ফাইল ছবিতে নারী ফুটবলারদের সঙ্গে অনুশীলনে ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার
যুগে যুগে বিভিন্ন দেশের জাতীয় দল ও ক্লাব পর্যায়ে দেখা গেছে ফুটবলে কোচই সর্বেসর্বা। তার কথাই আইন। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর নড়চড় হয় না। ইতালির মারিও বালোতেল্লি ছিলেন অসাধারণ ফুটবল প্রতিভা। তিনি কিন্তু বিকশিত হতে পারেননি। এজন্য দায়ী তার উচ্ছৃঙ্খলতা। কোনো কোচই তাকে নিয়ে স্বস্তিতে ছিলেন না। ফলে তারা বালোতেল্লিকে সেভাবে খেলার সুযোগ দেননি।
১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা দলের অধিনায়ক ছিলেন ড্যানিয়েলো প্যাসারেলা। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন আর্জেন্টিনার কোচ। তার দলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার ছিলেন সেই রেদোনদো। কিন্তু তিনি সেবার ১৯৯৮ বিশ্বকাপ খেলা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন প্যাসারেলার নিদের্শ অনুযায়ী শুধুমাত্র চুল কাটতে রাজি না হওয়ার কারণে।
২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ফরোয়ার্ড রোমারিওকে দলে নেননি কোচ লুই ফিলিপ স্কোলারিও। এ নিয়ে দেশের ফুটবলপ্রেমীরা প্রচ- বিক্ষোভ করে। কিন্তু স্কোলারিও নিজের সিদ্ধান্তে ছিলেন অটল। এমনকি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টেরও অনুরোধ রাখেননি!
ফুটবলে দলীয় সাফল্য পেতে হলে যেসব গুণাবলি দরকার, তার দু’টি হচ্ছে শৃঙ্খলা এবং কোচের প্রতি আনুগত্য। এর অন্যথা হলে সবকিছুতে ঝামেলা হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের কোচ করা হয় ব্রাজিলের ডিডোকে, যার প্রকৃত নাম ছিল এডসন সিলভা। তখন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি ছিল বাংলাদেশ দল। দলের ক্যাম্প করা হয় সাভারের বিকেএসপিতে।
দলের গুটিকয়েক ফুটবলারকে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য তাদের শাস্তি দেন ডিডো। এরপর দলের সব ফুটবলার একজোট হয়ে ক্যাম্প বর্জন করেন। দাবি জানান, কোচকে বরখাস্ত করতে হবে। বাফুফে বাধ্য হয়ে ডিডোকে সরিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই ঘটনার পরিণাম শুভ হয়নি।
বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলে ঠিক এরকমই কিছু একটা হচ্ছে বা হতে চলেছে। দলের ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলারের অধীনে খেলতে বা প্রশিক্ষণ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে রীতিমতো বিদ্রোহ করেছেন দলের সিনিয়র ১৮ ফুটবলার। এছাড়া আরও কিছু দাবি-দাওয়াও আছে নারী ফুটবলারদের। বাফুফে এখন পর্যন্ত বাটলারের পক্ষেই আছে। অর্থাৎ বাটলারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে ইচ্ছুক নয়।
এদিকে সাবিনাদের লেখা তিন পৃষ্ঠার বাংলা বিবৃতিটি একটা ইংরেজি চিঠি থেকে অনুবাদ করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। কানাঘুষা চলছেÑসেই চিঠি লিখে দিয়েছেন ফেডারেশনের সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি! তার সঙ্গে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে গুজব আছে।
শনিবার অনুশীলন করেননি সিনিয়র ফুটবলাররা। তবে কোচ তাদের ওপর যে নির্ভরশীল নন, সেটা তা পরিষ্কার। কেননা তাদের ছাড়াই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সকালে ১৩ জুনিয়র ফুটবলার নিয়ে অনুশীলন করিয়েছেন। দুপুরে তার অধীনে এই ১৩ জনই জিম সেশন করেন। এরা হলেন : রিপা, আফঈদা, আইরিন, কোহাতি, প্রান্তি, স্বপ্না, ইয়ারজান, অর্পিতা, হালিমা, আকলিমা, মুনকি, সুরমা ও প্রীতি।
দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে এদিনই ছিল বাটলারের প্রথম অনুশীলন। ২০২১ সালের জুলাইয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার পর এই ভেন্যুতে এটাই জাতীয় দলের প্রথম অনুশীলন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছ থেকে বাফুফে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভেন্যু বুঝে পায়নি। ফলে স্টেডিয়ামটি এখন সাময়িকভাবে নারী দলের অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করছে।
অনুশীলন প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বাটলার বলেন, ‘সিনিয়র ফুটবলারদের বিষয়ে ধারণা নেই। কোন আগ্রহও নেই। পেশাদার দৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছি যারা অনুশীলনে আসছে। কাজ চলমান থাকবে।’ এটাও ঠিক, মাত্র ১৩ ফুটবলার নিয়ে পরিপূর্ণ অনুশীলন হয় না। এ নিয়ে বাটলারের ভাষ্য, ‘শিগগিরই অনূর্ধ্ব-২০ দলের খেলোয়াড়েরা যোগ দিচ্ছে। আমি আশাবাদী সামনে তার দেশকে সার্ভিস দেবে।’
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণও, ‘আজও নারী ফুটবলারদের অনুরোধ করেছি ফুটবল ও দেশের স্বার্থে ফিরে আসার জন্য।’
এদিকে, কোচ-খেলোয়াড়দের মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব নিয়ে বাফুফে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান ইমরুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মেয়েদের অবশ্যই বাংলাদেশের ফুটবলে একটা ভালো অবদান রয়েছে। কিন্তু ভালো অবদান থাকার পরেও কারও কাছে বাংলাদেশের ফুটবল জিম্মি হয়ে থাকবে সেটাও কিন্তু ঠিক না। সে কোচ, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা যিনিই হোন না কেন। আমরা আশা করছি, একটা সুন্দর সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’ তদন্ত কমিটির আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।