ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

মেলবোর্নে নতুন রানী পুরানো রাজা

আয়ান আব্রাজ

প্রকাশিত: ০০:১১, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

মেলবোর্নে নতুন রানী পুরানো রাজা

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের নারী ও পুরুষ এককের চ্যাম্পিয়ন ম্যাডিসন কিস ও ইয়ানিক সিনার (ডানে)

অবশেষে প্রবল আরাধ্য শিরোপায় চুমু আঁকলেন ম্যাডিসন কিস। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মাধ্যমে জিতলেন জীবনের প্রথম কোনো গ্র্যান্ডস্লাম। দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ার ম্যাডিসন কিসের। এই সময়ে ফর্মহীনতার পাশাপাশি আমেরিকান তারকার সামনে বড় বাধা ছিল ইনজুরিও। তারপরও কখনো হাল ছাড়েননি কিস। সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে ছুটেছেন বহুল কাক্সিক্ষত স্বপ্ন ছোঁয়ার নেশায়।

অবশেষে তারই পুরস্কার পেলেন ম্যাডিসন কিস। ২৫ জানুয়ারি মৌসুমের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এরিনা সাবালেঙ্কাকে হারিয়ে মেলবোর্নের নতুন রানীর মুকুট পরলেন ২৯ বছর বয়সী এই আমেরিকান তারকা।
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে ম্যাডিসন কিস ৬-৩, ২-৬ এবং ৭-৫ গেমে পরাজিত করেন এরিনা সাবালেঙ্কাকে। আর তাতেই দীর্ঘ দেড় দশকের চেষ্টায় প্রথম মেজর শিরোপা জয়ের নজীর গড়লেন তিনি। তবে সাবালেঙ্কাকে হারানোটা মোটেও সহজ ছিল না তার। ২ ঘণ্টা ২ মিনিটের লড়াইয়ের পরই মেলবোর্নের হাসি হাসেন কিস। এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ১৯তম বাছাই হিসেবে মিশন শুরু করেছিলেন আমেরিকান তারকা। শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলেন তিনি।

রোমানিয়ার এলিনা-গ্যাব্রিয়েলা রিউসকে হারিয়ে মেলবোর্নের মিশন শুরু করেছিলেন কিস। এরপর স্বদেশী ড্যানিয়েল কোলিন্স, উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন এলিনা রিবাকিনা, ইউক্রেনের এলিনা সিতলিনাকে বিদায় করে শেষ চারে জায়গা করে নেন ফ্লোরিডায় বসবাসকারী এই তারকা। সেমিফাইনালে তো দ্বিতীয় বাছাই ইগা সুইয়াটেককেও বিদায় করে দেন কিস।
তবে আমেরিকান তারকার সামনে বড় বাধা ছিল এরিনা সাবালেঙ্কা। কেননা, গত দুই বছর ধরেই যে মেলবোর্নে শিরোপা জিতে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে এসেছেন বেলারুশ সুন্দরী। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে সেই সাবালেঙ্কার বিপক্ষেই কিস প্রথম সেট জিতে নেন ৬-৩ গেমে। তবে প্রথম সেট হেরেও হাল ছাড়েননি টানা তৃতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের মিশনে থাকা সাবালেঙ্কা।

বরং দ্বিতীয় সেট জিতে দুর্দান্তভাবেই ঘুরে দাঁড়ান বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। কিসকে ৬-২ গেমে গুঁড়িয়ে দিয়ে হ্যাটট্রিকের স্বপ্নে রং চড়ান তিনি। ফলে ম্যাচ গড়ায় রোমাঞ্চকর তৃতীয় সেটে। আর সেই সেটে ৭-৫ গেমে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর শেষের হাসিটা হাসলেন কিসই। বেলারুশ সুন্দরীর বিপক্ষে শেষ পয়েন্টটা জিতেই মুখ ঢেকে ফেলা কিস একটু পর ছুটে যান তার স্বামী বিওর্ন ফ্রাতাঞ্জেলোর কাছে। ২০২৩ সাল থেকে যে কিসের কোচেরও ভূমিকা পালন করছেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের আগে কিসের সেরা সাফল্য ছিল ইউএস ওপেনের ফাইনাল। ২০১৭ সালে মৌসুমের শেষ মেজর এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছিলেন তিনি। কিন্তু সেবার ঘরের মাঠে স্বদেশী তারকা স্লোয়ানে স্টিফেন্সের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে কোর্ট ছেড়েছিলেন। সেই কিস এবার সেমিফাইনালে দ্বিতীয় বাছাই আর ফাইনালে শীর্ষ বাছাইকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

সেইসঙ্গে ২০০৫ সালের পর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে শীর্ষ দুই বাছাইকে হারানোর কীর্তিও গড়েন তিনি। ম্যাডিসন কিসের এই অর্জন তাই জায়গা পেল রেকর্ডবুকেও। স্বপ্নের শিরোপা জয়ের পর রোমাঞ্চিত কিস। আমেরিকান তারকা বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরেই এটা চেয়েছিলাম আমি। যদিওবা আমি কখনোই জানতাম না যে আবারও এই অবস্থানে আসতে পারব।’ 
২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মাধ্যমেই ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন এরিনা সাবালেঙ্কা। গত বছরটা তো আরও দুর্দান্ত কাটে তার। মেলবোর্নের শিরোপা ধরে রাখার পাশাপাশি বছর শেষ করেন ইউএস ওপেনের ট্রফি উঁচিয়ে ধরে। যে কারণে এবার জিতলেই নতুন মাইলফলক স্পর্শের হাতছানি ছিল তার। দীর্ঘ ২৬ বছরের মধ্যে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে টানা হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল সাবালেঙ্কার।

কিন্তু কিসের কাছে হেরে মার্টিনা হিঙ্গিসের সেই কীর্তি ছোঁয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল বর্তমান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তারকার। তবে প্রতিপক্ষকে কৃতিত্ব দিয়েছেন সাবালেঙ্কা, ‘অবিশ্বাস্য খেলেছে ম্যাডিসন। তার বিপক্ষে আসলে আমি কিছুই করতে পারিনি।’
অন্যদিকে মেয়েদের এককে নতুন রানী পেলেও রাজা বদলায়নি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। গত মৌসুমের মতো এবারও সেই ইয়ানিক সিনারের হাতেই যে উঠল বছরের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টের ট্রফি। ২৬ জানুয়ারি ফাইনালে আলেক্সান্ডার জেরেভকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির গড়লেন এই ইতালিয়ান।

ফাইনালের মঞ্চে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর তারকা ইয়ানিক সিনার ৬-৩, ৭-৬ (৭/৪) এবং ৬-৩ গেমে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন আলেক্সান্ডার জেরেভকে। সেইসঙ্গে মেলবোর্নে ব্যাক টু ব্যাক শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন শীর্ষ বাছাই। শুধু তাই নয়, গ্র্যান্ডস্লামে প্রথম তিন ফাইনাল খেলে তিনটিতেই শিরোপা জয়ের দেখা পেলেন তিনি। ২৩ বছর বয়সী এই ইতালিয়ানের কীর্তি অবশ্য এখানেই শেষ নয়।

হার্ড কোর্টের গ্র্যান্ডস্লামে এটি তাঁর টানা তৃতীয় শিরোপা। টেনিসের উন্মুক্ত যুগে অষ্টম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডস্লামে ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বা এর চেয়ে বেশি ফাইনাল খেলে সব কটিতেই জিতলেন তিনি। রাফায়েল নাদালের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে নিজের জেতা প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা ধরে রাখার কীর্তিও গড়লেন তিনি। ইতালির প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিন গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের অবিস্মরণীয় নজির গড়া সিনার তাই দারুণ রোমাঞ্চিত। তার ভাষ্যমতে, ‘এটা আমার জন্য অবিশ্বাস্য এক টুর্নামেন্ট। আশা করি এখানে পারফর্মেন্সের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারব।’

×