.
এখন পর্যন্ত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আটটি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাঁচবার অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের সেরা সাফল্য ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া আসরে সেমিফাইনাল খেলা। সেই আসরটির পর আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অনুষ্ঠিত হয়নি। ৮ বছর পর এবারই প্রথম পাকিস্তান আয়োজন করছে এই টুর্নামেন্ট। যদিও ভারতীয় দল পাকিস্তানে যেতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে হাইব্রিড মডেলে শুধু ভারতের ম্যাচগুলো দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ দল। বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে দুবাইয়ে রওনা হয়েছেন তারা। ১৫ জনের স্কোয়াডে থাকা ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা ও পারভেজ হোসেন ইমনের এটাই প্রথম কোনো আইসিসি ইভেন্টে অংশগ্রহণ হতে যাচ্ছে। এই দলটিতে নেই অভিজ্ঞ বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাস। সবমিলিয়ে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত যদিও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য জানিয়েছেন, তা বাস্তব করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। এই আসরে সহঅধিনায়ক করা হয়েছে মেহেদি হাসান মিরাজকে। ২০১৭ সালের আসরের অনেকেই এবার নেই। ‘এ’ গ্রুপে ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ওপরে ওঠা বড় চ্যালেঞ্জ তাই টাইগারদের জন্য।
সবেমাত্র টি২০ ফরম্যাটের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এখন খেলতে হবে ওয়ানডে ফরম্যাটের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। প্রথম ম্যাচটি দুবাইয়ে হট ফেবারিট ভারতের বিপক্ষে ২০ ফেব্রুয়ারি। এই ভেন্যুতে ৭ টি২০ খেলে মাত্র একটাই জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ৩ উইকেটে হেরেছে তারা। প্রায় ৭ বছর পর আবার সেই ভেন্যুতে ভারতের বিপক্ষে লড়তে যাচ্ছে এবার বাংলাদেশ। ভারতীয় দলে অবশ্য অন্যতম পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ নেই, তবে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগকে বড় পরীক্ষা দিতে হবে। আজই দুবাইয়ে পৌঁছার কথা বাংলাদেশ দলের। পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে ১৭ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ের আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি মাঠে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে নিজেদের বর্তমান অবস্থাটা যাচাই করতে পারবেন শান্তরা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেই আবার যেতে হবে পাকিস্তানে। মাঝে ৩ দিন সময় থাকবে যার মধ্যে দু’দিন অনুশীলনের সুযোগ থাকবে রাওয়ালপিন্ডিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে নামার আগে। ৮ বছর আগে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আসরে এই নিউজিল্যান্ডকেই হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ দল। সেই স্কোয়াডের মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, সাকিব, ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, সাব্বির রহমান, শফিউল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও সানজামুল ইসলাম এবার নেই। অর্থাৎ ওই আসরে খেলা ৬ ক্রিকেটার- মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদ এই আসরেও খেলবেন।
এবার দলে ওপেনিং পজিশনের জন্য উদীয়মান তরুণ পারভেজ হোসেন ইমন আছেন। ৭ টি২০ খেলেছেন তিনি বাংলাদেশের হয়ে এবং মূলত এই ফরম্যাটেই নিজেকে কিছুটা প্রমাণও করতে পেরেছেন। ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন পারভেজ। এছাড়া মাত্র ৩ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এই প্রথম আইসিসির কোনো বড় ইভেন্টে নামছেন গতিময় পেসার নাহিদ। এ দুই তরুণের সঙ্গে তাওহিদ হৃদয়, তানজিদ হাসান তামিম, জাকের আলী অনিক, তানজিম হাসান সাকিব, রিশাদ হোসেনের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সবমিলিয়ে ৯ জনের। অধিনায়ক শান্ত ও নাসুম আহমেদেও প্রথমবার এই আসরে খেলবেন।
অভিজ্ঞ মিরাজ সহ-অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন এই আসরে। অনুশীলনের সুবিধার্থে দলের সঙ্গে যাচ্ছেন পেস বোলিংয়ে দুই দুর্দান্ত পারফর্মার হাসান ও খালেদ। দু’জন অবশ্য শনিবার যাবেন দুবাইয়ে। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের আগেই আবার দেশে ফিরে আসবেন তারা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পিন্ডিতে দ্বিতীয় ম্যাচ বাংলাদেশের। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের ফল যেমনই হোক আবার কিউইদের বিপক্ষেই জেতার টার্গেটে নামবে টাইগাররা। সেক্ষেত্রে সেমিতে যাওয়ার লক্ষ্য আবারও পূরণ হতে পারে। ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিকাপে পয়েন্ট টেবিলের ৮ নম্বরে থাকায় এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ।
কন্তু ২০০৯ ও ২০১৩ সালে আইসিসির সর্বশেষ র্যাঙ্কিং অনুসারে ৯ নম্বরে থাকায় অংশ নিতে পারেনি। বর্তমানেও ৯ নম্বরে আছে বাংলাদেশ দল। গত বছর ওয়ানডেতে বেশ বাজে সময় কাটিয়েছেন শান্তরা। ৯ ওয়ানডে খেলে মাত্র ৩ জয়ের বিপরীতে হার ৬টি। ২০২৩ সালেও ৩২ ওয়ানডে খেলে ১১ জয়ের বিপরীতে ১৮ হার। সেজন্যই র্যাঙ্কিংয়ে ৭ নম্বর থেকে দুই ধাপ অবনমন ঘটেছে। এজন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এবার অনেক পরিবর্তিত একটি দল নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।