ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ মার্চ ২০২৫, ২২ ফাল্গুন ১৪৩১

বিদায়ী ভালোবাসায় সিক্ত মুশফিক

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৪০, ৭ মার্চ ২০২৫

বিদায়ী ভালোবাসায় সিক্ত মুশফিক

ওয়ানডেকে বিদায় বলা মুশফিকুর রহিম ‘গার্ড অব অনার’ পেয়েছেন

৩ বছর আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসর নিয়েছিলেন, বুধবার রাতে একইভাবে ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। তাই মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ম্যাচে ছিল গণমাধ্যমের ভিড়।

বৃহস্পতিবার ম্যাচ শেষে সবাই অপেক্ষা করেছেন মুশফিক যদি কিছু বলেন, কিন্তু গণমাধ্যমের সামনে আসেননি মুশফিক। এখন শুধু টেস্ট খেলবেন তিনি বাংলাদেশের হয়ে। তার অবসরে সকালে মোহামেডান ও রূপগঞ্জ টাইগার্স ম্যাচ শুরুর আগে ক্রিকেটাররা সারিবদ্ধ হয়ে গার্ড অব অনার দিয়েছেন মুশফিককে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ দলকে কৃতিত্বের সাথে প্রতিনিধিত্ব করায় কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।

বিসিবি সভাপতি বিবৃতিতে মুশফিককে ধন্যবাদ দিয়েছেন। আর বুধবার রাত থেকেই মুশফিকের দীর্ঘদিনের সতীর্থরা ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। মুশফিকের সহধর্মিণী জান্নাতুল কিফায়ার মন্ডিও আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন।
মিরপুরে খুব সকালে মুশফিক তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ ক্রিকেটারদের কাছ থেকে পেয়েছেন গার্ড অব অনার। আগের রাতে তিনি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন। তার দল মোহামেডানে অধিনায়ক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তামিম ইকবাল ছাড়াও জাতীয় দলের অনেক সতীর্থই আছেন। মুশফিক অবসর নেওয়ার পরই তামিম এক ভিডিও বার্তা দেন বুধবার রাতে।

সেখানে তিনি বলেছেন,‘একটা মানুষের পক্ষে যতটা কষ্ট করা সম্ভব আমার মনে হয় সে সবটুকুই করেছে। আজকে ওর খেলা ছেড়ে দেওয়া কত কষ্টকর আমি যেহেতু ওর কাছের একজন বন্ধু আমি এই জিনিসটা ফিল করতে পারি। যে এটা খুব কঠিন তার জন্য। একটা ফরম্যাটে ক্রিকেটার হিসেবে তো আমি এটা আশা করব যে ১০০তম টেস্ট অবশ্যই খেলবি তুই।’ দীর্ঘদিন মুশফিকের অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

তিনি ফেসবুকে লিখেছেন,‘ওয়ানডেতে তোমার রেকর্ডই তোমার হয়ে সাক্ষ্য দেবে অনেক কিছুর। তোমার ব্যাটের দ্যুতিতে কত আলোর দিন এসেছে দেশের ক্রিকেটে!’ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিক একই পরিবারে বিয়ে করেছেন। মাহমুদুল্লাহ লিখেছেন,‘দুবাইয়ে ভাঙা পাঁজর নিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তোমার সেই সেঞ্চুরি আমার এখনো মনে আছে।

এটাই খেলাটার প্রতি তোমার সম্মান, তোমার নিবেদন এবং পরিশ্রমের প্রমাণ, যে তুমি সর্বোচ্চ স্তরে পারফর্ম করার জন্য এবং এটা সর্বদা যে কোনো খেলোয়াড়কে অনুপ্রাণিত করবে। নিঃসন্দেহে তুমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটা রতœ।’ 
অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ লিখেছেন, ‘আপনার কঠোর পরিশ্রম, অটুট প্রতিজ্ঞা আর আত্মত্যাগ সবসময়ই আমাদের অনুপ্রাণিত করে, প্রভাবিত করে। ক্রিকেটের ২২ গজে, সাদা বলের ফরম্যাটে আপনার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্তকে মিস করব। আপনার পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা।’ ওয়ানডে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত লিখেছেন, ‘লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ধন্যবাদ মুশফিক ভাই।’

সৌম্য সরকার লিখেছেন,‘অবসর শেষ নয়, নতুন অধ্যায়ের শুরু মাত্র।’ তাসকিন আহমেদ লিখেছেন,‘একটি অধ্যায় শেষ হলো! মুশি ভাই, আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট কল্পনা করা কঠিন। আপনার প্যাশন, ডেডিকেশন, ফাইটিং স্পিরিট সবকিছুই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। আপনার সাথে মাঠ শেয়ার করতে পারা এবং শিখতে পারা আমার জন্য দারুণ সম্মানের ব্যাপার ছিল।’

মুশফিকের এলাকা বগুড়া থেকে উঠে আসা তাওহিদ হৃদয়ের আইডল তিনি। সেই  স্মৃতি নিয়ে তাওহিদ লিখেছেন,‘বগুড়া স্টেডিয়ামে আপনি (মুশফিক) প্র্যাকটিস করছেন শুনে ছোটবেলায় আপনাকে দেখার আশায় স্টেডিয়ামের গেটের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে শুরু করে, ওডিআই - এর আন্তর্জাতিক ক্যাপ আপনার হাত থেকে গ্রহণ করা এবং একই ড্রেসিংরুম শেয়ার করা- আমার কাছে রূপকথার গল্পের থেকে কম নয় যদিও আমি বাকরুদ্ধ হয়ে আছি, তবুও আপনাকে অবসরের জন্য শুভকামনার বার্তা, আইডল মুশফিকুর রহিম।’ এছাড়া তানজিদ হাসান তামিম, রিশাদ হোসেন, জাকের আলী অনিকরা তাকে নিয়ে লিখেছেন। 
বিসিবিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে মুশফিকের প্রতি। ১৯ বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন তিনি ওয়ানডেতে। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বিবৃতিতে বলেছেন,‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ওয়ানডেতে মুশফিকের দেওয়া অসাধারণ সার্ভিসের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। মুশফিক বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে যে অসাধারণ নিবেদন, আবেগ এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে এসেছেন তা বিসিবি স্বীকার করছে।

ব্যাটিং এবং উইকেটকিপিংয়ে তার অবদান দেশের ক্রিকেটের অগ্রগতিতে রেখেছে অপরিসীম ভূমিকা। মুশফিকুর রহিমের কাজের মনোভাব, দৃঢ়তা এবং অবিচল সংকল্প এমন উদাহরণ যা আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।’ মুশফিকপতœী দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন যেখানে তার ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের কথাই বলেছেন।

তিনি লিখেছেন,‘নিজের প্রতি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখেছি, ভাঙা পাঁজর নিয়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে একসঙ্গে ২০টা পেইনকিলার নিয়েও খেলতে দেখেছি! তুমি কখনো নিজের জন্য খেলোনি, বরং দল ও দেশপ্রেমের জন্যই খেলেছ!’

×