
বাংলাদেশ তথা বিশ্ব ক্রিকেটের অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে আইসিসি টুর্নামেন্টে আর হয়তো এভাবে জুটি গড়তে দেখা যাবে না
শচীন টেন্ডুলকরের মতো কিংবদন্তিকেও একটা সময় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল, রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের বেলায় এখন যেমন হচ্ছে। শুধু ক্রিকেট নয়, ক্রীড়াঙ্গনের যে কোনো ইভেন্টেই বয়সের সঙ্গে পারফর্ম্যান্সের সম্পর্ক নিবিড়। লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর মতো ফুটবলারও যদি পারফর্ম করতে না পারেন, তাদের নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।
অর্থাৎ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পারফর্ম্যান্সই হয়ে ওঠে টিকে থাকার প্রধান মানদ-। ৩৯ পেরিয়ে ৪০-এ পা রাখা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮ বছর। প্রায় ৩৮ বছর বয়সী মুশফিকুর রহিম আছেন ২০ বছর। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুজনের ব্যর্থতা, আউট হওয়ার ধরনÑবিদায়ের ডাক শুনতে পাওয়া দুই তারকা চিরসত্যের দ্বারপ্রান্তে।
সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের মতে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে আজকের ম্যাচটা দুজনের জন্য হতে পারে ‘অবসরের সেরা সুযোগ’। যদিও তেমন কোনো ইঙ্গিত নেই।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাদের অনেক অবদান। আমি তো বরং বলব, উল্টো তাদের সঙ্গেই অনেক সময় অন্যায় করা হয়েছে।’ তাই বলে অবশ্য তিনি এটাও মনে করেন না যে দুজনেরই আরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়া উচিত, ‘একটা টুর্নামেন্টের মধ্যে কোনো ক্রিকেটারের সঙ্গে এসব নিয়ে আলাপ করাটা ঠিক নয়। তবে সব ক্রিকেটারকেই একসময় বিদায় বলতে হয়।
সেটা কখন, তা ওই ক্রিকেটারেরই ঠিক করা উচিত।’ মুশফিক–মাহমুদুল্লাহ নিজ থেকে কিছু না বললেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর দেশে ফিরলে বিসিবিই তাদের কাছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইবে। তাদেরও জানানো হবে তাদের ব্যাপারে বোর্ডের ভাবনা। আর সেই ভাবনাটা নতুনদের উঠে আসার পথটাকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা মাথায় রেখেই ভাবছে বোর্ড। হ্যাঁ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর দুই তারকাকে সসম্মানে বিদায় বলার কথাই ভাবছে বোর্ড।
উল্লেখ্য, টেস্ট এবং টি২০ থেকে অবসর নেয়া মাহমুদুল্লাহ এখন কেবল ওয়ানডে খেলছেন। আর মুশফিক আছেন ওয়ানডে ও টেস্টে। এর আগে আশরাফুল বলছিলেন, ‘জানি না মুশফিক-রিয়াদ আর চালিয়ে যাবে কি না। এখান থেকে যদি বিদায় নেয়, এটা একটা বিরাট প্ল্যাটফর্ম হতে পারে যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বলে বিদায় নিচ্ছে।’ তিনি আরও যোগ করেন,‘এটা একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত বিষয়। দুজনই যথেষ্ট ফিট আছেন, খেলা উপভোগ করছেন।
আমি আপনি কী ভাবছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ২০২৩ বিশ্বকাপ রিয়াদ যেভাবে খেলেছে, যদি অবসর নিয়ে নিত তাহলে মানুষ শ্রদ্ধা করত। আবার দুই ধরনের পরিস্থিতিই আছে। আমরা ভাবছি তরুণদের সুযোগ দেবেন। কিন্তু তারাও তো ভালো করতে পারছে না।’
আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট বলেন,‘আমার অনুরোধ জোর করে অবসর দেওয়ার দরকার নাই। ক্রিকেটাররাই বুঝবে যে তার কখন অবসর নিতে হবে। আপনি দেখেন গতকালকের ম্যাচে নিউজিল্যান্ড দলে মিচেল খেলে নাই, ব্যাক-আপ রাচীন রাবীন্দ্র সুযোগ পেয়েই করেছেন সেঞ্চুরি। যেটা আমাদের আসলে নেই।’ ৩৯ বছর বয়সী মাহমুদুল্লাহ ২০০৭ থেকে ১৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন।
৯ সেঞ্চুরিতে রান ১১০৪৭। ৩৮ বছর বয়সী উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মুশি খেলছেন ২০ বছর, ২০০৫ থেকে! ২০ সেঞ্চুরিতে তার রান ১৫৩০২। দুজনই বাংলাদেশের ক্রিকেটের চলমান কিংবদন্তি। সন্দেহ নেই। রেকর্ড, পরিসংখ্যান, ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বলে তাদের নাম। কিন্তু আবেগ আর পরিসংখ্যান দিয়ে তো ক্রিকেট হয় না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের নবিস টাইপের ব্যাটিং আর আউট হওয়ার ধরন দেখে দীনেশ কার্তিক থেকে ওয়াসিম আকরাম, বিশ্বের অন্য দেশের সাবেকরাও বিস্মিত।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলের তখন প্রয়োজন ছিল একটি জুটি। ক্রিজে এসে প্রথম দুই বলে দুটি সিঙ্গেল নেন মুশফিক। এরপর ব্রেসওয়েলের টানা দুটি বলে রান নিতে পারেননি। এতেই তার ধৈর্য, টেম্পারমেন্ট, অভিজ্ঞতা, ম্যাচ পরিস্থিতি পড়ার ক্ষমতা, সব কিছুর দফারফা। ৫ বলে ২ রান করা মুশি আচমকা স্লগ সুইপ খেলে সহজ ক্যাচ দিলেন ডিপ মিড উইকেটে। বোলার ব্রেসওয়েল নিজেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এই টুর্নামেন্টের আগে ১২ ওয়ানডে ইনিংসে তার ফিফটি কেবল একটি। দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
বিপিএল থেকেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ হচ্ছেন মুশফিক। ১৪ ম্যাচে রান করেছিলেন মাত্র ১৮৪। এরপর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দুই ম্যাচেও আউট হলেন ০ ও ২ রানে। চোট কাটিয়ে মাহমুদুল্লাহ ফেরায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জায়গা হয়নি সৌম্য সরকারের। ওয়ানডেতে নিজের আগের চার ইনিংসে ৯৮, ৫০*, ৬২ ও ৮৪* রানের ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানের একাদশে ঢোকা অবধারিতই ছিল। ২৭তম ওভারে মুশফিক আউট হলে ১১৮ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে বাংলাদেশ।
অথচ ব্রেসওয়েলকে ডাউন দ্যা উইকেটে এসে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় লিডিং এজড হয়ে অফসাইডে ক্যাচ তুলে দেন ১৪ বলে ৪ রান করা মাহমুদুল্লাহ! কার্তিক, আকরামরা তাদের সামর্থ্য এবং নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।