
ট্রাভিস হেড, রশিদ খান ও ড্যারিল মিচেল
তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ) ॥ সময়টা দারুণ কাটছে তাসকিন আহমেদের। বাংলাদেশের পেস ইউনিটের নেতৃত্বের ভারও এখন তার কাঁধে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্দেশ্যে বিমানে উঠার আগে বিপিএলে নিজের জাত ছিনিয়েছেন আলাদাভাবে। দুর্বার রাজশাহী প্লে-অফে খেলতে ব্যর্থ হলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে ঠিকই ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন তাসকিন আহমেদ।
১২ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়ে এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীদের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেন তিনি। পারফর্মেন্সের এই ধারাবাহিকতা এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও উপহার দিতে চান তাসকিন। একদিনের ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৭৭ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের মিশন শুরু করবে টাইগাররা।
পরের দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী এই তিন দলের বিপক্ষে তাসকিন কী পারবেন নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে? বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার।
সালমান আগা (পাকিস্তান) ॥ দীর্ঘ ২৯ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে বসতে যাচ্ছে আইসিসির কোন ইভেন্ট। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল দেশটি। নিজেদের মাটিতে এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জও তাদের। সেজন্য এবার পাকিস্তানের বাজির ঘোড়া হয়ে যেতে পারেন অলরাউন্ডার সালমান আগা।
৩১ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ৩৩টি। তারপরও এবার সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগেও নিজেকে মেলে ধরেছেন সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি মঞ্চে ২২৯ রানের পাশাপাশি ১ উইকেট নিয়ে সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটাও নিজের করে নিয়েছেন সালমান। যে কারণে এবার মূলমঞ্চেও তার উপর আস্থা রাখছে স্বাগতিক শিবির।
ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি উঁচিয়ে ধরার স্বপ্নে বিভোর সালমান আগাও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত। দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানের মাটিতে আইসিসি টুর্নামেন্ট। লাহোরের একজন বাসিন্দা হিসেবে আমার নিজের শহরে ট্রফি উঁচিয়ে ধরা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার। আমার বিশ্বাস পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের সামর্থ্য আছে।’
শুভমান গিল (ভারত) ॥ গত বছরের শেষের দিকে লাল বলের ক্রিকেটে রান পাচ্ছিলেন না শুভমান গিল। যে কারণে সবশেষ বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের একাদশ থেকেও জায়গা হারিয়ে ফেলেন ভারতীয় ক্রিকেটের এই রতœ। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগেই নিজেকে স্বরূপে ফেরানোর লক্ষ্যে রঞ্জি ট্রফিতে খেলেন ১৭১ বলে ১০২ রানের এক ইনিংস।
এরপর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে শেষ সিরিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তো রীতিমতো অবিশ্বাস্য ফর্মে ফিরেন গিল। তাতেই ইংল্যান্ড ক্লিনসুইপ। প্রথম ওয়ান ডে তে ৮৭, এরপর ৬০। শেষ ম্যাচে তো বিধ্বংসী সেঞ্চুরি। ফলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ সেরার পুরস্কারটাও জিতে নেন শুভমান গিল। ওয়ান ডে ক্যারিয়ারে ৫০ ম্যাচ খেলেই ২৫৮৭ রান করেছেন তিনি।
যার মধ্যে সাত সেঞ্চুরি ও ১৫ হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি রয়েছে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও। ৬০ এর উপরে ব্যাটিং গড় নিয়ে গিল এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্টে পালন করবেন রোহিত শর্মার ডেপুটির ভূমিকা। দারুণ ছন্দে থাকা গিলের উপর তাই ভারতীয়দের থাকছে এবার বাড়তি প্রত্যাশা।
ট্র্যাভিস হেড (অস্ট্রেলিয়া) ॥ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু টুর্নামেন্টের নবম সংস্করণ শুরুর আগে বড় ধাক্কা অজি শিবিরে। চোটের কারণে প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজেলউডের ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা আগেই ছিল। মিচেল স্টার্ক নিজেকে সরিয়ে নেন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে।
