
দুই অধিনায়ক বাংলাদেশের নাজমুল হোসেন শান্ত ও ভারতের রোহিত শর্মা
আট বছর আগে যেখানে থেমে গিয়েছিল যাত্রা, সেখান থেকেই আবার শুরু হচ্ছে। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথমবার সেমিফাইনাল খেলে বাংলাদেশ দল। সেবার বার্মিংহ্যামে ভারতের কাছে ৯ উইকেটের হারে থেমে যায় অভিযান। আজ দুবাইয়ে সেই ভারতের বিপক্ষেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শুরু করছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় ম্যাচটি মাঠে গড়াবে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এই আসরের জন্য একেবারে তরতাজা দুটি উইকেট রাখা হয়েছে। অব্যবহৃত থাকার কারণে তাই আচরণ স্পোর্টিং হবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। রান হবে অনেক তাই ব্যাটারদের সাফল্য পাওয়া জরুরি জয় পেতে। সেদিক থেকে কিছুটা শঙ্কায় আছে বাংলাদেশ দল। তবে ভারতের ব্যাটিং লাইন দুর্দান্ত।
বোলিংয়ে জাসপ্রিত বুমরাহ না থাকলেও যে লাইনআপ রয়েছে তা যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস। এর পরও ম্যাচের আগেরদিন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দাবি করেছেন, নিজেদের দিনে যে কোনো প্রতিপক্ষকেই হারিয়ে দিতে সক্ষম তারা।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ওয়ানডে ফরম্যাটে মানিয়ে নেওয়া। কারণ গত নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলার পর দেড়মাস টি২০ ফরম্যাটের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন ক্রিকেটাররা। সেখান থেকে নিজেদের ৫০ ওভারের ম্যাচে মানিয়ে নেওয়াটা হবে কঠিন।
তাছাড়া ওয়ানডেতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অধোগতি বড় ভাবনার বিষয়। ২০২৩ সালে ৩২ ওয়ানডে খেলে ১১ জয়, ১৮ হার এবং ২০২৪ সালে ৯ ওয়ানডে খেলে ৬ হার, ৩ জয়। এমন পারফর্ম্যান্সের কারণেই র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ৭ নম্বর থেকে পিছিয়ে এখন ৯ নম্বরে। টানা বাজে পারফর্ম্যান্সের জন্য বাদ পড়েছেন লিটন কুমার দাস এবং দলে নেই বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা ৬ জন বর্তমান দলে আছেন। বাকি ৯ জনই নতুন। এর মধ্যে আবার ২ জন- নাহিদ রানা ও পারভেজ হোসেন ইমনের এটাই প্রথম কোনো আইসিসি ইভেন্ট। ৭ টি২০ খেলা পারভেজের তো ওয়ানডে অভিষেকই হয়নি। তবে তার খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ২ স্পিনার, ৩ পেসার নিয়ে সাজানো বাংলাদেশের একাদশ হতে পারে এমনকি তাওহিদ হৃদয়কেও ছাড়া।
কারণ সম্প্রতি ফর্মের সঙ্গে লড়ছেন এই তরুণ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজেও খেলেননি তিনি ইনজুরির কারণে। তাই সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, শান্ত, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুশফিকুর রাহিম, জাকের আলী অনিক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব/মুস্তাফিজুর রহমান ও নাহিদ রানাকে নিয়ে একাদশ গড়া হতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যাটাররা ফর্মে না থাকলেও বোলাররা বেশ ফর্মে আছেন দীর্ঘ সময় ধরেই। তবে ব্যাটিং উইকেটে শুধু বোলিং শক্তি দিয়ে জেতা অসম্ভব। সেজন্য ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহ গড়তেই হবে। দুবাইয়ে দিবা-রাত্রির ম্যাচে প্রথম ইনিংসের সময় বেশ গরম থাকে। দ্বিতীয় ইনিংসে শিশির পড়ে। তবে কিউরেটররা জানিয়েছেন, শিশির তেমন প্রভাব ফেলবে না। আবার উইকেট ধীরও হতে পারে।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভাবনা থাকবে। কারণ মিরপুরে ধীর উইকেটে খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। তবে কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজার পাশাপাশি ওয়াশিংটন সুন্দর কিংবা বরুণ চক্রবর্তীকে খেলাতে পারে ভারত। সঙ্গে পেস বোলিংয়ে অর্শদীপ সিং, অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া ও মোহাম্মদ শামি থাকতে পারেন।
