ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও পুলিশ এফসি’র মধ্যকার ম্যাচের উত্তেজনাকর একটি মুহূর্ত
ঘরোয়া ফুটবলের অন্যতম আসর ফেডারেশন কাপের খেলা জমে উঠেছে ধীরে ধীরে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে দু’টি ম্যাচ। এদিন দু’টি ম্যাচের ওপর নির্ভর করেছিল চারটি দলের ভাগ্য। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে দু’টি দলের। আর এই ভাগ্যের পরশ পাওয়া দল দু’টি হলো বসুন্ধরা কিংস এবং ব্রাদার্স ইউনিয়ন। প্রতিটিই ছিল এ-গ্রুপের ম্যাচ এবং শুরু হয় একই সময়ে।
ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভুইয়া স্টেডিয়ামে বসুন্ধরা ৫-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবকে। কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে অপর ম্যাচে ব্রাদার্স গোলশূন্য ড্র করে বাংলাদেশ পুলিশ ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে। সহজ জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে টুর্নামেন্টের নকআউট স্টেজে (কোয়ালিফায়ার) নাম লেখালো গত আসরের শিরোপাধারী ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা। ৪ ম্যাচে এটা তাদের তৃতীয় জয়। ৯ পয়েন্ট তাদের।
পক্ষান্তরে ব্রাদার্সকে পরের পর্বে যেতে হয়েছে বেশ চাপ ও শঙ্কা নিয়েই। কেননা হেরে গেলেই বাদ পড়তো গোপীবাগের দলটি। ৪ ম্যাচে এটা ‘দ্য অরেঞ্জ ব্রিগেড’দের দ্বিতীয় জয়। আগের ১ ড্রতে ৭ পয়েন্ট তাদের। তাদের সমান পয়েন্ট ফর্টিস ফুটবল ক্লাবেরও। কিন্তু ফর্টিসের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে জয় থাকায় (১-০ গোলে) টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুসারে ব্রাদার্সই গ্রুপ রানার্সআপ এবং কোয়ালিফায়ারে যাওয়া দ্বিতীয় দল। ফলে সমান পয়েন্ট নিয়েও কপাল পুড়ল ফর্টিসের।
ময়মনসিংহে ম্যাচে অনুমেয়ই ছিল কারা জিতবে, আর কারা হারবে। শুধু জানার ছিল হারের ব্যবধানটা আসলে কত হবে। যাহোক, শুরুতেই গোল হজম করে পিছিয়ে পরে ওয়ান্ডারার্স। যদিও তারা ১৭ মিনিট পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল কিংসকে। ১৭ মিনিটে বক্সের ভেতরে মজিবুর রহমান জনির সঙ্গে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াইয়ে হেরে যান ওয়ান্ডারার্সের ডিফেন্ডার। জনি দ্রুত ছোট পাস বাড়িয়ে দেন মিগেল ফিগেইরো দামাসেনাকে, চমৎকার কৌনিক শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি (১-০)।
৪০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে তিনবারের ফেড কাপ উইনার কিংস। বক্সের ঠিক ওপর থেকে বাঁ পায়ের নিচু তীব্র শট নেন সোহেল রানা। ঝাঁপিয়ে পড়া ওয়ান্ডারার্স গোলরক্ষক সাইফুল ইসলামের গ্লাভস এড়িয়ে পোস্ট ঘেঁষে বল আশ্রয় নেয় জালে (২-০)।
৫৫ মিনিটে ওয়ান্ডারার্সের নাজমুল ইসলাম রাসেলের আত্মঘাতী গোলে স্কোরলাইন হয় ৩-০। ৭০ মিনিটে সোহেল রানা ও ৭৭ মিনিটে অধিনায়ক তপু বর্মণ আরও দুই গোল করে ওয়ান্ডারার্সের হারের কফিনে শেষ পেরেন ঠুকে দেন! এই ম্যাচে চোট কাটিয়ে অনেক দিন পর বদলি খেলেন শেখ মোরসালিন। ম্যাচসেরা হন তপু বর্মণ।
কুমিল্লার ম্যাচটি ছিল সার্ভিসেস সংস্থা পুলিশের জন্য ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল ফর্টিসও। কেননা গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ব্রাদার্সের বিপক্ষে পুলিশ জিতলেই সুযোগ থাকত তিন ম্যাচ পরেও ‘এ’ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা ফর্টিসের। কিন্তু ব্রাদার্স সেই সুযোগ দেয়নি তাদের।
পুলিশের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে তারা পৌঁছে যায় প্লে-অফ রাউন্ডে। অবশ্য ১-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত তারা। কিন্তু পেনাল্টি শট নিয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন এলিটা কিংসলে। তার নেওয়া স্পটকিক ঠেকিয়ে দেন পুলিশের গোলরক্ষক রাকিবুল হাসান তুষার।
ব্রাদার্সের এই ড্রতে ফর্টিসের হতাশা ছিল অসীম। কেননা গ্রুপ পর্বে তারা কিংসকে ২-০ গোলে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল সবাইকে। অথচ সেই কিংস ঠিকই গ্রুপসেরা হয়ে পরবর্তী পর্বে চলে গেল, আর ফর্টিস সেটা দেখলো বিরস বদনে চেয়ে চেয়ে!
উল্লেখ্য, এবারের ফেডারেশন কাপে প্রথাগত সেমিফাইনাল নেই। দুই গ্রুপে পাঁচটি করে দল রয়েছে। দুই গ্রুপের শীর্ষ দুই দল উঠবে কোয়ালিফায়ার রোড টু ফাইনালে। দুই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ ৪ দল পরস্পরের মুখোমুখি হবে। দুই চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে জয়ী দল ফাইনালে উঠবে সরাসরি। পরাজিত দল আরেকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে।
দুই রানার্স-আপের মধ্যকার বিজয়ী দল দুই চ্যাম্পিয়নের মধ্যকার পরাজিত দলের সঙ্গে খেলবে। সেই ম্যাচের জয়ী দল দ্বিতীয় ফাইনালিস্ট হিসেবে উঠবে। গ্রুপপর্ব শেষে আগামী ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হবে কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড।