
অনুশীলন শুরুর আগে মাঠেই নামাজ আদায় করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা
বার্মিংহ্যামের সেই একচেটিয়া লড়াই আরেকবার আলোচনায়। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু শক্তিশালী ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হেরে গেছে। এই টুর্নামেন্টে দুই দলের মধ্যে আর কোনো সাক্ষাৎ হয়নি কখনো। ৮ বছর পর সেই একই মঞ্চে এবার দুবাইয়ে গ্রুপ পর্বেই লড়াই। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেলা ৩টায় মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ।
এই দীর্ঘ সময়ে বার্মিংহ্যাম থেকে দুবাইয়ের লড়াইয়ে আসার মাঝে ওয়ানডেতে আরও ৮ বার সাক্ষাৎ হয়েছে দুই দলের। বাংলাদেশ ৩ বার জিততে পেরেছে। তাই এবার জয় দিয়েই শুরু করতে চায় বাংলাদেশ দল। অতীতের কথা না ভেবে ভারতকে হারিয়েই শুরুর আশায় টাইগাররা। এই ম্যাচ দিয়ে উভয় দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যাত্রা শুরু হচ্ছে।
শক্তির দিক থেকে এবং সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স বিবেচনায় ভারত অনেক এগিয়ে। অন্যতম হট ফেভারিট হিসেবে ভারতও জয় দিয়েই শুরু করতে মুখিয়ে আছে। সর্বশেষবার ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রানার্সআপ হয়েছে। তার আগে ২০১৩ সালে হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। এবার শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন বিশে^র এক নম্বর ওয়ানডে দলটির।
বাংলাদেশ-ভারত লড়াই মানেই উত্তেজনা। এবারও সেই উত্তেজনা রয়েছে। সর্বশেষ ৫ লড়াইয়ে বাংলাদেশ জিতেছে ৩টি, দুটি জিতেছে ভারত। সেদিক থেকে এগিয়েই আছে বাংলাদেশ। আবার ২০২৩ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ জিতলেও বিশ^কাপে জিতেছে ভারত। গত বছর দুই দলের মধ্যে কোনো ওয়ানডে হয়নি। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শুধু ২০১৭ সালের আসরেই দেখা হয়েছে দুই দলের।
সেমিফাইনালে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। সেবার রানার্সআপ হয় ভারত। এবার রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতীয় দল বেশ শক্তিধর এবং বিরাট কোহলির মতো মহাতারকা রয়েছে। এ দুই মহাতারকার সঙ্গে শুভমান গিল, হার্দিক পান্ডিয়া, লোকেশ রাহুল, শ্রেয়াস আইয়ার ও ঋষভ পান্তরা ভারতীয় স্কোয়াডকে করেছেন শক্তিধর।
এই ব্যাটিং লাইনের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগকে বেশ চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। অফস্পিন অলরাউন্ডারের সঙ্গে হয়ত দেখা যাবে লেগস্পিনার রিশাদ হোসেনকে। তিনি আবার শেষদিকে ব্যাট হাতেও ঝলক দেখাতে সক্ষম। তাই রিশাদের ওপর ভরসা করছেন অনেকে। ৩ পেসার তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা এবং মুস্তাফিজুর রহমান কিংবা তানজিম হাসান সাকিব খেলবেন আজ।
দুবাইয়ের উইকেটে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু সেই ম্যাচে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে যেভাবে ধরাশায়ী হয়েছে তারা, এতে করে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে শান্তদের সক্ষমতা নিয়ে। তবে একই উইকেটে খেলা হবে না। কারণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচ আয়োজনের জন্য রাখা হয়েছে একেবারে অব্যবহৃত দুটি উইকেট। যদিও কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক লিগ টি২০ শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে দুবাইয়ের এই মাঠ তাই ১০ দিন বিশ্রাম পেয়েছে। উইকেট তাই স্পিনবান্ধব থেকে কিছুটা ব্যাটিংবান্ধব হতে পারে। শুরুতে অন্তত ৩০০ রান হয় এমন উইকেট দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিউরেটররা। আইএল টি২০-তে দুবাইয়ে ১৫ ম্যাচ হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টিই ছিল দিবা-রাত্রির। উইকেটে ব্যাটিং এবং বোলিং দুই পক্ষের জন্যই কিছু সুবিধা ছিল। অর্থাৎ স্পোর্টিং উইকেট ছিল।
এবারও দিবারাত্রির ম্যাচই হবে। তাই একই ধরনের পরিস্থিতি থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য ২০১৯ সালের পর দুবাইতে কোনো ওয়ানডে হয়নি। যে কারণে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আদর্শ রান কত ওই ধারণা পাওয়া কঠিনই হচ্ছে। দুবাইতে ২০১৮ সাল থেকে যে ওয়ানডেগুলো হয়েছে তা কম রানেরই ছিল। প্রথম ইনিংস গড় রান ছিল মাত্র ২১৩। গড়ে ২৫২ রান করা দল জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে।
তিনশ’ রান হয়েছে মাত্র দু’বার। ভারতের শক্ত ব্যাটিং লাইন হয়ত টার্গেটে থাকবে এমন রান করার জন্যই। তাই বাংলাদেশের বোলারদের জন্য বেশ সংগ্রামে পড়তে হবে। অন্যদিকে ভারতের বোলিং লাইনে দুই অলরাউন্ডার হার্দিক ও রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে থাকবেন রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদব। তারা বড় চ্যালেঞ্জে ফেলবে বাংলাদেশের সমস্যা আক্রান্ত ব্যাটিং লাইনকে।
ব্যাটারদের সাফল্যই দলগত সাফল্যের অন্যতম উপায়। সেদিক থেকে সৌম্য সরকার ও তানজিদ হাসান তামিমের ওপর ওপেনিংয়ে বড় আশা থাকছে। অর্শদীপ সিং, অভিজ্ঞ মোহাম্মদ শামি ও গতিময় হর্ষিত রানার পেসে বড় ধরনের লড়াই করতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। তাছাড়া তাওহিদ হৃদয় ও শান্ত একেবারেই ফর্মে নেই।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম এক সিরিজ পর খেলতে নামবেন। এর পরও বাংলাদেশের আশা ভারতকে হারিয়ে দেওয়ার। কারণ বাংলাদেশের বিপক্ষে কিছুটা স্থায়ুচাপে থাকে ভারত। সেটাকেই কাজে লাগিয়ে আজ শুভ সূচনা করতে চান শান্তরা।