ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া না ভারত, ফয়সালা আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০১:০৮, ৪ মার্চ ২০২৫

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া না ভারত, ফয়সালা আজ

অনুশীলনে সিরিয়াস অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা, অন্যদিকে ভারতীয় দল শেষ চারেও এমন চওড়া হাসি ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উড়ছে ভারত। টানা দুই জয়ে আগেই সেরা চারের টিকিট নিশ্চিত করা রোহিত শর্মার দল এ-গ্রুপে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকেও উড়িয়ে দিয়েছে। নিরঙ্কুশ সাফল্যে গ্রুপসেরা হিসেবে আজ প্রথম সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে তারা। হ্যাঁ, ভারত ফেভারিট কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটের দাপুটে জয়ের পর কিউইদের তারা হারিয়েছে ৪৪ রানে।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুবাইয়ে খেলার সুবিধা কাজে লাগিয়ে স্পিনাররাও হয়ে উঠেছে দুর্বোধ্য। আসরে প্রথম সুযোগে কিউইদের বিপক্ষে ৫ উইকেটে ম্যাচসেরা বরুণ চক্রবর্তী। আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি আছে শুভমান গিল আর বিরাট কোহলির। অন্যদিকে, অধিনায়ক প্যাট কামিন্সসহ শীর্ষ পাঁচ ক্রিকেটারকে ছাড়া অস্ট্রেলিয়া কেমন করে, সেই প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়ে আরও একবার বড় আসরের বড় দল হিসেবে ঠিকই সেমিতে উঠে এসেছে স্টিভেন স্মিথ বাহিনী। দুবাইয়ে ফাইনালের টিকিটের লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে দুই পরাশক্তি। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায়।
দীর্ঘ ২৯ বছর পর আইসিসির কোনো ইভেন্টের আয়োজক পাকিস্তান। কিন্তু চিরবৈরী ভারত তাদের ম্যাচগুলো খেলছে দুবাইয়ে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই ভেন্যুতে পাওয়া ভারতের বাড়তি সুবিধা নিয়ে সরগরম বিশ্ব ক্রিকেট। সে সবে কান না দিয়ে মাঠের ক্রিকেটে ঠিকই নিজেদের কাজটা করে যাচ্ছে রোহিত শর্মার দল। একটি ম্যাচেও তাদের টিকিটি নড়াতে পারেনি কোনো প্রতিপক্ষ।

দুবাইয়ে ওপেনার শুভমান গিলের (অপরাজিত ১০১) সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে আসর শুরু করে টিম ইন্ডিয়া। পরের ম্যাচে বিরাট কোহলির (১১১ বলে অপরাজিত ১০০) দায়িত্বশীল সেঞ্চুরিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকেও ৬ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত। আর ৯ উইকেটে ২৪৯ রানের পুঁজি নিয়েও এÑগ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে তারা হারিয়েছে ৪৪ রানে।

চার স্পিনারের একাদশ গড়ে আলোড়ন তোলা দিনে ৪৫.৩ ওভারে কিউইদের গুটিয়ে দিয়েছে ২০৫ রানে। ৩২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে মাচসেরা হয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী আলোচিত লেগস্পিনার বরুণ চক্রবর্তী, গড়েছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। প্রতিপক্ষের ১০ উইকেটের ৯টিই স্পিনারদের, এটিও নতুন রেকর্ড। ব্যাটিংয়ে ভারতের বড় শক্তি দুই ওপেনার রোহিত ও গিল এবং টপঅর্ডারে বিরাট কোহিল ও শ্রেয়াস আইয়ার। 
নিউজিল্যান্ডের মুখে চাপের মুখে সর্বোচ্চ ৭৯ রান করেন আইয়ার। বরুণ, জাদেজা, কুলদীপ ও অক্ষরÑ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও চার স্পিনার চাইছেন অনেকে। তবে গ্রুপ পর্বে ব্যর্থ লোকেশ রাহুলের জায়গায় তারকা উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ঋষভ পন্থকে দেখা যেতে পারে। দুই পেসার নিয়ে খেললে মোহাম্মদ শামির সঙ্গী হতে পারেন হার্শিত রানা। সেক্ষেত্রে স্পিনার কমাতে হবে।

অন্যদিকে প্যাট কামিন্স, জস হ্যাজেলউডের ইনজুরি, ব্যক্তিগত কারণে সরে গেছেন মিচেল স্টার্কÑ ভগ্ন অস্ট্রেলিয়ার জন্য দুসংবাদ, ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন অলরাউন্ডার ম্যাথু শর্টও। তার পরিবর্তে সুযোগ পেয়েছেন স্পিনিং-অলরাউন্ডার কুপার কনোলি।  শর্টের না থাকা অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনায় বেশ বড় আঘাতই বলতে হবে। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৫২ রান তাড়ায় দলকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন তিনি ৬৩ রানের ইনিংস খেলে। পরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেন ১৫ বলে ২০।

আফগানদের বিপক্ষে বল হাতে উইকেট না পেলেও ৭ ওভারে রান দেন মাত্র ২১। ওই ম্যাচেই ঊরুর চোটে পড়েন। আজ ওপেনিংয়ের জন্য জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ককে বেছে নিতে পারে অস্ট্রেলিয়া। আর দুবাইয়ের স্পিনিং-ট্র্যাকে সরাসরিই সুযোগ পেতে পারেন কনোলি। সাড়ে তিনশ’ রান চেজ করে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে মিশন শুরু করে অসিরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচই বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হলে ৪ পয়েন্ট নিয়ে বিÑগ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে উঠে আসে সেমিতে। 
বোলিং নড়বড়ে হলেও ব্যাটিং লাইন দুর্দান্ত। ট্র্যাভিস হেড, মার্নাস লাবুশেন ও ইংলিশ-বধের দুই নায়ক জশ ইংলিস (৮৬ বলে অপরাজিত ১২০) ও অ্যালেক্স ক্যারি (৬৩ বলে ৬৩)। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল নিজের দিনে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন, সেটিও বোধ হয় নতুন করে বলার কিছু নেই। ওয়ানডেতে এ পর্যন্ত ১৫১ দেখায় ৮৪ জয়ে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া।

ভারতের জয় ৫৭ ম্যাচে। সর্বশেষ আহমেদাবাদে ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের লাখো দর্শককে স্তব্ধ করে শিরোপা জিতেছিল কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া। সব ফরম্যাট মিলিয়ে আইসিসির নকআউট পর্বে ৭ দেখায় ৪ জয় অস্ট্রেলিয়ার। ২০১৩ ও ২০১৭ সালে আসরের ফাইনাল খেলেছে ভারত। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে টানা তৃতীয় ফাইনাল খেলার সেরা সুযোগ টিম ইন্ডিয়ার সামনে। এছাড়া দীর্ঘ ১৬ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দেখা হচ্ছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার। ২০০৯ সালে নক-আউটে সর্বশেষ দেখায় জিতেছিল ভারত।

×