
.
এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে থেকেই বলা হচ্ছিল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে থাকা দলই ভালো করবে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়েই যত শঙ্কা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত সেই শঙ্কাটাই সত্যি হয়েছে এবং ভারতের কাছে হার দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের অভিযান। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে খেলতে গিয়ে প্রথমেই হোঁচট খাওয়ার পাশাপাশি বাস্তবতাও টের পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। শুক্রবার দিবাগত রাতেই পরবর্তী দুই ম্যাচ খেলার জন্য দুবাই থেকে রাওয়ালপিন্ডির পথে বিমানে উঠেছেন টাইগাররা। এবার নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে সেমিতে ওঠার সমীকরণ মেলাতে হবে। দুটিতেই জিতলে নিশ্চিত হবে সেমি। আরেকটি হারলে অন্য ম্যাচগুলোর ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। তবে ব্যাটিংয়ে অবশ্যই উন্নতি করতে হবে। কারণ রাওয়ালপিন্ডির উইকেট একেবারে ব্যাটিং স্বর্গ। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটার জাকের আলী অনিক, প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া তাওহিদ হৃদয় একই কথা বলেছেন। ভারতের বিপক্ষে একেবারে তরতাজা উইকেটে খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। অব্যবহৃত উইকেটটা দারুণ ছিল বলেই টস জিতে ব্যাটিং বেছে নিয়েছেন শান্ত। কিন্তু ৩৫ রানেই ৫ ব্যাটার সাজঘরে ফেরার মধ্যে দিয়ে যেন আগেভাগেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। সেখান থেকে সংগ্রাম করে মান বাঁচিয়েছেন কিছুটা তাওহিদ ও জাকের রেকর্ড জুটি গড়ে। কিন্তু দলের হারের কারণ মূলত শুরুর সেই বিপর্যয়। ম্যাচ শেষে তাই শান্ত বলেছেন, আমি মনে করি প্রথম পাওয়ার প্লে। সেখানে আমরা যেভাবে ব্যাটিং করেছি সেখানেই আমাদের ম্যাচটা শেষ হয়ে গেছে। ওই অবস্থা থেকে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে কিছু করা কঠিন। মাঠে অবশ্য আমরা বেশ কিছু ভুল করেছি। বেশ কিছু ক্যাচ ছেড়েছি। রান আউট মিস করেছি। ওই সুযোগগুলো যদি কাজে লাগানো যেত, তাহলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হলেও হতে পারত। অবশ্য দুবাইয়ের উইকেট খালি চোখে যেমনটা মনে হয়েছে তেমন নয়। রান করা এত সহজ ছিল না। তা বাংলাদেশের করা ২২৮ রানের জবাবে ভারতের সংগ্রাম দেখেই বোঝা যায়। তাই জাকের ও তাওহিদের প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, তবে হৃদয় ও জাকের যেভাবে ব্যাটিং করেছে সেটা ছিল অসাধারণ। এই ধরনের উইকেটে স্পিনাররা সুবিধা পায়। বল ঘোরে। সেখানে হৃদয় ও জাকের খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। আমি মনে করি না আমাদের স্পিন বোলারের ঘাটতি ছিল। মাহমুদুল্লাহর কিছুটা ইনজুরি রয়েছে। তবে আমাদের পেসাররা কিন্তু খারাপ বোলিং করেনি। যদি আমরা শুরুতে উইকেট তুলে নিতে পারতাম তাহলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হতেও পারত।
প্রথম ম্যাচে অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলতে পারেননি মাংসপেশিতে টান লাগার কারণে। পরে তাওহিদও ব্যাটিং করার সময় একই সমস্যায় পড়েছেন। পরবর্তী ম্যাচে বাংলাদেশ খেলবে ৩ দিন পর। এর মধ্যে দু’জন সুস্থ হয়ে উঠতে না পারলে ব্যাটিং নিয়ে চিন্তাটা থেকেই যাবে। পরবর্তী দুই ম্যাচই বাংলাদেশের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য নেট রানরেটের কারণে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। পাকরা যদি পরবর্তী ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে যায় তাহলে তার্দে সেমিতে ওঠার আশা প্রায় শেষ হয়ে যাবে। সেদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাবে বাংলাদেশ। তবে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে গেলেই তখন বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। তাই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ফলাফল বাংলাদেশের জন্য সেমির সমীকরণ ঠিক করে দেবে। অবশ্য ব্যাটিংয়ে উন্নতি ঘটবে পরের ম্যাচ থেকে, এমনটাই আশা করছেন জাকের। ভারতের বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতিতে ১১৪ বলে ৬৮ রানের সংগ্রামী ইনিংস খেলা এ ব্যাটার বলেছেন, পিচ নিয়ে আমরা আশাবাদী। আশা করি আমাদের টপ অর্ডার ওখানে রান করবে। ওপেনাররা রান পেলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। উইকেট ভালো আছে, যেটা আমরা সর্বশেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে দেখেছি। ভালো উইকেট পেলে আমরাও দল নিয়ে আশাবাদী। দুবাইয়ের উইকেট রান করার জন্য সহজ ছিল না। সেটি মনে করিয়ে দিয়ে জাকের বলেছেন, উইকেট একটু কঠিন ছিল, ব্যাট করা সহজ ছিল না।
ইনিংস জুড়েই বল বাঁক নিয়েছে। উইকেটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে আমরা খেলার চেষ্টা করেছি। অবশ্য উইকেট যেমনই থাক পায়ে টান লাগার কারণে স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাট করতে না পেরে আফসোস লাগছে তাওহিদের। তিনি বলেছেন, উইকেট কঠিন ছিল শুরুরদিকে। তারাও সহজে ব্যাট করতে পারেনি। আমার ইচ্ছা ছিল যদি চালিয়ে যেতে পারি, একটা সময় ডট দিয়েছি অনেক। তবে বিশ্বাস ছিল আমি সেটা কাভার দিতে পারব। আমার ক্র্যাম্পটা না হলে হয়ত দলের জন্য ২০-৩০ রান বেশি করে দিতে পারতাম। সেই কমতিটা টপঅর্ডারের ব্যর্থতার কারণেই হয়েছে।