.
দুপুরে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা করে সন্ধ্যা নামতেই কি নির্বাচকদের আফসোস হচ্ছিল! বাদ পড়া লিটন দাস কি ব্যাটিংটাই না করলেন। বিপিএল তো বটেই, টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসটাই নাড়িয়ে দিলেন এলকেডি। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে ১০ চার ও ৯ ছক্কায় মাত্র ৫৫ বলে খেললেন অপরাজিত ১২৫ রানের টর্নেডো ইনিংস। সঙ্গী হিসেবে পেলেন এমন একজনকে যিনি তারই পরিবর্তে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে লাল-সবুজের জার্সিতে ওপেন করবেন। ৬ চার ও ৮ ছক্কায় ৬৪ বলে তরুণ তানজিদ হাসান তামিম উপহার দিলেন ১০৮ রানের ঝলমলে ইনিংস। চারদিকে রব উঠল, কী জবাবটাই না দিলেন লিটন! স্বল্পভাসি স্টাইলিশ এ ব্যাটার বললেন, ‘প্রমাণের কিছু নেই!’ পাশাপাশি শুভকামনা জানালেন তানজিদকে, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সুযোগ পাওয়ায় তামিমকে (তানজিদ) অভিনন্দন। চাইব যেন এই পারফরম্যান্সটা ওখানেও দেখাতে পারে।’
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে একসঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেছেন দুজন। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে থাকছেন কেবল একজন। ‘শুধু তামিমই নয়, যেহেতু আমি বাংলাদেশ টিমে খেলি, আমার টিমমেটরা আছে। চাইব বাংলাদেশ যেন ভালো ফল করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।’ বলছিলেন লিটন। দল থেকে বাদ পড়ার দিনে লিটনই অবশ্য বেশি কেড়ে নিয়েছেন। তার ইনিংস তুলনামূলকভাবে বেশি বড় ও বিধ্বংসীও ছিল। তবে নিজের সেঞ্চুরির কৃতিত্বের ভাগও তানজিদকে দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী ডানহাতি এ ব্যাটার, ‘যখনই কেউ সেঞ্চুরি করে, বড় ইনিংস খেলে, তার সঙ্গে জুটিতে সঙ্গীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ওভার দেখবেন আমি আক্রমণ করেছি, কিছু ওভার দেখবেন ও রিঅ্যাক্ট করেছে। যে কারণে মাঝের ওভারে বাড়তি চাপ আসেনি। সহজেই কয়েকটা ওভার সিঙ্গেল খেলতে পেরেছি। আমার মনে হয় দুজনই আমরা ভালো ব্যাটিং করেছি, দুইজনই দাপুটে ইনিংস খেলেছি।’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ পড়ার খবর পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে এদিন খেলতে নেমেছিলেন। ‘ভাবনা একই আছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বিষয়টা যদি বলেন, এটা আমার হাতে নাই। ওটা নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ। কাকে খেলাবে, কাকে খেলাবে না, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। আমার কাজ হচ্ছে এখানে পারফর্ম করা, যেটা করতে পারছিলাম না এতদিন। ওটার জন্য আপসেট ছিলাম... কীভাবে ডেলিভারি করা যায় পারফরম্যান্স। আগে যে মাইন্ডসেট ছিল, পরেও একই আছে। আমি সবসময় একটা কথা বলি, আজকের দিনটা ইতোমধ্যেই অতীত।’
লিটন বলেন, ‘আমি হয়তো ক্যারিয়ারে একটা ভালো ইনিংস খেলেছি। কিন্তু পরের ম্যাচে আবার আমাকে জিরো থেকেই শুরু করতে হবে। মাথায় এটাই থাকবে যে, আবার নতুন করে আমার ইনিংস গুছাতে হবে। পরিশ্রম করব, দেখা যাক কী হয়।’ সর্বশেষ ফিফটি ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ১৫ মাস আর ১৩ ইনিংস। ওয়ানডেতে পঞ্চাশের স্বাদ আর পাননি লিটন দাস। সর্বশেষ সাত ইনিংসে তো ৬ রানের বেশি করতে পারেননি। ফর্মহীনতার চড়ামূল্য দিতে হয়েছে। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুও সেটিই উল্লেখ করেছিলেন। লিটন বলেন, ‘পরিষ্কার মেসেজ দেওয়া হয়েছে (বাদ পড়ার কারণ জানিয়ে)। আসলে নির্বাচকদের তরফ থেকে না...। কী কারণে (দলে) রাখা হয়নি... এটা মিডিয়া ঘাটলেই পাওয়া যায় যে, কী কারণে রাখা হয়নি। আপনি যদি দেখেন যে, কী কারণে আমি বাদ পড়েছি, আমার পারফরম্যান্স ছিল না, আপনারাই নিউজ করেছেন। এটা ওপেন। এটা না জানার কিছু নাই। এটা বেসিক জিনিস। আমার মনোযোগ এখন সম্পূর্ণ বিপিএল নিয়ে। চেষ্টা করব কীভাবে ভালো করা যায়।’ আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে বিপিএল। এখনো অনেক ম্যাচ বাকি। ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো কারণ ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে পরিবর্তন আনা যাবে। বিধ্বংসী এই সেঞ্চুরির আগের ম্যাচেই ৭৩ রান করা লিটন শেষ পর্যন্ত ছন্দ ধরে রাখতে পারলে হয়তো ফিরতেও পারেন।