সর্বোপরি পূর্বঘোষিত প্রাথমিক দলে পাঁচ পরিবর্তন এনে চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করে তারা। যে কারণে এবারের আসরে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে বাড়তি নজর থাকবে ব্যাটিং অলরাউন্ডার ট্র্যাভিস হেডের ওপর। বড় মঞ্চে হেড সবসময়ই নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেন। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও তাই সেরা পারফর্মারের তালিকার শীর্ষে রাখছেন অস্ট্রেলিয়ারই সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। বাঁহাতি এই ব্যাটারের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলেও মনে করেন ক্লার্ক।
ড্যারিল মিচেল (নিউজিল্যান্ড) ॥ ২০০০ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দ্বিতীয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল নিউজিল্যান্ড। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ২৫ বছর। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পুনরুদ্ধার তো দূরের কথা অন্য কোন টুর্নামেন্টের শিরোপাও উঁচিয়ে ধরতে পারেনি ব্ল্যাক ক্যাপসরা। তবে এবার আইসিসির এই মেগা ইভেন্ট শুরুর আগে নিউজিল্যান্ডকেই বলা হচ্ছে নতুন ফেভারিট।
কেননা, পাকিস্তানের মাটিতে সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজে যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। আর কিউইদের জার্সিতে এই সিরিজে দারুণ খেলেন ড্যারিল মিচেল। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৮১ এবং ফাইনালে সেই একই দলের বিপক্ষে খেলেন ৫৭ রানের দুর্দান্ত দুটি ইনিংস। মিচেল এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও নিজের সেরাটা ঢেলে দিবেন বলে কিউই সমর্থকদের বিশ্বাস।
এইডেন মার্করাম (দক্ষিণ আফ্রিকা) ॥ আইসিসির ইভেন্ট মানেই দক্ষিণ আফ্রিকার চরম হতাশা। সর্বশেষ টি২০ বিশ্বকাপেও ভারতের কাছে হেরে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল প্রোটিয়ারা। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কী শিরোপা-আক্ষেপ ঘুচবে তাদের? পারবে কী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা আবারও এই ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে? সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের মাটিতে এবার বড় ভূমিকা রাখতে হবে এইডেন মার্করামকে।
জশ বাটলার (ইংল্যান্ড) ॥ বিশ্ব ক্রিকেটে খুব খারাপ সময় যাচ্ছে ইংল্যান্ডের। ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০২৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মিশন শুরু করলেও আইসিসির দুটি মেগা ইভেন্টেই বাজে পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে বিদায় নেয় তারা। এবার তাদের সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এর আগেও ভালো নেই দলটি।
সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও হোয়াইওয়াশের লজ্জায় শেষ করে ইংল্যান্ড। তারপরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছেন জশ বাটলার। এ প্রসঙ্গে ইংলিশ অধিনায়ক বলেন, ‘আশা করি, আমাদের সেরাটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য তুলা আছে। এই টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ড যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্যই ভয়ংকর হবে।’
রশিদ খান (আফগানিস্তান) ॥ বিশ্ব ক্রিকেটের আতংকের নাম এখন আফগানিস্তান। ধারাবাহিক পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে এবার প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলছে তারা। শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দল যেখানে নেই সেখানে প্রতিনিধিত্ব করছে আফগানরা। আর এই দলটির পোস্টার বয় বলা চলে রশিদ খানকে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের অভিষেক আসরেই ট্রাম্প কার্ড হতে পারেন এই আফগান অলরাউন্ডার। তার নেতৃত্বেই সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া টুর্নামেন্ট এসএ২০ এর নতুন চ্যাম্পিয়ন হয় এমআই কেপটাউন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বল ও ব্যাট হাতে জ্বলে উঠার প্রত্যয় এই আফগান অলরাউন্ডারের।