ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১

কেন ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা করার হুমকি দিলেন জাতীয় কাবাডি খেলোয়াড় টুকটুকি?

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৪৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কেন ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা করার হুমকি দিলেন জাতীয় কাবাডি খেলোয়াড় টুকটুকি?

নিজের দুরবস্থার জন্য টুকটাকি দায়ী করেছেন তার স্বামী, মা, কাবাডি ফেডারেশন ও বাংলাদেশ আনসারকে।

“যদি কোন অন্যায় করে থাকি, তাহলে সবাই আমাকে মাফ করে দেবেন। আমি এখন নিজেকে শেষ করে দেব”। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে কিছুক্ষণ আগেই নিজের ফেসবুক লাইভে এসে এমনই ভয়ংকর হুমকি দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী কাবাডি দলের খেলোয়াড় টুকটুকি আক্তার। 

ফেসবুক লাইভে ক্রন্দনরত জাতীয় কাবাডি খেলোয়াড় টুকটুকি (ছবি: টুকটুকির ফেসবুক পেজ থেকে স্ক্রিনশট নেয়া)

২০১৪ সাল থেকে জাতীয় দলের হয়ে কাবাডি খেলেছেন টুকটুকি। ২০১৪ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জপদক জেতা কাবাডি দলের অংশ ছিলেন। এছাড়া ২০১৬ সালের গৌহাটি-শিলং সাউথ এশিয়ান গেমসের রৌপ্যজয়ী কাবাডি দলেরও অংশ ছিলেন। ঘরোয়া পর্যায়ে খেলেছেন বাংলাদেশ আনসারের হয়ে। কেন নিজের জীবন শেষ করে দিতে চান টুকটুকি? এজন্য তিনি দায়ী করেছেন অনেককেই। যার তালিকায় আছে তার স্বামী, মা, কাবাডি ফেডারেশন ও আনসার।

টুকটুকি জানিয়েছেন, “পরিবারের পছন্দে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু আমি যখন তিন মাসের প্রেগন্যান্ট, তখনেই পাল্টে যায় আমার স্বামী। আমাকে প্রচণ্ড নির্যাতন-গালমন্দ করতো। পরে আমাকে ভুল বুঝিয়ে ঔষধ খাইয়ে পেটের বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলে। আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তারপর  আমাকে ডিভোর্স দেয়।”

নিজের মা-কেও কাঠগড়ায় তুলেছেন ফেসবুক লাইভে এসে ক্রন্দনরত টুকটুকি, “সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে, আমার নিজের মা-ও আমাকে কষ্ট দিয়েছে। বলেছে, তোর মরে যাওয়াই ভালো!আগে যদি জানতাম, তাহলে কখনেই ফ্যামিলির পছন্দে এই বিয়েটা করতাম না।”


টুকটুকি আরও বলেন, “সবাই আমাকে ডিভোর্সি বলে উপহাস করবে। এমনটা শোনার চেয়ে মরে যাওয়াই অনেক ভালো!” কাবাডি খেলতে গিয়ে পা ভেঙ্গে গিয়েছিল টুকটুকির। কিন্তু পায়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে ফেডারেশন ও আনসারের অবহেলা-অসহযোগিতার শিকার হওয়ার কথা জানান টুকটুকি, “আমি ন্যাশনাল টিমের প্লেয়ার। আমার পা খেলতে গিয়ে ভেঙ্গে গেল। এরপর ফেডারেশনের স্যারদের কাছে কত ধর্ণা দিয়েছি, এমনকি আনসারের কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েও সাহায্য করেছি। কিন্তু কেউ আমাকে পা ঠিক করার জন্য একটি টাকা দিয়েও সাহায্য করেনি। আমি দেখতে সুন্দর নই বলেই কি?” পা ঠিক করতে কত টাকা লেগেছে, তা জানান টুকটুকি,‘পা ঠিক করতে আমার সাড়ে তিন লাখ টাকা লেগেছে। আমি গরীব মানুষ। এই টাকা কিভাবে জোগাড় করতে হয়েছে, সেটা আমি জানি।” 

ফেসবুক লাইভে টুকটুকির মন্তব্যের ঘরে অনেকেই টুকটুকিকে আত্মহত্যা করলে জাহান্নামে যেতে হবে বলে মনে করিয়ে দিলে টুকটুকি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, “আমার তো দুনিয়াটাই এখন জাহান্নাম হয়ে আছে! আমার জায়গায় তোমরা হলে বুঝতে।” এরপর টুকটুকি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “সুইডসাইডই আমার একমাত্র মুক্তির পথ। বিদায়, আর দেখা হবে না। জীবনে চলার পথে অনেক কষ্ট পেয়েছি, অনেক কষ্ট করেছি।আমার অবস্থা এখন শোচনীয়।”

ফেসবুক লাইভের আগে টুকটুকি নিজের ফেসবুক ওয়ালে (তার ফেসবুক আইডি নাম টুকটুকি পাখি) একটা স্ট্যাটাসে লেখেন, “আমি একটা ডিভোর্স নারী। একটা মেয়ে ডিভোর্স হয়ে গেলে সে মেয়েটার আর কোন মূল্য থাকে না। আমার ফ্যামিলি আমার পাশ থেকে সরে গেছে। সব থেকে বড় কথা কি জানেন, আমার আম্মু অনেক আশা করে আমাকে বিয়ে দিছিল। আমার পেটে তিন মাসের বাচ্চা ছিল। সেটা আমার স্বামী ভুল ওষুধ খাওয়াইয়া মেরে ফেলছে। সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিছে। সেদিন রাত আমাকে এক টর্চার করত মারধর করতো।”

রুমেল খান/রিফাত

×