
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি উদ্যাপন নিউজিল্যান্ডের রাচীন রবীন্দ্রর
পাকিস্তানে রান হবে, হবে চার-ছক্কা আর সেঞ্চুরির খেলা, বিষয়টা অনুমিত। করাচিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচেই জোড়া সেঞ্চুরিতে মাতিয়ে দেন উইল ইয়াং ও টম লাথাম। দুই কিউই ব্যাটার উপহার দেন ১০৭ ও অপরাজিত ১১৮ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। আয়োজক পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২০ রানের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ড ম্যাচটা জিতে নেয় ৬০ রানের বড় ব্যবধানে।
দুবাইয়ে লো স্কোরিং ম্যাচেও তিন অঙ্কের ম্যাজিকেল ফিগারে পা রাখেন তাওহিদ হৃদয় আর শুভমান গিল। উপহার দেন ১০০ ও অপরাজিত ১০১ রানের ঝলমলে ইনিংস। যদিও সতীর্থদের ব্যর্থতায় ২২৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হারে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি আসে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান তৃতীয় ম্যাচেও। করাচিতে রায়ান রিকেলটনের ১০৩ রানের দারুণ ইনিংসে ভর করে ৩১৫ রানের স্কোর গড়ার পর প্রোটিয়ারা পায় ১০৭ রানের জয়।
লাহোরে তো তাদেরও ছাড়িয়ে যান বেন ডাকেট আর জশ ইংলিস। ডাকেটের রেকর্ড ১৬৫ রানের সৌজন্যে ৩৫১ রান করে ইংল্যান্ড। জবাবে ইংলিসের ৮৬ বলে অপরাজিত ১২০ রানের ম্যারাথন ইনিংসে ৫ উইকেটের ইতিহাস গড়া জয় পায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
করাচিতে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া পান ইয়াং। ১ ছক্কা ও ১২ চারে সাজানো তার ১১৩ বলের ইনিংসটি থামে ১০৭ রানে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শতক করা নিউজিল্যান্ডের চতুর্থ ব্যাটসম্যান তিনি। কিউইদের হয়ে সবশেষ এই স্বাদ পেয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। ২০১৭ সালে এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঠিক ১০০ রান করেন তিনি। চলতি আসরেও আছেন তিনি।
ওয়ানডেতে এটি ইয়াংয়ের চতুর্থ সেঞ্চুরি। এক বছরের বেশি সময় পর এই স্বাদ পেলেন তিনি। সবশেষ শতক করেছিলেন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৫। এই সংস্করণে ইয়াংয়ের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ১২০ রানের, ২০২২ সালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। পরে সেঞ্চুরি তুলে নেন লাথামও। বহুল কাক্সিক্ষত তিন অঙ্কে পা রাখেন লাথাম। ১১৮ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ১০৪ বলের ইনিংসটি সাজানো ৩ ছক্কা ও ১০ চারে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি লাথামের ২১তম সেঞ্চুরি।
সবশেষটি ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। সেটিও পাকিস্তানের বিপক্ষে এই করাচিতেই। সেবার পাকিস্তান সফরের প্রথম টেস্টে ১১৩ রান করেছিলেন তিনি। এর পর দীর্ঘ অপেক্ষা। ৭৮৪ দিন ও ৭৯ ইনিংস পর আবার সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ওয়ানডেতে এটি লাথামের অষ্টম সেঞ্চুরি। এই সংস্করণে সবশেষ শতকের স্বাদ পেয়েছিলেন ২০২২ সালের নভেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ১৪৫।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তৃতীয় কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করলেন লাথাম। ২০০২ আসরে ভারতের বিপক্ষে জিম্বাবুইয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ১৪৫ ও ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা অপরাজিত ১৩৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। বছরের শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল লাথামের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জানুয়ারিতে ১ রান করার পর টানা তিন ম্যাচে রানের খাতা খুলতে পারেননি। টানা ‘ডাকের’ তালিকায় যৌথভাবে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে বীরোচিত সেঞ্চুরি হাঁকান তাওহিদ হৃদয়। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুর ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ৩৫ রানে হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট। সেখান থেকে জাকের আলির সঙ্গে জুটিতে রেকর্ডের মালা গেঁথে অসাধারণ ইনিংস খেলেন হৃদয়। জাকের ৬৮ রান করে ফিরলেও থামেননি হৃদয়। পানিশূন্যতায় পেশির টান সামলে তিনি খেলেন ১০০ রানের ইনিংস। ১১৮ বলের ইনিংসটি সাজান ৬ চার ও ২ ছক্কায়।
ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি করতে খেলেন ৮৫ বল। পঞ্চাশ থেকে একশ’তে পৌঁছাতে মাত্র ২৯ বল লাগে হৃদয়ের। ৪৫তম ওভার থেকে ক্র্যাম্পের কারণে প্রবলভাবে ভুগতে হয় হৃদয়কে। শেষদিকে তো নড়তেই পারছিলেন না। সেটির প্রভাব পড়ে ব্যাটিংয়ে। নইলে তার ও দলের রান বেশি হতে পারত আরও। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজের প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হৃদয়। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৮ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল।
