ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে দাম্পত্য জুটি

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:১৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে দাম্পত্য জুটি

সাফজয়ী ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন বিয়ে করেছেন তারই ভক্ত শরিফুল ইসলাম টিংকুকে

শাদি, নিকাহ, বিবাহ... এগুলোর আধুনিক শব্দ বিয়ে। বিয়ে মানবজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অধ্যায়। ধর্মে আছে মানুষের জীবন অর্ধেক থাকে, আর তা পূর্ণতা পায় বিয়ের মাধ্যমে। বিয়ের বিধান সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই পালন হয়ে আসছে। আদর্শ পরিবার গঠন, জৈবিক চাহিদা পূরণ, মানসিক প্রশান্তি ও বংশবৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম হলো বিয়ে।

বিয়ে প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত চাহিদাও পূরণ করে। কেউ সারাজীবনে একটিই বিয়ে করে। কেউবা আবার একাধিক বিয়ে করে। কেউ নিজ ধর্মের, কেউ অন্য ধর্মের মানুষকে বিয়ে করে। কেউ ‘ইয়ে করে’ কিংবা পালিয়ে বিয়ে করে (ভালোবেসে), কেউ বিয়ে করে পরিবারের পছন্দে। 
কেউ বিয়ে করে কাজী অফিসে, কেউ বাড়িতে, কেউ কমিউনিটি সেন্টারে। কারোর বিয়ে টেকে বহু বছর, কারোরটা কয়েক দিনেই ভেঙে যায়। বিয়ে করে কেউ হয় সুখী, আবার কেউ হয় দুঃখী! কেউ বিয়ে করে আত্মীয়কে, কেউ বিয়ে করে অনাত্মীয়কে। কেউ বিয়ে করেন যৌতুক নিয়ে, কেউ বা যৌতুকবিরোধী বিয়ে করেন।

আয়োজন করে বিয়ে হলে প্রচুর অতিথিদের সমাগম, খাওয়া-দাওয়া, উপহার দেওয়া, আনন্দ-উৎসব এগুলো স্বাভাবিক বা সাধারণ ব্যাপার। বাসর রাত, হানিমুন, ম্যারেজ ডে, সন্তান... এগুলো সবই বিয়ের পরের ধাপ। 
বাংলাদেশে যারা বিয়ে করেন, তাদের মধ্যে সাধারণত পুরুষরাই উপার্জনক্ষম। সেক্ষেত্রে স্ত্রী হন গৃহিণী। তবে অনেকক্ষেত্রে স্ত্রীরাও স্বাবলম্বী হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রী হয়ে থাকেন ভিন্ন পেশার। তবে একই পেশারও দম্পতি দেখা যায় প্রচুর।

যেমন ডাক্তার, শিক্ষক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী, সরকারি চাকরিজীবী প্রভৃতি। এই তালিকায় ফেলা যায় খেলোয়াড়দেরও। বাংলাদেশে প্রচুর খেলোয়াড় দম্পতি আছে। কিন্তু আজকের লেখার বিষয়বস্তু হচ্ছে বাংলাদেশে একই খেলায় দম্পতিদের কথকথা।   
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে একই খেলায় অংশ নেওয়া দম্পতির উদাহরণ খুব বেশি না হলেও নেহায়েত কম নয়। সেই তালিকায় এবার যোগ হয়েছেন মাবিয়া-প্রান্ত জুটি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি গাঁটছড়া বাঁধেন এই ভারোত্তোলক দম্পতি। যেখানেই সীমান্ত, সেখানেই প্রান্ত। না, বর্ডার অঞ্চল নিয়ে বলা হচ্ছে না। দুজন মানব-মানবীর কথা। ভারোত্তোলনের মঞ্চে চোখাচোখি।

তারপর ধীরে ধীরে পরিচয়, প্রেম এবং সবশেষে পরিণয়। দীর্ঘদিন ভালোবাসার পর এবার বিয়ে করেছেন এসএ গেমসে সোনাজয়ী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। ৭ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। বর সাখাওয়াত হোসেন প্রান্তও ভারোত্তোলক। মাবিয়া যেমন বাংলাদেশ আনসারের ভারোত্তোলক, প্রান্তও তেমনি একই সংস্থার খেলোয়াড়।

