মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এলিমিনেটর ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ের পর ম্যাচসেরা নাসুম আহমেদকে ঘিরে উদ্যাপন খুলনার ক্রিকেটারদের
একটানা ৮ জয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে প্রথম দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিতের পর থেকেই ছন্দপতন ঘটে রংপুর রাইডার্সের। টানা চারটি হারের পর বাঁচা-মরার এলিমিনেটর ম্যাচের আগে শক্তি বাড়াতে টি২০ ফরম্যাটের মহাতারকা আন্দ্রে রাসেলসহ টিম ডেভিড ও জেমস ভিন্সকে দলে ভেড়ায়। কিন্তু দুবাই থেকে বিমানে সোমবার সকালে এসেই দুপুরে ম্যাচ খেলতে নেমে এই তিন তারকা ব্যাট হাতে সবমিলিয়ে মাত্র ১২ রান করেছেন।
রংপুরও ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে বিদায় নিয়েছে চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) থেকে। টানা ৫ ম্যাচ হেরেছে তারা। আর টানা তৃতীয় ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা খুলনা টাইগার্স এখন ফাইনালের লড়াইয়ে। এদিন দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এলিমিনেটর ম্যাচে আগে ব্যাট করে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে রংপুর ১৬.৫ ওভারে মাত্র ৮৫ রানেই গুটিয়ে যায়। খুলনাও এদিন চমক দেখিয়েছে জ্যাসন হোল্ডার, শিমরন হেটমায়ারের মতো তারকাদের খেলতে নামিয়ে। তারা মাত্র ১০.২ ওভারে ১ উইকেটে ৮৯ রান তুলে সহজ জয় পায়।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১৫ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে রংপুর। অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ অফস্পিন দিয়ে বোলিং আক্রমণ শুরু করেন। দ্বিতীয় ওভারেই আসেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। খুলনার এই স্ট্র্যাটেজিতেই ওলট-পালট হয়ে গেছে রংপুরের ব্যাটিং লাইন। ধ্বংসাত্মক স্পিনের ছোবল ঠেকাতে আগেভাগে শেখ মেহেদি হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে নামিয়েও ধস ঠেকানো যায়নি।
মাঝে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ২৫ বলে ২ চারে ২৩ এবং শেষদিকে আকিফ জাভেদ ১৮ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেললেও ১৯ বল বাকি থাকতেই রংপুরের ইনিংস থেমেছে ৮৫ রানে। ভিন্স ১, টিম ডেভিড ৭ ও রাসেল ৪ রান করতে পেরেছেন। ৩টি করে উইকেট নেন মিরাজ ৪ ওভারে ১০ ও নাসুম ৪ ওভারে ১৬ রান খরচা করে। হোল্ডার ১ ওভার বোলিং করার সুযোগ পেয়ে ১১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থেকেছেন।
রংপুরের একাদশে ৩ মহাতারকা এসেই খেলতে নেমেছেন। তাই তাদের নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা করা সম্ভব হয়নি খুলনার। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে দলের সফলতম বাঁহাতি স্পিনার নাসুম বলেছেন, ‘এই উইকেটে বিদেশীদের বিপক্ষে বোলিং করাটা বেশ উপভোগ করি। তাছাড়া শুরুতেই ওরা স্পিনে সমস্যায় পড়ার পর মিরাজ আবার বলেছে বোলিং করতে।’ টানা দুই ওভার করে এক ওভার বিরতি নিয়েছিলেন নাসুম এবং আবার ফিরে নিজের স্পেল শেষ করেছেন।
মামুলি এই সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই মিরাজের (০) উইকেট হারিয়েছে খুলনা। কিন্তু এরপর ৮৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন নাইম শেখ ও অ্যালেক্স রস। মাত্র ৪১ বল থেকে তারা এই জুটি গড়েন। ১০.২ ওভারেই ১ উইকেট হারিয়ে ৮৯ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় খুলনা। নাইম ৩৩ বলে ৩ চার, ৪ ছক্কায় ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন। তিনি ৪৯২ রান করে এখন চলতি আসরে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক এ বাঁহাতি ওপেনার।
রস ২৭ বলে ৪ চারে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ৫৮ বল হাতে রেখে জিতে ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ বাঁচিয়ে রাখল খুলনা। তারা দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলবে। প্রাথমিক রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ার শঙ্কায় ছিল খুলনা। একটি ম্যাচ হারলেই বাদ পড়বে বিপিএল থেকে, এমন পরিস্থিতির পর টানা ৩ ম্যাচ জিতেছে তারা। ফাইনালে ওঠার জন্য পরের ম্যাচটিও জিততে হবে। সেদিক থেকে একটানা ৪টি নকআউট ম্যাচ খেলা হবে খুলনার।
এ বিষয়ে নাসুম বলেছেন,‘আমরা প্লে-অফে ওঠার আগেই দুটি নকআউট ম্যাচ খেলেছি। আজকেও (সোমবার) খেললাম। এটা নিয়ে আমরা আত্মবিশ^াসী আছি। যেভাবে খেলেছি তা চালিয়ে যেতে পারলে আশা করি সামনের ম্যাচটাও জিততে পারব।’ অন্যদিকে সবার আগে টানা ৮ ম্যাচ জিতে প্লে-অফ নিশ্চিত করা রংপুর একটানা ৫ ম্যাচ হেরে বাদ পড়ল এবারের আসর থেকে। দুর্দান্ত একটি দলের এভাবে ছন্দপতন সত্যিই অবাক করার মতো।
এ নিয়ে দলটির ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুল বলেছেন,‘আসলে খুশদিল শাহ যাওয়ার পর তার জায়গাটা আমাদের কোনো প্লেয়ার নিতে পারেনি। ব্যাটিংয়ের দিক থেকে আমরা হতাশাজনক পারফর্ম্যান্স করেছি। একটা ছন্দ হারিয়ে গেলে সেখানে ফিরে আসাটা কঠিন। এ জন্য হয়তো আজকেও খারাপ হয়েছে।
তবে আমাদের বোলিং শক্তি যেমন, যদি ১৪০ রানের মতোও করতে পারতাম তাহলে হয়তো অন্যকিছু হতে পারতো।’ খুলনা এখন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে বুধবার। সেই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ হবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে পরাজিত দল।