বাটলার
নারী ফুটবল দল দ্বিতীয়বারের মতো বসেছে দক্ষিণ এশিয়ার সেরার আসনে। গত বছর অক্টোবরে নেপালের মাটিতে স্বাগতিকদের ফাইনালে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। এই সাফল্যের কৃতিত্ব মেয়েরা কোনো অবস্থাতেই ব্রিটিশ কোচ পিটার জেমস বাটলারকে দিতে রাজি নন।
পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দলের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে মানসিক চাপে রেখেছিলেন বাটলার। সেই চাপ উড়িয়ে দিয়ে ঠিকই সিনিয়ররা আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন, ছিনিয়ে এনেছেন সাফ শিরোপা। তাই তাদের দাবি ছিল বাটলারকে দায়িত্ব থেকে সরানোর। তবে ফুটবলারদের চাওয়া-পাওয়াকে বরাবরের মতো এবারও উপেক্ষা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
বাটলারকে আরও দুই বছরের জন্য নারী দলের কোচ করার ঘোষণা দিয়েছে তারা। নতুন চুক্তি অনুযায়ী এই কোচ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী ফুটবল দলের দায়িত্বে থাকবেন। বাটলারের চুক্তি দুই বছর বাড়লেও পুরুষ জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার মেয়াদ বেড়েছে ১৫ মাস। চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জামালদের নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন স্প্যানিশ কাবরেরা।
সাফ চলাকালে মেয়েদের সঙ্গে ব্রিটিশ কোচ বাটলারের সংঘাতের বিষয়টা বাজেভাবে সামনে চলে আসে। দল ও একাদশ নির্বাচন নিয়ে দুপক্ষের অবস্থান ছিল দুই মেরুতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপের প্রথম ম্যাচে বেশ কজন সিনিয়রকে বসিয়ে বাটলার একাদশ সাজিয়ে ছিলেন।
পরীক্ষিত ডিফেন্ডার মাসুরা পারভীন, মিডফিল্ডার মারিয়া মান্ডা, উইঙ্গার সানজিদা আক্তার, ফরোয়ার্ড কৃষ্ণারানী সরকারের জায়গা হয়নি শুরুর একাদশে। সেই ম্যাচটা দুর্বল পাকিস্তানের কাছে হেরেই যেতে বসেছিল বাংলাদেশ। শেষ দিকে শামসুন্নাহার জুনিয়রের গোলে কোনো মতে হার এড়িয়েছিল বাংলাদেশ।
সেই ম্যাচ শেষে নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা মিডিয়ার সামনে কোচের একাদশ নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এর মধ্য দিয়েই সিনিয়রদের সঙ্গে কোচের দ্বন্দ্বটা প্রকাশ্যে আসে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়ের ভয় যখন পেয়ে বসেছিল দলকে, তখনই সিনিয়ররা জোট বেঁধে কোচের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। একটা সময় সিনিয়র খেলোয়াড়দের দাবি মেনে ভারতের বিপক্ষে একাদশ সাজান বাটলার।
তবে ভীষণ নাখোশ হয়ে খেলোয়াড়দের নানা বিষয় নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন মিডিয়ার সামনে। সিনিয়ররা অবশ্য নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিয়ে ঠিকই ভারতকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে ফাইনালে যান। পরে ভুটানকে সেমিফাইনালে ও নেপালকে ফাইনালে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয় বাংলাদেশ।
শিরোপা জিতে ফিরেই কোচের ওপর অনাস্থা জানিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন সিনিয়র ফুটবলার। সরাসরি না বললেও মেয়েদের দাবি ছিল ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ বাটলারকে সরানোর। তবে বাফুফে নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার মেয়েদের দাবিকে বরাবরের মতো উপেক্ষা করেছেন। মেয়েদের সঙ্গে কোচের কীর্তিকলাপ নিয়ে কথা বলারও প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। বরং শুরু থেকেই বাটলারকে চুক্তি বাড়িয়ে রেখে দেওয়ার কথা বলে এসেছেন।
বাটলারকে রেখে দেওয়ার কথা মাহফুজা আক্তার একাধিকবার বললেও বৃহস্পতিবার বাফুফের মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বাবু দিয়েছেন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, ‘তাবিথ আউয়াল নেতৃত্বাধীন বাফুফের নির্বাহী কমিটি নারী দলের কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছে। কোচ এখন ইংল্যান্ডে আছেন। ১ ফেব্রুয়ারি দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। এর আগ পর্যন্ত সহকারী কোচদের অধীনে ক্যাম্পে থাকা জাতীয় দলের ফুটবলাররা ফিটনেস ট্রেনিং করবে। এ ছাড়া পুরুষ জাতীয় দলের কোচ পিটার বাটলারের চুক্তিও বাড়ানো হয়েছে। তবে সেটা ৩০ এপ্রিল ২০২৬ সাল পর্যন্ত।’
বাটলারকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানতে পেরে স্তম্ভিত সিনিয়র ফুটবলাররা। তবে এখনই তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে চাচ্ছেন না। কোচের বিষয়টির মতো আরও অনেক কিছু নিয়েই হতাশা বিরাজ করছে মেয়েদের মধ্যে। গত বছর অক্টোবরে তাদের সঙ্গে বাফুফের কেন্দ্রীয় চুক্তি শেষ হয়েছে। এখনো সেই চুক্তি নবায়ন হয়নি। ফলে শেষ দুই মাস মেলেনি বেতন। সাফ জয়ের পর বাফুফে ঘোষিত দেড় কোটি টাকার বোনাসও মেলেনি।
তাছাড়া গত আট ম্যাচ ধরে তাদের ভাগ্যে জোটেনি ম্যাচ ফি। উপরন্তু আশপাশের দেশগুলো নিয়মিত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেও সাফের পর বাংলাদেশ এখনো কোনো ম্যাচ খেলেনি। কবে খেলার সুযোগ মিলবে সেটা নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা। এত নেই-এর মাঝে বাটলারের থেকে যাওয়ার খবরটা অনেকের জন্য মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ল। বাটলারের দ্বিতীয় অধ্যায়টা কেমন যাবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।
শহীদ