ফাইনালে চোখ রেখে অনুশীলনে মগ্ন খুলনা টাইগার্সের ক্রিকেটাররা, ডানেÑ জিততে মরিয়া চিটাগং কিংসের খেলোয়াড়রাও
ইতোমধ্যে অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে চিটাগং কিংসের। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি২০ আসরে শুরুর দিকে তেমন ধারাবাহিকতা না থাকলেও টানা ৩ ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় স্থান নিয়ে প্রাথমিক রাউন্ড শেষ করে দলটি। অথচ আসরের মাঝ সময় পেরিয়ে গেলেও অনিশ্চয়তা ছিল তাদের প্লে-অফে ওঠার ক্ষেত্রে। সেই দলটি প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলেছে।
তবে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের কাছে হেরে যাওয়ায় ফাইনালে ওঠার দ্বিতীয় সুযোগ লাভ করেছে। আজ সেই সুযোগ কাজে লাগাতেই নামবে তারা খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে মুখোমুখি হবে দু’দল। বিজয়ীরা ফাইনালে পৌঁছবে। সেখানে ইতোমধ্যেই প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে উঠে প্রতিপক্ষের জন্য অপেক্ষায় আছে বরিশাল।
খুলনা আছে এখন দারুণ ছন্দে। প্রাথমিক রাউন্ড থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা তৈরি হওয়ার পর থেকে টানা জিতেছে দলটি। জয়ের হ্যাটট্রিক করে এলিমিনেটর ম্যাচে রংপুর রাইডার্স বাধা পেরিয়ে এখন ফাইনালের পথে আর মাত্র একটি পরীক্ষা। তা জিততে মরিয়া হয়েই নামবে দলটি।
খুলনার কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি এ নিয়ে দশমবার বিপিএল আসরে খেলছে। এর আগে ৪ বার খুলনা প্লে-অফ খেলে একবার মাত্র ফাইনালে উঠতে পেরেছে। কিন্তু ২০২০ সালের বিপিএল ফাইনালে রাজশাহীর কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছে। এবার খুলনা টাইগার্স হয়ে খেলতে নামা এই দলটির জন্য সুযোগ আরেকবার ফাইনালে ওঠার। প্লে-অফ পর্যন্ত আসার জন্য বেশে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে খুলনাকে।
তারা রাউন্ড রবিন লিগ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল। লিগ পর্বের শেষ দুটি ম্যাচ হয়ে ওঠে নকআউট। সেই ম্যাচগুলোয় তারা জিতেছে শক্তিশালী রংপুর ও ঢাকার বিপক্ষে। লিগ পর্বের শেষদিন ম্যাচ জিতে সবার পরে প্লে-অফ নিশ্চিত করতে পেরেছে খুলনা। ৬ হার, ৬ জয়ে গড়পড়তা একটি পারফর্ম্যান্স দেখিয়েছে তারা। এখন সেই দলটিই হয়ে উঠেছে ফাইনাল খেলার অন্যতম দাবিদার। শক্তি বাড়াতে এলিমিনেটর ম্যাচে দুই বিদেশিকে হুট করে দলে ভিড়িয়েছে তারা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই তারকা জ্যাসন হোল্ডার ও শিমরন হেটমায়ার যোগ দেওয়াকে শক্তি বেড়েছে নিঃসন্দেহে। সেই সঙ্গে টুর্নামেন্টজুড়ে ব্যাট হাতে দারুণ সার্ভিস দেওয়া ওপেনার নাইম শেখ একটানা ভালো করছে। এখন তিনি ৪৯২ রান করে চলতি আসরের সর্বাধিক রানের মালিক। এমন পারফর্মার থাকলে ব্যাটিংয়ের দুশ্চিন্তা দূরে থাকে। রংপুরের বিপক্ষে আরেকটি ডু-অর-ডাই ম্যাচেও ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন তিনি এলিমিনেটরে।
বোলাররাও দুর্দান্ত করেছেন। দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ ব্যাটে-বলে এবং নেতৃত্বে দুর্দান্ত। তার সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ, আসরের শেষদিকে যুক্ত হওয়া ডানহাতি পেসার মুশফিক হাসান ও আরেক কার্যকর পেসার হাসান মাহমুদ বোলিং শক্তিতে ভারসাম্য তৈরি করেছেন।
লিগ পর্বে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে চিটাগং-খুলনা। সেই দুটি ম্যাচের প্রথমটি খুলনা ৩৭ রানে এবং দ্বিতীয়টি চিটাগং ৪৫ রানে জিতে নিয়েছে। এবার তৃতীয় সাক্ষাতে বিজয়ীরাই সত্যিকারের স্বস্তির হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়বে।
খুলনা যেমন টানা ৩ ম্যাচ জিতে আত্মবিশ^াসী এবং দুর্দান্ত হয়ে উঠেছে, তেমনি চিটাগংও লিগ পর্বে সর্বশেষ ৩ ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থেকে শেষ করে। এতেই তাদের শক্তির পরিচয় দিয়েছে। তবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে ভালো সময় যায়নি তাদের। এবার নিজেদের ফিরে পেতে সর্বোচ্চ শক্তিটাই প্রয়োগ করতে চাইবে তারা। বরিশালের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও এবার সেদিকে মনোযোগী হবে দলটি।
তবে ভালো কিছু করতে হলে ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন আর শেষদিকে শামীম হোসেন পাটোয়ারির ঝড়ো ব্যাটিং জরুরি। তারা ভালো ইনিংস খেলতে পারলে চিটাগং দৃঢ় অবস্থানে পৌঁছতে পারবে। সব আসরেই খেলেছে চট্টগ্রামের দল। মালিকানা পরিবর্তনশীল হলেও ২০১৩ সালের পর কখনোই ফাইনালে উঠতে পারেনি। সেবার রানার্সআপ হয়েছে। এছাড়া আরও ৫ বার প্লে-অফ খেলে বিদায় নিয়েছে চট্টগ্রামের দল। সবসময়ই তারা বিপিএলে ভালো কিছুই করেছে।
এবারও সেই ধারাবাহিকতায় ফাইনালে ওঠার দ্বারপ্রান্তে চিটাগং কিংস। খুলনাকে আজ হারাতে পারলেই সেই স্বপ্ন পূরণ হবে দলটির। তবে সেজন্য ব্যাটিংয়ে উন্নতির পাশাপাশি বোলারদেরও জ¦লে উঠতে হবে। বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার বিনুরা ফার্নান্দো, দেশের বাঁহাতি শরিফুল ইসলাম, খালেদ আহমেদ, আরাফাত সানি ও আলিস আল ইসলামদের ওপর নির্ভর করবে তারা। একটিইমাত্র ম্যাচ হওয়াতে আজ প্রচুর দর্শক আগ্রহ নিয়ে জমজমাট লড়াই দেখতে আসবেন মিরপুরে।