নবম ওভার থেকে শুরু করে ৪৩তম ওভার পর্যন্ত খেলে তারা যোগ করেন ১৫৪ রান। ওয়ানডেতে ষষ্ঠ উইকেটে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। সবশেষ ওয়ানডেতেই গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট পড়ার পড় ১৫০ রান যোগ করেছিলেন জাকের ও মাহমুদুল্লাহ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড এখন হৃদয়-জাকেরের।
২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪২ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর ১৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার ও জাস্টিন কেম্প। ভারতের বিপক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে প্রায় ২০ বছর পুরনো রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন তারা। ২০০৫ সালে ১৩৩ রানের বন্ধন গড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার মারভান আতাপাত্তু ও রাসেল আর্নল্ড। বাংলাদেশের জন্য ভারতের বিপক্ষে এটি যে কোনো উইকেটেই সেরা জুটি।
কেপটাউন টু করাচিÑ গত মাসের শুরুতে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। ২০১৬ সালে হাসিম আমলার পর প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে টেস্টে ডবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এক দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছিলেন রায়ান রিকেলটন। এবার করাচিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে উপহার দেন ১০৩ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। নাড়িয়ে দেন রেকর্ড বইয়ের পাতা। দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে আইসিসির ইভেন্টে অভিষেকেই পান সেঞ্চুরির দেখা।
২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপে দলে থাকলেও কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি রিকেলটন। এবার জীবনের প্রথম আইসিসি টুর্নামেন্টে খেলতে এসেই রাঙিয়ে দিলেন ২৮ বছর বয়সী এ কিপার-ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির পথে ওপেনিংয়ে নেমে ১০৬ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় উপহার দিলেন ১০৩ রানের স্মরণীয় এক ইনিংস। নাম লেখালেন গ্রেটদের পাশে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেঞ্চুরি হাঁকানো পঞ্চম দক্ষিণ আফ্রিকান তিনি। আগের চারজন হলেন হার্শেল গিবস, গ্রায়েম স্মিথ, জ্যাক ক্যালিস ও হাশিম আমলা।
প্রোটিয়াদের জার্সিতে রিকেলটনের আগে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন আর কেবল একজন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে এই পাকিস্তানেই (রাওয়ালপিন্ডিতে) সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে অপরাজিত ১৮৮ রানের ইনিংস খেলেন গ্রেট গ্যারি কার্স্টেন। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে যা এখনো সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই করেন বেন ডাকেট। ১৪৩ বলে ১৭ চার ও ৩ ছক্কায় উপহার দেন ১৬৫ রানের মনোমুগ্ধকর এক ইনিংস। গড়েন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। ৮ উইকেটে ৩৫১ রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি।
এদিনই এই রান টপকে জয়ের পরই অবশ্য সে রেকর্ড ভেঙে দেয় অস্ট্রেলিয়া (৩৬৫/৫)! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দেড়শ’ রানের ইনিংস খেলেন ডাকেট। বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে এতদিন সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি ছিল নিউজিল্যান্ডের নাথান অ্যাস্টলের। ২০০৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অপরাজিত ১৪৫ রান করেছিলেন তিনি। লন্ডনের দ্য ওভালে সেই ম্যাচেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ডটি গড়েছিল কিউইরা। তাদের ৪ উইকেটে করা ৩৪৭ রান এবার ছাড়িয়ে গেল ইংল্যান্ড।
এ দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যানে এটি প্রথম ইনিংসে তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ইংল্যান্ডে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংলিসই হারিয়ে দেন ইংল্যান্ডকে। ৮৬ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেন অপরাজিত ১২০ রানের দুরন্ত এক ইনিংস। সঙ্গে ম্যাথু শর্ট ও অ্যালেক্স ক্যারির জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ১৫ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে ইতিহাস গড়া জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তো বটেই আইসিসির কোনো ইভেন্টেই যা নতুন রেকর্ড।