
.
আরেকটি বড় আসরে নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ দল। টানা দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটারদের দৃষ্টিকটু পারফর্ম্যান্স সারাবিশে^ই সমালোচিত হয়েছে। এমনকি বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতম দুই ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যেভাবে আউট হয়েছেন তা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়ে শুক্রবার রাতে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন দাবি করেছেন, প্রস্তুতি ঘাটতি ছিল যা নিয়ে বোর্ড ও ক্রিকেটারসহ সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। অর্থাৎ বড় টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে পরিকল্পনার ঘাটতিই বিফলতার মূলে। ক্রিকেটারদের এখন বিশ্রামেরও তেমন সুযোগ নেই। কারণ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল) মাঠে গড়াচ্ছে সোমবার। এবার ক্রিকেটারদের নামতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেট ব্যস্ততায়। চলতি মাসেই বাংলাদেশ সফরে এসে জিম্বাবুইয়ের ৩ ওয়ানডে ও ৩ টি২০ ম্যাচের সিরিজ খেলার কথা। তার আগেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে করা ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে ডিপিএল খেলে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ এবং বড় একটি আসরের আগে বাংলাদেশ সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পায়নি। এই মিশনে যাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে ক্রিকেটাররা দীর্ঘ দেড় মাসব্যাপী চলা টি২০ ফরম্যাটের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শেষ করেছে। তারপর ওয়ানডে ফরম্যাটের জন্য সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। ক্রিকেটাররা একসঙ্গে অনুশীলনও করতে পারেনি খুব বেশি। কারণ বিপিএলের মতো দীর্ঘ আসর শেষ করে কয়েকজন বিশ্রাম নিয়েছেন। গত ডিসেম্বরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে খেলার আড়াই মাস পর এই ফরম্যাটে সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ দল। নিজেদের পরখ করে দেখার একমাত্র সুযোগ ছিল পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৫০ ওভারের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ। সেখানে বাংলাদেশ খুব বাজেভাবে হেরে যাওয়ার মধ্যে দিয়েই নিশ্চিত হওয়া গেছে খুব বেশি কিছু আশা করা সম্ভব নয়। ভারতের মতো শক্তিধর প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করার জন্য আদর্শ প্রস্তুতি হয়নি বলে উপযুক্ত পরিকল্পনা নেওয়ার সুযোগও হয়নি। টানা বিপিএল খেলে একটা শ্রান্তি এবং শারীরিক ক্লান্তিও বড় ব্যাপার ছিল। আর দুবাইয়েও বাংলাদেশ দলের অভ্যাস নেই খুব বেশি খেলার। সব মিলিয়ে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
দুবাইয়ে ভারতের কাছে নাকানিচুবানি খেয়ে বাংলাদেশ দল আবার রাওয়ালপিন্ডি গিয়ে মাত্র এক সেশন অনুশীলন করতে পেরেছে। সব মিলিয়ে প্রস্তুতি একেবারেই ভালো হয়নি দলের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচও হেরেছে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে নামার আগে জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ সালাউদ্দিন বলেছেন, এই টুর্নামেন্টের আগে অন্তত পাঁচটি দল ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারিনি। বিপিএল খেলে এসেছি, সেটাই আমাদের বাস্তবতা। বোর্ড, ক্রিকেটার সবাইকে এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। হুট করে সাফল্য আসে না। এই বাস্তবতা রূঢ় হয়ে চেপে বসেছে মূল ম্যাচে। ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হয়েছেন ক্রিকেটাররা এবং ফিল্ডিংয়েও দুর্দশা দেখা গেছে। এজন্য সালাউদ্দিন পরিষ্কারভাবে বলেছেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালো হয়নি। তবে আমি এটাকে অজুহাত হিসেবে দেখাতে চাই না। এখন দ্রুত ফরম্যাট বদলায়। দ্রুত আপনাকে ফরম্যাট পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আমরা মানিয়ে নিতে পারিনি। টি২০ ফরম্যাট খেলে গেলেও দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ৫৯৮ বল ব্যাট করে ৩৪০টিই ডট দিয়েছে। সেটাই দলকে ডুবিয়েছে। হুট করে টি২০ থেকে ওয়ানডেতে নিজেদের মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাটাররা। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ড খেলেছে ওয়ানডে সিরিজ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সামনে রেখে দলগুলো পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই সিরিজগুলো খেলেছে। শুধু বাংলাদেশ দলই ব্যতিক্রম। তার খেসারত দিতে হয়েছে ব্যর্থতায়। এখন ডিপিএল খেলতে নামবেন ক্রিকেটাররা। শুরুর দিকে দুয়েকটি ম্যাচ কয়েকজন অবশ্য নাও খেলতে পারেন। ৩/৪ ম্যাচ খেলে আবার জিম্বাবুইয়েকে মোকাবিলার জন্য জাতীয় দলের ক্যাম্পে যেতে হবে ক্রিকেটারদের। হোমসিরিজ এবং প্রতিপক্ষ সহজ বলেই হয়ত তারপরও নিজেদের ফিরে পাবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।