তামিম ইকবাল
প্রায় ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। অনেক ঘটনা প্রবাহের পর অবসর ভেঙ্গে ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে একটি ওয়ানডে খেলেন তামিম ইকবাল। এরপর অবশ্য ফিটনেস ইস্যুতে বিশ^কাপের দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। এবার আসন্ন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফিরবেন কিনা তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে নির্বাচক প্যানেলও আলোচনা করে।
বিসিবিকে অবশ্য আরও কিছু সময় চেয়ে নেন তামিম সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। অবশেষে শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন এ বাঁহাতি ওপেনার। ৩৫ বছর বয়সে বিদায় নেওয়া তামিমকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ওপেনার বিবেচনা করা হয়।
বিসিবিও অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তামিমকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে সুন্দর’ ওপেনার লিখেছে। সেই সঙ্গে তাকে স্বপ্ন পূরণে প্রেরণাদায়ক ও যোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত করেছে। এছাড়া দীর্ঘদিন জাতীয় দলের সতীর্থ মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদসহ বাকিরা তামিমের বিদায়ে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।
তামিম ২০০৭ সালে ওয়ানডে ও টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তী বছরের মধ্যে তিনি তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের অপরিহার্য ওপেনার হয়ে ওঠেন। এরপর পুরো ক্যারিয়ারে কখনোই ফর্মের কারণে দল থেকে বাদ পড়েননি। কিন্তু তামিমের ফেরার জন্য সবসময়ই অপেক্ষা করেছে বিসিবি ও তার দেশব্যাপী কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকরা।
এমনকি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে হুট করে অবসর নেওয়ার পর নানা ঘটনায় পরে সেই অবসর ভেঙ্গেও ফেলেন। সে বছর মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে খেললেও ফিটনেস ইস্যুতে বিশ^কাপ খেলা হয়নি তার। বিষয়টি নিয়ে অনেক বিতর্ক-সমালোচনা হয়েছে। ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে এবং নিজেকে প্রস্তুত করতে গত বছরের পুরোটা সময়ই তিনি দলের বাইরে থেকেছেন ও বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও সরে গেছেন।
এবার চূড়ান্তভাবে অবসর নিয়েছেন সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে। ফলে আজ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণার শেষ সময়কে সামনে রেখে তামিমকে কেন্দ্র করে যত আলোচনা ছিল তার সমাপ্তি ঘটেছে। তামিমের অবসরের পর বিসিবি অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছেÑ ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ওপেনিং ব্যাটসম্যানের অবসর ঘোষণায় অসাধারণ একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়ে গেল।
আইকনিক সেঞ্চুরি থেকে অগণিত, অবিস্মরণীয় স্মৃতি, ক্রিকেট ভক্তদের মনে তোমার লিগেসি চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। আমাদের আস্থা তৈরির পাশাপাশি কিভাবে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুদ্ধ করতে হয় তা দেখানোয় তোমাকে ধন্যবাদ। স্বপ্ন পূরণে সাহস, আশা জোগানো এবং নতুন করে স্বপ্ন দেখার প্রেরণা দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা!’
এ ছাড়া তামিমের কিছু বিশেষ মুহূর্ত দিয়ে বানানো কাভার ফটোতে বিসিবি লিখেছে ‘নতুন প্রজন্মের প্রেরণাদাতা তামিম ইকবালকে ধন্যবাদ, একটি যুগের পরিসমাপ্তি।’ ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাবেক এই টাইগার অধিনায়কের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবমিলিয়ে ৯৪ ফিফটি ও ২৫টি সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। তার বিদায়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহসহ সতীর্থরা।
মুশফিক লিখেছেন, তোমার অবসরকালে আমি জানাতে চাই, তোমার অর্জনগুলো নিয়ে আমি কতটা গর্বিত তামিম। দোস্ত, তুমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের একজন অসাধারণ প্রতিনিধি ছিলে এবং বিশ্বমানের একজন ব্যাটার। দুবাইয়ের সেই জুটি আমার সারাজীবন মনে থাকবে, বিশেষ করে যখন তুমি চোট পাওয়া আঙুল নিয়েও ব্যাটিং করেছিলে। এটি তোমার দেশের প্রতি নিবেদন ও খেলাটার প্রতি ভালোবাসা স্পষ্ট করে। অবসর ভালো কাটুক দোস্ত।
তোমাকে মাঠে খুব মিস করব, ক্রিকেটের কল্যাণে দুর্দান্ত এক বন্ধু পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। মাহমুদুল্লাহ ক্রিকেটে তামিমের অবদান নিয়ে লিখেছেন, ‘তামিম, দীর্ঘ ও চমৎকার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তোমার অসাধারণ অর্জনগুলোর জন্য অনেক অভিনন্দন। তুমি অনেক কিছু অর্জন করেছ এবং বাংলাদেশ দলের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছ।
তোমার সঙ্গে খেলতে পারা এবং মাঠের ভেতরে-বাইরে এত স্মৃতি ভাগাভাগি করতে পারা সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল। আমি তোমার অবসর জীবনের জন্য শুভ কামনা জানাই এবং ভবিষ্যতের সকল কাজে সাফল্য কামনা করি। তোমার রেখে যাওয়া ঐতিহ্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার ও বর্তমানে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের দায়িত্বে থাকা শাহরিয়ার নাফিস লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তোমার অবদান বাংলাদেশ সব সময় মনে রাখবে তামিম ইকবাল।’ বর্তমানে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও বেশকিছু ম্যাচ ওপেনিং করেছেন তামিমের সঙ্গে। তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় তামিম ভাই আপনার নেওয়া সিদ্ধান্তকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই।
২০১৬ সালে আবাহনীর হয়ে প্রথমবার আপনার সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা থেকে শুরু করে জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলার সুযোগ, আপনার কাছ থেকে শিখেছি অসংখ্য কিছু। আপনার ক্রিকেটীয় মেধা, সহ-খেলোয়াড়দের প্রতি আপনার যত্ন ও উদারতা আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে।
আপনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত অবশ্যই আপনাকে ভাবতে হয়েছে এবং সেটিকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। তবে ড্রেসিংরুম এবং ২২ গজে আপনার সঙ্গ আমরা ভীষণভাবে মিস করব। আমি গর্বিত যে এমন এক কিংবদন্তি ব্যাটারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি এবং জাতীয় দলে আপনার সঙ্গে খেলতে পেরেছি।’