
.
গত আসরের সেমিফাইনালিস্ট বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে এবারও হার দিয়ে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হারলেও পরে নিউজিল্যান্ডকে অবিশ্বাস্য এক ম্যাচে ৫ উইকেটে হারিয়ে সেমিতে ওঠে বাংলাদেশ। এবার ভারতের কাছে পরাজয় দিয়ে শুরুর পর সেই নিউজিল্যান্ড আবার বড় বাধা। হারলেই সেমির আশা ম্লান হয়ে যাবে টাইগারদের। রাওয়ালপিন্ডিতে আজ বেলা ৩টায় চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কিউইদের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং স্বর্গ হিসেবে সুপরিচিত পিন্ডিতে গত বছর স্বাগতিক পাকিস্তানকে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করার মধুর স্মৃতি আছে। কিন্তু ২২ বছর পর আবার এই ভেন্যুতে কোনো ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ নিউজিল্যান্ড আছে ফর্মের তুঙ্গে। প্রথম ম্যাচে তারা স্বাগতিক পাকিস্তানকে ৬০ রানে হারিয়েছে। আজ জিতলেই সেমি নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে তাদের।
এবারের আসরে এখন পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডিতে কোনো ম্যাচ হয়নি। তবে সবসময়ই এই ভেন্যুতে প্রচুর রান হয়ে থাকে। তবে একই সঙ্গে এখানে পেসাররা কিছুটা সহায়তা পেয়ে থাকে। সে কারণে বাংলাদেশের একাদশে দেখা যেতে পারে গতিময় পেসার নাহিদ রানাকে। সেজন্য বেঞ্চে চলে যেতে হতে পারে বাঁহাতি মুস্তাফিজুর রহমান কিংবা ডানহাতি তানজিম হাসান সাকিবকে। এছাড়া একাদশ সাজানোর ক্ষেত্রে আরও সমস্যায় পড়তে হবে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে। যেহেতু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আগের ম্যাচটি খেলেননি, তিনি ফিট হয়ে উঠেছেন। মিডলঅ অর্ডারের শক্তি বাড়াতে তাকে নেওয়া হলে ভারতের বিপক্ষে একাদশে থাকা ব্যাটারদের কেউ একজন বাদ পড়বেন। সেক্ষেত্রে জায়গা ঠিক করাই কঠিন। সেজন্য আজও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহকে বিশ্রামেই রাখা হতে পারে। অথবা টপঅর্ডার থেকে সৌম্য সরকারকে বাদ দিয়ে সেখানে তানজিদ হাসান তামিম ও শান্ত কিংবা মেহেদি হাসান মিরাজ করতে পারেন ওপেনিং। তবে তাওহিদ হৃদয় ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েন ব্যাটিংয়ের সময়। নিজেই অবশ্য জানিয়েছেন, পেশিতে টান লাগলেও সুস্থ আছেন। সেক্ষেত্রে একাদশ সাজানোর ক্ষেত্রে কিছুটা ঝামেলায়ই পড়তে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডেরও একই ধরনের সমস্যা রয়েছে। আগের ম্যাচটিতে রাচিন রবীন্দ্র খেলতে পারেননি। তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাকে খেলাতে হলে ওপেনিংয়ে উইল ইয়াং কিংবা ডেভন কনওয়েকে বাদ দিতে হবে। সেদিক থেকে কনওয়ের ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ গত ম্যাচেই ইয়াং সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ৪৫ বার ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশ ১১ বার হারিয়েছে কিউইদের। ব্যাটিং স্বর্গোদ্যান হিসেবে পরিচিত রাওয়ালপিন্ডিতে অবশ্য তাদের পরাজিত করতে হলে ব্যাটিং দিয়েই করতে হবে।
সেদিক থেকে এই মুহূর্তে অনেক এগিয়ে কিউইরা। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানের মাটিতে হওয়া ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে রান বন্যা হয়েছে। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কিউইরা নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিয়েছে। তারা এই মুহূর্তে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়েও আছে ৪ নম্বরে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ৩ ম্যাচের সিরিজে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও ১টি ম্যাচ জিতেছেন শান্তরা। তাই আশা রয়েছে এ ম্যাচটিকে ঘিরেও। গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতেই ২ টেস্টের সিরিজে স্বাগতিক পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। তাই এখনো টাটকা সেই স্মৃতিকে পুঁজি করে উজ্জীবিত হয়েই নামবেন শান্তরা। কিন্তু টপঅর্ডারের ব্যর্থতাই এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। নিউজিল্যান্ডের বর্তমান দলটি ব্যাটে-বলে দারুণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। অবশ্য দিবা-রাত্রির ম্যাচটি অনেকটাই মেঘলা আকাশের নিচে হবে। রাত নামলে আজ এই ভেন্যুতে তাপমাত্রা থাকবে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দুবাইয়ের কঠিন গরম থেকে বের হয়ে পিন্ডিতে এমন সুখকর তাপমাত্রায় নিজেদের ফিরে পাওয়ার আশায় আছে বাংলাদেশ। কিউইদের হারাতে না পারলে সেমির আশা শেষ হয়ে যাবে। তাই জয়ের বিকল্প নেই। ২০১৫ সালের পর অবশ্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের বেশ ভালো রেকর্ড আছে। তার আগে ২০১০ সালে প্রথমবার তাদের ৪-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডকে দুর্দান্ত এক ম্যাচে হারিয়েছে টাইগাররা এবং সেমিতে উঠেছে। সেই ম্যাচের নায়ক মাহমুদুল্লাহকে বাদ দিয়ে খেলাটা কঠিন। তবে বর্তমান কম্বিনেশনে শেষ পর্যন্ত সেই অপ্রিয় কাজটাই করতে হতে পারে। সবমিলিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মাত্র দুইবার মোকাবিলা হয়েছে দু’দলের। ২০০২ সালে কলম্বোয় জিতেছে নিউজিল্যান্ড, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ। এবার জিতবে কে? এই মাঠে ২০০৩ সালের দ্বিপক্ষীয় সফরে একটি ওয়ানডে খেলার পর আর কখনোই ৫০ ওভারের ম্যাচ না খেলা বাংলাদেশের জন্য তাই বড় পরীক্ষাই থাকছে।