ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১

ক্রিকেট দুনিয়ায় আফগান শো চলছেই

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ক্রিকেট দুনিয়ায় আফগান শো চলছেই

লাহোরে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর মোহাম্মদ নবীর সেলফিতে আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা

বিশ্ব ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরেই নজর কাড়ছে আফগানিস্তান। বিশেষ করে আইসিসির বড় টুর্নামেন্টে বড় দলগুলোর বিপক্ষে ধারাবাহিকভাবেই ভালো খেলে জয় তুলে নিচ্ছে নবী-রশিদরা। গত বছর টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে রীতিমতো ক্রিকেট দুনিয়াকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান।

প্রথম কোনো আইসিসি ইভেন্টের সেমিফাইনাল খেলার পথে সেবার শক্তিশালী নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল তারা। এর আগে ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তাদের কাছে লজ্জাজনকভাবে হেরেছিল ইংল্যান্ড-পাকিস্তান। 
সেই ধারাবাহিকতা এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ধরে রাখল হাসমতউল্লাহ শহীদির দল। অভিষেক আসরের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে মিশন শুরু করেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই নিজেদের সেই রুপ দেখাল জাদরান-উমরযাইরা। বুধবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাড়ি ফেরার টিকিট পাকা করে দিয়েছে জস বাটলারদের। সেইসঙ্গে নিজেদের সেমিফাইনালে ওঠার আশাও জিইয়ে রেখেছে রাশিদ খানরা। 
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ে ব্যাট হাতে আফগানদের নায়ক ইব্রাহিম জাদরান। ইনজুরিতে দলের বাইরে চলে গিয়েছিলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। যে কারণে এক বছর দলে ছিলেন না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে তাকে ফোন করেন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ। ইব্রাহিমের মতে, ওটাই তার ক্যারিয়ার বদলে যাওয়া ফোন কল।

দীর্ঘ সময় পর দলে ফিরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচেই ১৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ওই ফোন কলের মূল্য দিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তার ইনিংসে ভর করেই ৭ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ডকে ৩২৬ রানের বিশাল লক্ষ্য দেয় আফগানরা। জবাবে রুটের সেঞ্চুরির সৌজন্যে ইংলিশদের কিছুটা আশা দেখালেও শেষ পর্যন্ত ৩১৭ রানেই গুটিয়ে যায় জস বাটলারের দল।

ব্যাট হাতে যেমন জাদরান তেমন বল হাতে আফগানদের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আজমতউল্লাহ উমরযাই। ৫৮ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন তিনি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানিস্তানের জয় পাল্টে দিয়েছে ‘বি’ গ্রুপের পুরো পয়েন্ট টেবিলের হিসেব ও সেমিফাইনালের অঙ্ক। ভারত ও নিউজিল্যান্ড গ্রুপ এ  থেকে ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করে ফেলেছে সেমিফাইনালের টিকিট। কিন্তু তারা খেলবে কাদের বিপক্ষে সেই সমীকরণ এখনো অস্পষ্ট। তবে বি গ্রুপ থেকে ইংল্যান্ড বিদায় নিলেও জমে উঠেছে পয়েন্ট টেবিলের অঙ্কে।

২ ম্যাচে একটি জয় ও একটি অমীমাংসীত ম্যাচের ১ পয়েন্ট মোট ৩ পয়েন্ট নিয়ে সেমির টিকিট প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে থাকার লড়াই প্রোটিয়াদের। হারলেও সেমিতে যাবে বাভুমারা। তবে আজ অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তান ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছে কার্যত সেমির আগে সেমিফাইনাল।

২ ম্যাচে অজিদের পয়েন্ট ৩, অপরদিকে, ২ ম্যাচে আফগানদের পয়েন্ট ২। যে জিতবে তারাই যাবে শেষ চারে। ম্যাচটা হবে লাহোরে। যেখানে আজ বৃষ্টিপাতেরও প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই ম্যাচ শেষ পর্যন্ত বাতিল হতে পারে। সেক্ষেত্রে দুই দল পয়েন্ট ভাগাভাগি করবে। লাভ তাতে অস্ট্রেলিয়ার। ৪ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করবে অজিরা। 
অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে আজ আফগানিস্তানের সামনে প্রেরণা গত বছরের টি২০ বিশ্বকাপে জয়। সেন্ট ভিনসেন্টে সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১৪৯ রানের লক্ষ্য দিয়ে ২১ রানে হারিয়েছিল আফগানরা। আফগানিস্তানের বোলারদের দাপটে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে যায় ১২৭ রানে। আর তাতেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের নজির গড়ে আফগানিস্তান।

অস্ট্রেলিয়াকে এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও হারাতে প্রস্তুত তারা। এ প্রসঙ্গে দলটির প্রধান কোচ জোনাথন ট্রট বলেন, ‘রাতের আনন্দ উপভোগ শেষে সকালে ওরা অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য তৈরি থাকবে। কারণ অস্ট্রেলিয়া আমাদের হালকাভাবে নেবে না। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। মানুষজন হয়ত ভেবেছিল যে ঐতিহাসিক টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে খেলাটা আমাদের জন্য কিছুটা সহজ হবে।

কিন্তু এই ফরম্যাটে, এই অবস্থায়, আমি তা মনে করি না।’ অজিদের বিপক্ষে নিজেদের অতীত অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘যতদিন আমি কোচ ছিলাম, আমরা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ খেলেছি এবং প্রতিটি ম্যাচেই আমরা সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলাম। তাই আমরা এর থেকে অনেক আত্মবিশ্বাস নিতে পারি। আমি এটি খেলোয়াড়দেরও বলেছি যে আফগানিস্তানকে আর কখনোই হাল্কাভাবে নেওয়া হবে না।’

×