ব্যাটিংয়ে রোহিত শর্মা, শুভমান গিল, কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল কিংবা ঋষভ পান্তকে দেখা যেতে পারে। এই দুর্দান্ত লাইনআপ জাসপ্রিত বুমরাহকে ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য হট ফেভারিট। তাছাড়া বর্তমানে বিশে^র ১ নম্বর ওয়ানডে দল ভারত। যদিও বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ ৫ লড়াইয়ে ৩ বারই হেরেছে তারা, তবে টাইগারদের সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স হতাশার।
তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ^াস নিয়েই নামবে ভারতীয় দল। এ বিষয়ে শান্ত বলেছেন, এই সংস্করণে আমাদের দলটা ব্যালান্সড। আমরা বিশ্বাস করি এই টুর্নামেন্টে আমরা যে কোনো দলকে হারাতে পারি। সব দলই শিরোপা জয়ের সামর্থ্য রাখে। আমি এমন কেউ নই যে প্রতিপক্ষ নিয়ে খুব বেশি ভাবি। নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা যে কোনো দিন যে কোনো দলকে হারাতে পারি।
অধিনায়ক শান্তর কথা সত্য করতে হলে দুবাইয়ে বাংলাদেশের কম খেলার যে অভিজ্ঞতা সেটাকেও পেছনে ফেলতে হবে। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে এখানে ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল খেলে হেরেছে বাংলাদেশ। এই মাঠে সেই একটাই লড়াই দুই দলের মধ্যে। ৭ বছর পর সেখানে পরস্পরের বিপক্ষে নামছে উভয় দল।
ভারত এই ভেন্যুতে ৬ ওয়ানডে খেলে ৫টিতেই জিতেছে, একটি করেছে টাই। আর বাংলাদেশ ৩ ম্যাচে জিতেছে একটি। দু’দিন আগে প্রস্তুতি ম্যাচেও এই ভেন্যুতে পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। তাই খুব বেশি আশা করার কিছু এখন পর্যন্ত নেই। তবে শান্ত বলেছেন, আমার মনে হয় সব বিভাগেই আমাদের ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে- ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং।
কারণ গত কয়েক বছরে ওয়ানডেতে আমরা যেভাবে খেলছি, আমার মনে হয় আমরা ভালো দল। যেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করেছি তাতে আমরা আত্মবিশ্বাসী। আগামীকালের (আজ) ম্যাচে ভালো কিছুর আশা করছি। এই টুর্নামেন্টে ২০০৬ সালের আসরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে জয়পুরে ১০১ রানে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পরবর্তী জয় পেতে ১১ বছরের অপেক্ষা।
অবশ্য এই দীর্ঘ বিরতির পরই আরেকটি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেবারই ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ দল। প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে অবিশ^াস্যভাবে ৬ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে। তার আগে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি। সবমিলিয়ে ১২ ম্যাচে ২ জয়, ৯ হার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। তবু ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বলেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশা।
শান্ত বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচের তো একটা রোমাঞ্চ থাকেই। আমার মনে হয় যে প্লেয়াররা এটা নিয়ে (রোমাঞ্চ) খুব বেশি চিন্তা করে না, নিজেদের পরিকল্পনা কীভাবে কাজে লাগাবে সেটা নিয়ে চিন্তা করে। আমার মনে হয় উপরের দিকে যারা খেলে ওদের লম্বা ইনিংস খেলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি আমাদের ওই ক্ষমতা আছে। আমাদের প্রস্তুতি অনুযায়ী আমরা ভালো অবস্থানে আছি।