
মাত্র ৬৭ বলে অপরাজিত ১০০ রান করেও দ. আফ্রিকাকে জেতাতে পারেননি মিলার
বারবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া নৈমিত্তিক ঘটনার মতো দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে। তাইতো তাদের ‘চোকার্স’ তকমা দেওয়া হয়েছে। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আরেকবার সেই নামটাই যেন ধরে রাখল প্রোটিয়ারা। বুধবার লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫০ রানে হেরে বিদায় নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আগে ব্যাট করে কেন উইলিয়ামসন ও রাচিন রবীন্দ্রর জোড়া শতকে ৬ উইকেটে ৩৬২ রান করে নিউজিল্যান্ড। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান। জবাবে ডেভিড মিলারের ৬৭ বলে ঝড়োগতির ১০০ রানের পরও ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১২ রান করতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এই জয়ে ১৬ বছর পর আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে কিউইরা। এবার ভারতের মুখোমুখি হবে তারা।
ইতিহাস যেন বারবার ফিরে আসে, মনে করায় অতীতকে। ২০০০ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কিউইরা। আবার সেই দু’দল রবিবার ফাইনালে মুখোমুখি হবে দুবাইয়ে। প্রথম সেমিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারায় ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯৮ সালের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হলেও আর ফাইনালে ওঠেনি। এবারও ব্যর্থ হল ‘চোকার্স’ তকমাধারী প্রোটিয়ারা। সবমিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ৫ বার সেমি থেকে বিদায় নিল তারা।
চলতি আসরেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বাধিক ৩৫১ রান করে ইংল্যান্ড লাহোরে। সেটি তাড়া করে জিতে রেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে ৩৫৬ রান তুলে। তাই টস জিতে আগে ব্যাটিং বেছে নেয় নিউজিল্যান্ড। তবে দলীয় ৪৮ রানেই উইল ইয়াং (২১) সাজঘরে ফেরেন। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে রাচিন-উইলিয়ামসন ১৬৪ রানের জুটি গড়লে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় কিউইরা।
আসরে নিজের দ্বিতীয় শতক হাঁকিয়ে রাচিন ১০১ বলে ১৩ চার, ১ ছয়ে ১০৮ রানে বিদায় নেন। উইলিয়ামসনও ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ৯৪ বলে ১০ চার, ২ ছক্কায় সাজঘরে ফেরেন ১০২ রানে। এরপর ড্যারিল মিচেল ৩৭ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৪৯ ও গ্লেন ফিলিপস ২৭ বলে ৬ চার, ১ ছয়ে অপরাজিত ৪৯ রান করলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে নিউজিল্যান্ড।
৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৬২ রান করে তারা। শেষ ১০ ওভারেই ১১০ রান এসেছে। লুঙ্গি এনগিডি ৭২ রানে ৩টি ও কাগিসো রাবাদা ৭০ রানে ২টি উইকেট নেন।
জবাব দিতে নেমে দলীয় ২০ রানেই রায়ান রিকেলটনের (১৭) উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর অধিনায়ক টেমবা বাভুমা ও রাসি ফন ডার ডুসেন সতর্ক হয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১০৫ রানের জুটি গড়েন। বাভুমা ৭১ বলে ৪ চার, ১ ছয়ে ৫৬ ও ডুসেন ৬৬ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৬৯ রানে বিদায় নেওয়ার পর ধস নামে প্রোটিয়া ব্যাটিংয়ে।
এইডেন মার্করাম ২৯ বলে ৩১, হেনরিখ ক্লাসেন ৩, উইয়ান মুল্ডার ৮ ও মার্কো ইয়ানসেন ৩ রানে সাজঘরে ফেরেন। কিন্তু মিলার একাই লড়াই চালিয়ে যান। ২১৮ রানে ৮ উইকেট হারানোর পরও দক্ষিণ আফ্রিকা মিলারের শতকে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১২ রান করতে সক্ষম হয়।
মিলার মাত্র ৬৭ বলে ১০ চার, ৪ ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার ৪৩ রানে ৩টি এবং ম্যাট হেনরি ও ফিলিপস ২টি করে উইকেট নেন।
৫০ রানে জিতে ২০০০ ও ২০০৯ সালের পর এ নিয়ে তৃতীয়বার ফাইনালে উঠল কিউইরা। আর ২০০০, ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৩ সালের পর আবার সেমি থেকে ছিটকে গেল প্রোটিয়ারা। সত্যিকারের ‘চোকার্স’ তারা সেটি যেন আরেকবার সত্য হল।
মামুন/আশিক