শুরুতে ভালো লাগা। পারিবারিকভাবেই এই বিয়েটা হয়েছে। মাবিয়ার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার উজ্জ্বল হলেও প্রান্তর তেমন সাফল্য নেই। শুধু ঘরোয়া ভারোত্তোলনে সোনা জিতেছেন তিনি। কিন্তু ২০১৬ গুয়াহাটি এসএ গেমসের পর পোখারাতে ২০১৯ সালের গেমসে সোনা জেতেন মাবিয়া। অবশ্য মাবিয়া পোখারাতে সোনা জিতলেও সেবার পুরুষদের ৮৯ কেজি ওজন শ্রেণিতে রুপা জিতেছিলেন প্রান্ত।

গোলাবারুদের খেলা শূটিংয়ে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছেন ফিরোজ হোসেন পাখী-লাভলী চৌধুরী আঁখি, সাবরিনা সুলতানা-সাইফুল আলম চৌধুরী রিংকি, আবদুল্লা হেল বাকী-সাফারিয়া আক্তার এবং নাজিফা নাতাশা-শাকিল আহমেদ দম্পতি।
তেমনি সাঁতারে আছেন মাহফুজা খাতুন শীলা-শাহজাহান আলী রনি, সোনিয়া আক্তার-আসিফ রেজা, কামাল হোসেন-লাবণী আক্তার জুঁই, সবুরা খাতুন-শরীফুল ইসলাম, আসিফ রেজা-সোনিয়া আক্তার টুম্পা দম্পতি। ব্যাডমিন্টনে রয়েছেন আবুল হাশেম-কামরুন নাহার ডানা, এনায়েত উল্লাহ খান-এলিনা সুলতানা, অহিদুজ্জামান রাজু-শাপলা আক্তার জুটি। আরচারিতে রোমান সানা-দিয়া সিদ্দিকী।

উশুকা জিয়াউল হক-শিখা খাতুনও বিয়ে করে সংসার করছেন একসঙ্গে। ভারোত্তোলনে রয়েছে মোল্লা সাবিরা-কাজল দত্ত জুটি। অ্যাথলেটিক্সে রয়েছে মুজিবর রহমান মল্লিক-তাসলিমা রহমান, রেহেনা পারভীন-মিলজার হোসেন, শাহ আলম-হোসনে আরা খানম হাসি, মো. ইসমাইল-তামান্না আক্তার দম্পতি।
ফুটবলে মাহবুবুর রহমান লিটু-মাহমুদা আক্তার অনন্যা, হ্যান্ডবলে হাসান উল্লাহ রানা-রাশিদা, ইশরাত দিনা-কামরুল ইসলাম কিরণ, টেবিল টেনিসে মোহাম্মদ আলী-সোনাম সুলতানা সোমা, মাহবুব বিল্লাহ-মৌমিতা রুমি, কারাতেতে হোসেন খান মুন-হুমায়রা অন্তরা, হকিতে ফজলে হোসেন-রিতু খানম, সোহানুর রহমান সবুজ-তাসনিম আক্তার মিম দম্পতি।
একই খেলায় না হলেও ভিন্ন খেলায় স্বামী-স্ত্রীর উদাহরণ বাংলাদেশে আছে ভূরি ভূরি। সবার কথা এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা সম্ভব নয়। শুধু সর্বশেষ উদাহরণটি দেওয়া যেতেই পারে। যেদিন ভারোত্তোলক বিয়ে করেন, সেদিনই সিরাজগঞ্জে বিয়ে করেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের সাবেক ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন-ও। 
২০২৩ সালে অভিমানে বাফুফের ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়া সিরাজগঞ্জের মেয়ে আঁখি নতুন জীবন শুরু করেছেন। বর তারই একজন ভক্ত। নাম শরিফুল ইসলাম টিংকু। টিংকুও আঁখির মতো বিকেএসপির সাবেক শিক্ষার্থী। তবে ওই সময় তাদের পরিচয় ছিল না। ছেলেদের ‘কায়সার হামিদ’ খেতাব পাওয়া আঁখির খেলা দেখে ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন টিংকু। বর্তমানে কাজ করছেন চীনে একটি একাডেমির টেনিসের কোচ হিসেবে।

×