
ইসমাইল, মানবী শিরিন
অ্যাথলেটিক্সকে বলা হয় ‘মাদার অব গেমস’। আর সেই গেমসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ডিসিপ্লিন হচ্ছে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। জাতীয় অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার ৪৮তম আসরে অনূর্ধ্ব ১০ সেকেন্ডের রুদ্ধশ্বাস দৌড়ে কে হন বিজয়ী বা বিজয়িনী, সেটা জানার জন্য সোমবার জাতীয় স্টেডিয়াম, ঢাকায় হাজির ছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক।
অনূর্ধ্ব ১০ সেকেন্ডের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে এ ভুবনে। ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হতে পারে সুউচ্চ অট্টালিকা, ঘটতে পারে গাড়ি দুর্ঘটনা, আবার এক নিঃশ্বাসের দৌড়ে হাসিল করা যায় স্বর্ণপদক। তেমনটাই হাসিল করলেন শিরিন আক্তার এবং মোহাম্মদ ইসমাইল। যদিও ইভেন্টে বিজয়ী হিসেবে দুজনেই পুরনো মুখ। এর আগে জাতীয় অ্যাথলেটিক্সের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বিজয়ীদের মধ্যে পুরষ্কারও বিতরণ করেন তিনি।
তিন বছর পর দেশের দ্রুততম মানবের মুকুট পুনরুদ্ধার করলেন ইসমাইল। তার টাইমিং ১০.৬১ সেকেন্ড (ইলেক্ট্রোনিক্স)। এ নিয়ে পঞ্চমবার এই খেতাব জিতলেন তিনি। অন্যদিকে দ্রুততম মানবীর মুকুট অক্ষুণœ রাখলেন শিরিন। টানা ১৬ বার দেশের মেয়েদের মধ্যে সেরা অ্যাথলেট হলেন। তার টাইমিং ১২.০১ সেকেন্ড (ইলেক্ট্রোনিক্স)। দু’জনেই নৌবাহিনীর অ্যাথলেট। ফিনিশিং লাইন পার হওয়ার সময় মনে হলো ইসমাইল ও রাকিবুল হাসান সমানতালেই ছিলেন।
যদিও রাকিবুল ফিনিশিং লাইন টাচ করে পড়ে যান। কিন্তু ফটোফিনিশিংয়ে বুক এগিয়ে থাকায় স্বর্ণপদক জিতে নেন ইসমাইলই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জুবাইল ইসলাম ১০.৮৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে হন তৃতীয়। ২০১৮ সালে প্রথমবার ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দেশসেরা হয়েছিলেন ইসমাইল। টানা আরও তিনবার। তবে লন্ডন প্রবাসী স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার পর আর সেই মুকুট ধরে রাখতে পারেননি নৌবাহিনীর এই স্প্রিন্টার। সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ২০২২-২৪ টানা তিনটি দ্রুততম মানবের খেতাব জিতে নেন ইমরানুর।
এবার অবশ্য চোটের কারণে জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে খেলতে আসেননি তিনি। এতেই বাজিমাত ইসমাইলের। তার কথা, ইমরানুর না থাকায় অবশ্য কিছু সুবিধা তো পেয়েছি। তবে অন্যরাও বেশ এগিয়েছে। গত সাত মাস টানা পরিশ্রম করে গেছি এই খেতাব পুনরুদ্ধারের জন্য। খাবারে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচা গেছে। ১০০ মিটারের মধ্যে শেষ ১০ মিটারে এগিয়ে আসতে আমাকে অনেক কাজ করতে হয়েছে।
এটাই আমার ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং। আগের টাইমিং ছিল ১০.৬৩ সেকেন্ড। আড়াই মাসের সন্তানকে নিয়ে আমার স্ত্রী ও অ্যাথলেট তামান্না আক্তার সমর্থন যুগিয়ে গেছেন। এজন্য এই সাফল্যে অর্ধেক কোচ আবদুল্লা হেল কাফির (সাবেক তারকা অ্যাথলেট এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক) এবং অর্ধেক আমার স্ত্রীর।
জাতীয় ও সামার অ্যাথলেটিক্সে ক্যারিয়ারে টানা ১৬ বারের মতো দ্রুততম মানবীর খেতাব জিতলেন শিরিন। শিরিনের বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি দেশে। যেখানে তার টাইমিং ১২.০১ সেকেন্ড, সেখানে তারই সতীর্থ সুমাইয়া দেওয়ানের টাইমিং ১২.১৫ সেকেন্ড। তৃতীয় হন বিকেএসপির আজমি খাতুন (১২.৫০ সেকেন্ড)।
শিরিনও কৃতিত্ব দিলেন কোচ কাফিকে, আমার কোচ কাফি স্যার খুব কষ্ট করেছেন আমার জন্য। আমি কৃতজ্ঞ ওনার কাছে। আমার একটাই আশা আমি আন্তর্জাতিক আসরে একটি স্বর্ণপদক এনে দিতে চাই দেশকে। তারপর অন্যকথা ভাবব। আসলে প্রতিপক্ষ তৈরি হয়নি তা বলব না। কারণ ট্র্যাকে ন্যানো ও মাইক্রো সেকেন্ডে অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে। তাই দৌড়ানোর সময়েও চোখ খোলা রেখে সজাগ থাকতে হয়।