সেদিন ফাইনালের আগে রোহিত বলেছিলেন, বিশ্বকাপের সঙ্গে কী আর কিছুর তুলনা চলে। ফরম্যাট সেই ওয়ানডে। আট দেশের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপায় আক্ষেপের কতটা ঘুঁচল, ওয়ানডে বিশ্বকাপ তো ওয়ানডে বিশ্বকাপই, ছোটবেলা থেকে তা-ই জানতাম। তখন টি২০ বিশ্বকাপ ছিল না, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ছিল না, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছিল না।
তবে, এটিও কম নয়। আমাকে আগে বলুন, এটা জিততেও কত কিছু লাগে। দেখুন, ট্রফি তো ট্রফিই। যে কোনো ফাইনাল জিতলেই অনেক গর্ব অনুভূত হয়। শুধু আমারই নয়, পুরো দল, গোটা দেশের আজকে খুশি থাকার কথা। কারণ, যে কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল জিততে পারাই অনেক বড় অর্জন। উইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার পর তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুটি শিরোপা জয়ে গর্বিত রোহিত। মুম্বাই থেকে চেন্নাই, বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা- ক্রিকেটপাগল শতকোটি মানুষ যেভাবে উৎসবে মেতে উঠেছে, তাতেই তো পরিষ্কার এই ট্রফির শূল্য কোনো অংশে কম নয়।
১৯৯৮ সালে প্রবর্তিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এটি ছিল নবম আসর। প্রথম প্রথম শিরোপার স্বাদ পায় ২০০২ সালের তৃতীয় আসরে (শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে)। ২০১৩ সালে এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইসিসির তিন শিরোপায় (২০০৭ টি২০ বিশ্বকাপ, ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ) ইতিহাস গড়েন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০১৭ সালে এর আগের আসরে ভারত ফাইনালে হারে পাকিস্তানের কাছে।
১৯৯৬ বিশ্বকাপের পর দীর্ঘ ২৯ বছরে ফের আইসিসির টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলে আমিরাতের দুবাইয়ে। সেই শুরু থেকে ফাইনাল পর্যন্ত একই ভেন্যুতে খেলার সুবিধা নিয়ে আসরজুড়ে খোঁচা শুনতে হয়েছে রোহিত ও তার দলকে। গত ১৪ বছরে আইসিসি আসরগুলোয় ভারতের ধারাবাহিকতা অবিশ্বাস্য।
২০২৩-এ ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টেও ফাইনালে উঠেছিল দলটি। সহসাই এই দাপুটে পথচলার শেষ দেখছেন না বিরাট কোহলি, সবাই চায়, ছেড়ে যাওয়ার সময় দলকে আরও ভালো জায়গায় রেখে যেতে। আমার মনে হয়, এমন একটি স্কোয়াড আমাদের আছে, আগামী আট বছর গেটা বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দিতে পারি। শুভমান অসাধারণ করছে, শ্রেয়াস দারুণ, কেএল (রাহুল) ম্যাচ শেষ করছে নিয়মিত এবং হার্দিকও দুর্দান্ত করছে।
ভারতীয় সুপারস্টার বলেন, শিরোপা জয়ের জন্য সবাইকেই বিভিন্ন ম্যাচে এগিয়ে আসতে হয়। আমরাও পেরেছি বলেই এই টুর্নামেন্ট জিততে পেরেছি। ছেলেরা এতটা প্রভাব বিস্তারি ইনিংস খেলেছে, ছাপ রাখার মতো সব স্পেল করেছে... এ রকম সম্মিলিত পারফরম্যান্সই শিরোপা এনে দেয়। আমি খুবই খুশি যে, আমরা একতাবদ্ধ হয়ে খেলতে পেরেছি এবং নিজেদের সঙ্গ উপভোগ করি। দল হিসেবে অসাধারণ সময় কেটেছে।
পরিস্থিতির কারণেই ভারত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ভেন্যুতে (দুবাইয়ে) খেলেছে, তবে মাঠের ক্রিকেটেও ডমিনেট করেছেন রোহিত, কোহলি, বরুণ চক্রবর্তী, অক্ষর প্যাটেল, শ্রেয়াস আইয়াররা। বিপরীতে আরও একটি ওয়ানডে আসরের ফাইনালে হারের বেদনায় পুড়তে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে।
এর আগে ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপা জেতা হয়নি ভাগ্যাহত ব্ল্যাক-ক্যাপসদের। তবে বিশ্বাস জন্মেছে, সাফল্য আসবেই, সত্যি এটা খুব কষ্টদায়ক। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমরা একদিন সফল হবাই। বলছিলেন অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার।