ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

খুলনা-সিলেট ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্ব

উড়ন্ত রংপুরের জয়রথ থামাল দুর্বার রাজশাহী

মোঃ মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

উড়ন্ত রংপুরের জয়রথ থামাল দুর্বার রাজশাহী

৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা রাজশাহীর রায়ান বার্ল

লাগামহীন ঘোড়ার মতো ছুটছিল রংপুর রাইডার্স। চলমান ১১তম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) টানা ৮ ম্যাচ জিতে সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করে দলটি। সেই উড়ন্ত রংপুরকে থামিয়ে দিয়েছে প্লে-অফ রেসে টিকে থাকার লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা দুর্বার রাজশাহী। নামে দুর্বার হলেও আগের ৯ ম্যাচে মাত্র ৩ জয় পাওয়া রাজশাহী সর্বশেষ ২ ম্যাচও হেরেছে।

তবে চিটাগং কিংস, ঢাকা ক্যাপিটালস, খুলনা টাইগার্স ও ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে দুইবার মুখোমুখি হওয়া রাজশাহী বৃহস্পতিবারই প্রথম অপরাজেয় রংপুরের মুখোমুখি হয়। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হওয়া সেই ম্যাচে ২৪ রানে জিতেছে রাজশাহী। আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭০ রান তোলে তারা। জবাবে রংপুর রাইডার্স ১৯.২ ওভারে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায়।

রংপুর দুইবার করে জিতেছে ঢাকা, সিলেট স্ট্রাইকার্স ও বরিশালের বিপক্ষে এবং চিটাগং, খুলনাকে হারিয়েছে। নবম ম্যাচে এসে প্রথম সাক্ষাতেই হারল রাজশাহীর কাছে। ১০ ম্যাচে মাত্র চতুর্থ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ভালোভাবেই প্লে-অফ রেসে টিকে থাকল দুর্বার রাজশাহী।
অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল রংপুর। কেউ থামাতে পারেনি তাদের। বিপিএল শুরুর কিছুদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথমবার অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সুপার লিগ টি২০ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েই আত্মবিশ^াসী হয়ে ওঠে দলটি। সে কারণেই যেন এবার বিপিএলে মাঠে নামলেই প্রতিপক্ষরা নতি স্বীকার করছিল তাদের সামনে। এমনকি গত আসরের চ্যাম্পিয়ন এবং কাগজে-কলমে সবচেয়ে শক্তিধর দল ফরচুন বরিশালও দুইবার তাদের মুখোমুখি হয়ে হেরেছে।

সে কারণে চলতি আসরে বিপর্যস্ত রাজশাহীর বিপক্ষে আত্মবিশ^াস নিয়েই নামে রংপুর, টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ে নামে তারা। রাকিবুল হাসানের বাঁহাতি স্পিনে সাজঘরে ফিরে যান মোহাম্মদ হারিস ১২ বলে ৪ চারে ১৯ রান করে। এরপরও পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৬২ রান তুলে উড়ন্ত সূচনা পায় রংপুর। দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির হোসেন ও এনামুল হক বিজয় ৫২ রানের জুটি গড়েন মাত্র ২৯ বলে। ১৯ বলে ৪ চার, ৩ ছক্কায় ঝড়ো ৩৯ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন সাব্বির হোসেন।

খুশদিল শাহ তার বাঁহাতি স্পিনে পরের বলেই সাজঘরে ফেরান রায়ান বার্লকেও (০)। তবে ধীরস্থির বিজয়ের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঝড় তোলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। চতুর্থ উইকেটে ৫০ বলে ৭৬ রানের জুটি গড়ে ওঠে। এতেই দারুন এক সংগ্রহ পেয়ে যায় রাজশাহী। ইয়াসির ৩২ বলে ২ চার, ৬ ছক্কায় ৬০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। আর বিজয় ৩১ বলে ২ চারে করেন ৩৪ রান। 
পরবর্তী ১৮ রানের মধ্যে ৬ উইকেট না হারালে রাজশাহীর সংগ্রহ আরও বড় হতে পারত। তবু ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ১৭০ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পেয়ে যায় তারা। ৩টি করে উইকেট নেন খুশদিল ও আকিফ জাভেদ। জবাব দিতে নেমে রংপুর শুরুতেই পড়ে যায় সমস্যায়। চতুর্থ ওভারেই ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে তারা। এরপর চতুর্থ উইকেটে ৪০ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সাইফ হাসান ও খুশদিল।

তবে ১৩ বলে ১ ছক্কায় ১৪ রানে খুশদিল আউট হয়ে গেলে আবারও বিপাকে পড়ে রংপুর। দশম ওভারে সাইফও ২৯ বলে ৫ চার, ২ ছক্কায় ৪৩ রানে শফিউল ইসলামের পেসে আউট হন। এরপর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান কিছুটা লড়াই করেছেন। আর শেষদিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১৪ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ২৩ রানের ঝড়ও তেমন কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত ৪ বল আগেই রংপুরের ইনিংস থেমেছে ১৪৬ রানে। সোহান ২৬ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৪১ রান করেন।

রংপুর চলতি আসরে এই প্রথমবার অলআউট হয়েছে। এর পেছনে জিম্বাবুয়ের স্পিন অলরাউন্ডার রায়ান বার্ল বড় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি লেগস্পিনের জাদুতে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন। তাসকিন আহমেদ ও এসএম মেহেরব দুটি করে উইকেট নেন। এদিনই শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম পর্ব। প্রথম হার দেখলেও রংপুর ৯ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে, ৮ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বরিশাল দ্বিতীয় এবং চিটাগং কিংস ৯ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে।

১০ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে শীর্ষে রাজশাহীর অধিনায়ক ও ডানহাতি পেসার তাসকিন। আর ঢাকা ক্যাপিটালসের তরুন বাঁহাতি ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ১০ ইনিংসে সর্বাধিক ৪২০ রান করে সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে।

×