
কুষ্টিয়ায় বৃহস্পতিবার শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত ও দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ঊর্বরভূমি কুষ্টিয়ায় শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) কুষ্টিয়ায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে তিনি স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেন।
শহীদ আবরার ফাহাদের অপার সাহস এবং দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা আমাদের সামনে চিরদিনের উদাহরণ। তাঁর আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে কুষ্টিয়ায় শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী, যুগ্ম সচিব আমিনুল ইসলাম ও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ।
এর আগে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা শহীদ আবরার ফাহাদের গ্রামের বাড়ি কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাঙ্গা গ্রামে যান। সেখানে তিনি আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন। পরে আবরারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর আবরার ফাহাদ জামে মসজিদের সম্প্রসারণ কাজের ফলক উন্মোচন করেন।
এরপর কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমিতে মতবিনিময়কালে আসিফ মাহমুদ কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিকাশ ও অন্যান্য জরুরী প্রয়োজনে ৩ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন। সেখানে তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিসকে আমরা আর পার্টি অফিস হতে দেবো না। স্টেডিয়াম উদ্বোধনের সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘আগ্রাসনবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ে আবরার ফাহাদ একটি নতুন ধাপ সংযোজন করে দিয়ে গেছেন। আমরা সেই লড়াইয়ে তাঁকে সামনে রেখে চালু রাখতে চেয়েছি। আবরার ফাহাদ শুধু একটি নাম নয়, আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের একটি জার্নি। সেই জার্নির একটা অন্যতম অর্জন হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এ দেশের তরুণেরা জীবন দেওয়ার প্রেরণা পেয়েছে আবরার ফাহাদের কাছ থেকে। আগ্রাসন থেকে মুক্তির জন্য এ দেশের তরুণেরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজপথে। অবশেষে আমরা আগ্রাসী পরাশক্তির বাংলাদেশীয় সবচেয়ে বড় খুঁটি শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছি।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সহস্র শহীদ ও আহতকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ ও আগ্রাসনবিরোধী সংগ্রামে আবরার ফাহাদসহ যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের বাংলাদেশের মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মনে রাখবে। সে জন্য কুষ্টিয়া জেলা স্টেডিয়ামের নাম আবরার ফাহাদের নামে করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে আরও যত সরকারি স্থাপনা রয়েছে, আমরা সেখানে আত্মত্যাগকারী বীরদের, শহীদদের স্মরণ করার জন্য তাঁদের নামে নামকরণ করব।’
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকার আবরার ফাহাদের স্মৃতি মুছে দিতে চেয়েছিল। তারা কোনো সংবাদ করতে দিত না, কর্মসূচি পালন করতে দিত না। কর্মসূচি পালন করতে গেলে সেখানে হামলা হতো। জেল-জুলুমের শিকার হতে হতো। যাঁরা আত্মত্যাগ করেন, তাঁদের নাম মুছে ফেলা যায় না। এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর এখন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ আবরার ফাহাদকে স্মরণ করে। আগ্রাসনবিরোধী প্রতিটি লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকেন শহীদ আবরার ফাহাদ।’
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘ষড়যন্ত্র এখনো চলমান। ছোটখাটো নানা ইস্যুতে জনগণকে বিভক্ত করার, একজনকে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে পরাজিত শক্তি। নানা ধরনের উগ্রবাদীকে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ ধরনের যেকোনো প্রচেষ্টাকে অন্তর্বর্তী সরকার কঠোরভাবে দমন করবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি ও পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার জেরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ) নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
নুসরাত